কলকাতা, 16 সেপ্টেম্বর: পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে 21 সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল আলিপুর আদালত ৷ এ দিন পার্থকে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে সিবিআই আদালতে দাবি করে, শিক্ষাক্ষেত্রে ভুয়ো নিয়োগের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী (Partha Chatterjee) ৷
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী এ দিন বলেন, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে কেন আদলতে আনা হল তা তাঁর বোধগম্য হয়নি (Fake recruitment)। পার্থকে গ্রেফতার করেছে ইডি (ED)। এখন সিবিআই তাঁকে হেফাজতে চাইছে । ওদের নিজেদের মধ্যে সমতা নেই । এ ভাবে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে হেনস্থার স্বীকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তাঁর আইনজীবী । তিনি আরও বলেন, সিবিআই যখন পার্থকে গ্রেফতার করেনি, তখন তারা কীভাবে তাঁকে হেফাজতে চাইতে পারে ?
এর পালটা জবাব দিয়ে সিবিআইয়ের (CBI) আইনজীবী বলেন, "আমরা গ্রেফতার করে হেফাজতে চাইছি পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে (SSC Recruitment Scam)। এসএসসি গ্রুপ সি নিয়োগের পরীক্ষা হয় ডব্লিউবিএসএসসি-র হাত ধরে । পরীক্ষার পর হয় কাউন্সেলিং প্রসেস । যাঁরা চাকরি পান তাঁদের রেকমেন্ডেশন লেটার দিয়ে নিয়োগ করানো হয় । এসএসসি-র মাধ্যমে হয় পুরো প্রক্রিয়া । এখানেই দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ । 400-রও বেশি সংখ্যক মানুষ ভুয়ো নিয়োগপত্র পেয়েছেন, যাঁরা অনেকেই পাশ করেননি বা পরীক্ষা দেননি । বেশিরভাগ রেকমেন্ডেশন লেটার ভুয়ো । পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন এর মাস্টারমাইন্ড ৷"
সিবিআইয়ের তরফে দাবি করা হয়, "এই দুর্নীতি হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশে । অন্য অভিযুক্ত শান্তি প্রসাদ সিনহা, অশোক কুমার সাহা ৷ তাঁদেরকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে । কাল গ্রেফতার হয়েছেন কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় । তাই প্রধান অভিযুক্ত পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন । সামনাসামনি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে । এতদিন তিনি ইডি হেফাজতে ছিলেন । মামলার তদন্তের স্বার্থে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সিবিআই-এর প্রয়োজন । তাই পিসি চাইছি আমরা ।"
আরও পড়ুন: পার্থকে হেফাজতে চেয়ে আদালতে সিবিআই
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবীর বক্তব্য, অভিযুক্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব । অভিযোগ রয়েছে 420, 120বি ধারায় । এটা একজন জনপ্রতিনিধির নামে হয়েই থাকে । তদন্তকারী সংস্থা অনেক কিছু লুকোনোর চেষ্টা করছে । ধোঁয়াশাতে রাখছে । পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতারের পিছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে সিবিআই ও ইডির মধ্যে । এর আগেও তাঁকে ডাকা হয়েছে । প্রত্যেকবার তিনি গিয়েছেন, দেখা করেছেন । তিন বার ডাকা হয়েছিল তাঁকে । অভিযুক্ত প্রত্যেকবার সিবিআইকে সাহায্য করেছেন । 23জুলাই গ্রেফতার করা হয় তাঁকে । কারণ ইডি-র চার্জশিট দিতে হত 60 দিনের মাথায় । ইডি সেটা দিতে পারত না । তাই সিবিআই ওই 60 দিন হওয়ার আগেই অ্যারেস্ট দেখিয়ে তাঁকে হেফাজতে চাইছে । এটা অর্থনৈতিক দুর্নীতির মামলা ।
এ কথা শোনার পর বিচারপতি বলেন, তদন্তকারী দল ভিন্ন ৷ তাই তাদের প্রয়োজন ভিন্ন তদন্তের । সেটা তো হতেই পারে ৷ উত্তরে আইনজীবী জানান, "অবশ্যই তা হতে পারে । কিন্তু তাঁকে ডাকলে তিনি সাড়া দিচ্ছেন তো ! আদালতের অনুমতি নিয়ে জেলে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই পারে সিবিআই । নিজেদের হেফাজত কেন চাইছে ?" পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী আরও বলেন, একজন মন্ত্রী হিসাবে তাঁর কিছু ক্ষমতা আছে । এ কথার জবাবে বিচারক বলেন, "মন্ত্রী হিসাবে অপরাধ করা যায় কি ?" পার্থ চট্টোপাধ্যায় আইনজীবী ফের বলেন, "এই সব মামলায় সাত বছরের সর্বাধিক জেল হেফাজত হতে পারে । তিনি এখন জেল হেফাজতে আছেন । কিন্তু তিনি মন্ত্রী ভুলে গেলে চলবে না । তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের এখনও প্রমাণ নেই । তাঁর সমাজের প্রতি দায়িত্ব আছে এটা অস্বীকার করার জায়গা নেই ।"
সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, তদন্ত এখন প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে । তাই হেফাজতে নেওয়ার দরকার । হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্ত হচ্ছে । যোগ্য চাকরি প্রার্থীরা বঞ্চিত হয়েছে ।