ETV Bharat / city

সংকটে রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কগুলি

লকডাউনে পরিষেবা ব্যাহত ৷ কমেছে ঋণ দেওয়ার পরিমাণ ৷ বিরোধীদের অভিযোগ, শাসক দলের সুপারিশ ছাড়া ঋণ পাওয়া যায় না ৷ ব্যাঙ্ক কর্মচারী সংগঠনের মতে, কেন্দ্রের একতরফা নীতিই সমবায় ব্যাঙ্কের সংকটের কারণ ৷

State Cooperative Bank in crisis
সমবায় ব্যাঙ্ক
author img

By

Published : Jul 7, 2020, 8:51 PM IST

Updated : Jul 28, 2020, 6:34 AM IST

কলকাতা, 7 জুলাই : আগেও অবস্থা ভালো ছিল না ৷তবে, লকডাউনেরাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কগুলির সংকট বেড়েছে ৷ কোরোনা আবহাওয়ায় ব্যাঙ্কগুলির লেনদেনওকমেছে । মূলত প্রান্তিক মানুষেরা উপকৃত হন এই ব্যাঙ্কগুলির সাহায্যে ৷ কৃষকেরাচাষের কাজের জন্য ঋণ নেন ৷ সেই ঋণ দেওয়ার পরিমাণও কমে গিয়েছে ৷ বিরোধীদের অভিযোগ, আজকাল ঋণ পেতে হলে শাসক দলের নেতা, বিধায়কদের সুপারিশ লাগে ৷ ব্যাঙ্ককর্মচারী সংগঠনের নেতার কথায় কেন্দ্রের একতরফা নীতিই সমবায় ব্যাঙ্কের সংকটের কারণ৷ ব্যাঙ্কগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত তারা ৷ সমস্যা যেদিক থেকেই আসুক তা যে রয়েছেতা স্পষ্ট ৷ ফলস্বরূপ দিনে দিনে দুর্বল হয়ে পড়ছে রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা৷

সমবায়ব্যাঙ্কের 48 টিশাখা রয়েছে এ রাজ্যে । জেলা সমবায় ব্যাঙ্কের শাখার সংখ্যা 360 । চলতি বছরে রাজ্যের সবকটি জেলামিলিয়ে মোট 196337 টিকিষান ক্রেডিট কার্ড বিলি করা হয়েছে । যা বিগত বছরগুলির তুলনায় কম ৷ 2018-192019-20আর্থিক বছরে যথাক্রমে 203376 টি ও 198898 টি কিষান ক্রেডিট কার্ড বিলি করাহয়েছিল । গত দুই আর্থিক বছরের তুলনায় কিষান ক্রেডিট কার্ড কমেছে 7039 2561 টি ৷ রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্ক সূত্রে জানাগিয়েছে, এবারবাঁকুড়া, বীরভূম, বর্ধমান, দুই দিনাজপুর, দার্জিলিং, হুগলি, হাওড়া, জলপাইগুড়ি, মালদা, দুই মেদিনীপুর, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়া, রায়গঞ্জ, কোচবিহার ও দুই 24 পরগনার জেলা সমবায় ব্যাঙ্ক এবংকেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে কিষান ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হয়েছে ।অন্যদিকে, গতআর্থিক বছরের তুলনায় রাজ্যের স্বীকৃত স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ঋণদানের পরিমাণ কমেছে 52 লাখ 20 হাজার টাকা। আর শস্যঋণ পেয়েছেন 14 লাখ 25 হাজার 153 জন কৃষক ।

মুর্শিদাবাদেরসালারের কৃষক ওয়েদুল ইসলাম কথায়, "2018 সালে চাষের জন্য সমবায় ব্যাঙ্ক থেকেশেষবার ঋণ পেয়েছিলাম ৷ গত দু'বছর আবেদন করেও ঋণ পাইনি ৷"

অথচ, অধিকাংশ কৃষক সময়মতো ঋণ পরিশোধ করেছেন। ব্যাঙ্ক ঋণের 77.31 শতাংশপরিশোধ হয়েছে । এরাজ্যের 14988 টিসরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীও সিংহভাগ ঋণ শোধ করেছে । অর্থাৎ, গরিব চাষি হোক বা স্বনির্ভর গোষ্ঠী, প্রত্যেকেই ঋণ নিয়ে তা পরিশোধও করেছেন৷ প্রশ্ন হল, তারপরেওসমবায় ব্যাঙ্কগুলি দিন দিন রুগ্ন হয়ে পড়ছে কেন?

সংকটে রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কগুলি

বামপরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর মতে সমবায় ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে । সমবায়ব্যাঙ্কগুলি অতীতে যেভাবে সাহায্য করত কৃষকদের এখন তা হচ্ছে না ৷

সুজনচক্রবর্তী বলেন, "সমবায়ব্যাঙ্ক নিয়ে বিধানসভায় বহুবার মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন করা হয়েছে । মন্ত্রীসন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি । দপ্তরের মন্ত্রী বদল হয়েছে বহুবার ।স্বার্থান্বেষী মানুষকে দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ।"

বামনেতার অভিযোগ, "সুপারিশছাড়া কৃষকরা ঋণ পান না । শাসকদলের বিধায়ক বা মন্ত্রীর চিঠি নিয়ে গেলে ব্যাঙ্কসাহায্য করে । নষ্ট করা হচ্ছে গোটা সমবায় পদ্ধতিকে । "

সমবায় ব্যাঙ্ক তথা রাজ্যেরব্যাঙ্ক কর্মচারী সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক সুদীপ্ত সাহা রায় বলেন,"কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপধ্বংস হচ্ছে সমবায় ব্যাঙ্কগুলি । আনলক শুরু হলেও ব্যাঙ্ককর্মীরা পরিষেবা দিতে গিয়েসমস্যায় পড়ছেন ৷ যানবাহন নেই রাস্তায় । পাশাপাশি মুখ থুবড়ে পড়েছে ব্যাঙ্কেরঅর্থনীতিও । এতে প্রান্তিক মানুষ সমস্যায় পড়ছেন । ঋণ পাচ্ছেন না তাঁরা । "

রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কগুলি রিজার্ভব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এবং নাবার্ডের সহযোগিতায় পরিচালিত হয় । দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কএবং রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় চলে ব্যাঙ্কগুলি ।

State Cooperative Bank in crisis
মৃৎশিল্পীরাও সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে কাজ করেন ৷

সুদীপ্তসাহা রায় অভিযোগ করেন, "কেন্দ্রীয়সরকার বলছে বড় বড় ব্যাঙ্কের সঙ্গে সমবায় ব্যাঙ্কগুলিকে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। এই অবৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তে সমস্যা বাড়বে ৷ এছাড়াও কেন্দ্র রাজ্যের সঙ্গেসমঝোতার ভিত্তিতে কাজ না করায় সমবায় পদ্ধতি ধাক্কা খাচ্ছে ।"

এই বিষয়ে রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে হলেও তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি ।সমবায় ব্যাঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টরও কিছু বলতে চাননি ৷

কলকাতা, 7 জুলাই : আগেও অবস্থা ভালো ছিল না ৷তবে, লকডাউনেরাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কগুলির সংকট বেড়েছে ৷ কোরোনা আবহাওয়ায় ব্যাঙ্কগুলির লেনদেনওকমেছে । মূলত প্রান্তিক মানুষেরা উপকৃত হন এই ব্যাঙ্কগুলির সাহায্যে ৷ কৃষকেরাচাষের কাজের জন্য ঋণ নেন ৷ সেই ঋণ দেওয়ার পরিমাণও কমে গিয়েছে ৷ বিরোধীদের অভিযোগ, আজকাল ঋণ পেতে হলে শাসক দলের নেতা, বিধায়কদের সুপারিশ লাগে ৷ ব্যাঙ্ককর্মচারী সংগঠনের নেতার কথায় কেন্দ্রের একতরফা নীতিই সমবায় ব্যাঙ্কের সংকটের কারণ৷ ব্যাঙ্কগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত তারা ৷ সমস্যা যেদিক থেকেই আসুক তা যে রয়েছেতা স্পষ্ট ৷ ফলস্বরূপ দিনে দিনে দুর্বল হয়ে পড়ছে রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা৷

সমবায়ব্যাঙ্কের 48 টিশাখা রয়েছে এ রাজ্যে । জেলা সমবায় ব্যাঙ্কের শাখার সংখ্যা 360 । চলতি বছরে রাজ্যের সবকটি জেলামিলিয়ে মোট 196337 টিকিষান ক্রেডিট কার্ড বিলি করা হয়েছে । যা বিগত বছরগুলির তুলনায় কম ৷ 2018-192019-20আর্থিক বছরে যথাক্রমে 203376 টি ও 198898 টি কিষান ক্রেডিট কার্ড বিলি করাহয়েছিল । গত দুই আর্থিক বছরের তুলনায় কিষান ক্রেডিট কার্ড কমেছে 7039 2561 টি ৷ রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্ক সূত্রে জানাগিয়েছে, এবারবাঁকুড়া, বীরভূম, বর্ধমান, দুই দিনাজপুর, দার্জিলিং, হুগলি, হাওড়া, জলপাইগুড়ি, মালদা, দুই মেদিনীপুর, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়া, রায়গঞ্জ, কোচবিহার ও দুই 24 পরগনার জেলা সমবায় ব্যাঙ্ক এবংকেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের মাধ্যমে কিষান ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হয়েছে ।অন্যদিকে, গতআর্থিক বছরের তুলনায় রাজ্যের স্বীকৃত স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ঋণদানের পরিমাণ কমেছে 52 লাখ 20 হাজার টাকা। আর শস্যঋণ পেয়েছেন 14 লাখ 25 হাজার 153 জন কৃষক ।

মুর্শিদাবাদেরসালারের কৃষক ওয়েদুল ইসলাম কথায়, "2018 সালে চাষের জন্য সমবায় ব্যাঙ্ক থেকেশেষবার ঋণ পেয়েছিলাম ৷ গত দু'বছর আবেদন করেও ঋণ পাইনি ৷"

অথচ, অধিকাংশ কৃষক সময়মতো ঋণ পরিশোধ করেছেন। ব্যাঙ্ক ঋণের 77.31 শতাংশপরিশোধ হয়েছে । এরাজ্যের 14988 টিসরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীও সিংহভাগ ঋণ শোধ করেছে । অর্থাৎ, গরিব চাষি হোক বা স্বনির্ভর গোষ্ঠী, প্রত্যেকেই ঋণ নিয়ে তা পরিশোধও করেছেন৷ প্রশ্ন হল, তারপরেওসমবায় ব্যাঙ্কগুলি দিন দিন রুগ্ন হয়ে পড়ছে কেন?

সংকটে রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কগুলি

বামপরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর মতে সমবায় ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে । সমবায়ব্যাঙ্কগুলি অতীতে যেভাবে সাহায্য করত কৃষকদের এখন তা হচ্ছে না ৷

সুজনচক্রবর্তী বলেন, "সমবায়ব্যাঙ্ক নিয়ে বিধানসভায় বহুবার মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন করা হয়েছে । মন্ত্রীসন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি । দপ্তরের মন্ত্রী বদল হয়েছে বহুবার ।স্বার্থান্বেষী মানুষকে দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ।"

বামনেতার অভিযোগ, "সুপারিশছাড়া কৃষকরা ঋণ পান না । শাসকদলের বিধায়ক বা মন্ত্রীর চিঠি নিয়ে গেলে ব্যাঙ্কসাহায্য করে । নষ্ট করা হচ্ছে গোটা সমবায় পদ্ধতিকে । "

সমবায় ব্যাঙ্ক তথা রাজ্যেরব্যাঙ্ক কর্মচারী সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক সুদীপ্ত সাহা রায় বলেন,"কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপধ্বংস হচ্ছে সমবায় ব্যাঙ্কগুলি । আনলক শুরু হলেও ব্যাঙ্ককর্মীরা পরিষেবা দিতে গিয়েসমস্যায় পড়ছেন ৷ যানবাহন নেই রাস্তায় । পাশাপাশি মুখ থুবড়ে পড়েছে ব্যাঙ্কেরঅর্থনীতিও । এতে প্রান্তিক মানুষ সমস্যায় পড়ছেন । ঋণ পাচ্ছেন না তাঁরা । "

রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কগুলি রিজার্ভব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এবং নাবার্ডের সহযোগিতায় পরিচালিত হয় । দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কএবং রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় চলে ব্যাঙ্কগুলি ।

State Cooperative Bank in crisis
মৃৎশিল্পীরাও সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে কাজ করেন ৷

সুদীপ্তসাহা রায় অভিযোগ করেন, "কেন্দ্রীয়সরকার বলছে বড় বড় ব্যাঙ্কের সঙ্গে সমবায় ব্যাঙ্কগুলিকে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। এই অবৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তে সমস্যা বাড়বে ৷ এছাড়াও কেন্দ্র রাজ্যের সঙ্গেসমঝোতার ভিত্তিতে কাজ না করায় সমবায় পদ্ধতি ধাক্কা খাচ্ছে ।"

এই বিষয়ে রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে হলেও তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি ।সমবায় ব্যাঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টরও কিছু বলতে চাননি ৷

Last Updated : Jul 28, 2020, 6:34 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.