কলকাতা, 30 অগস্ট: 1998 সাল ৷ সদ্য উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন এক তরুণ ৷ সমবয়সি আর 5 জনের মতোই তাঁর ইচ্ছে আরও পড়াশোনা করার ৷ উচ্চ শিক্ষালাভ করে, উপার্জন করে গরিব পরিবারের পাশে দাঁড়ানো ৷ কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি সর্বদা সেই ইচ্ছের সঙ্গ দেয় না ৷ করতে হয় কঠিন লড়াই ৷ সেই সময় এমনই এক লড়াই করতে হয়েছিল পিন্টু পোহানকে ৷
বেহালা চৌরাস্তার মদনমোহন তলা এলাকায় রাস্তার ধারে ছোট্ট একটি পানের দোকান তাঁর (Story of Behala ShopKeeper)। তিন ফুট বাই তিন ফুটের দোকান ৷ সেখানে বসেই গত প্রায় 25 বছর ধরে খরিদ্দার সামলে যাচ্ছেন পিন্টু । চালাচ্ছেন সংসার ৷ পাশাপাশি চলছে তাঁর কলমও ৷ আর জন্ম নিচ্ছে একের পর এক লেখা ৷ সেই তালিকায় যেমন রয়েছে গল্প, ছোটদের কবিতা, তেমনই আছে উপন্যাস (Pintu Pohan writes story, poem and novels) ৷
নিজের জীবন সংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে পিন্টু পোহান জানিয়েছেন, 1998 সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশের পর তাঁর ইচ্ছে ছিল কলেজে যাওয়া উচ্চশিক্ষা অর্জন করা ৷ কিন্তু সংসারে অভাব থাকায় ওই বয়সেই তাঁকে ফুটপাথে পানের দোকান খুলতে হয় ৷ দোকান চালানোর ফাঁকেই চলে তাঁর পড়াশোনা ৷ এভাবেই বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন তিনি ৷ এভাবেই পড়াশোনা শেষ করে লেখালেখি শুরু করেন পিন্টু পোহান ৷ এই দোকানে বসেই তিনি লিখেছেন, 11টি উপন্যাস, 200টি গল্প, 200টি কবিতা ৷ ছোটদের জন্য তিনি লিখেছেন 5টি গল্পের বই । তাঁর প্রকাশিত লেখার সংখ্যা প্রায় 2 হাজার ৷ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাতেও প্রকাশিত হয়েছে তাঁর লেখা ৷
আরও পড়ুন : মালদায় প্রথম হৃদরোগের হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ ইংরেজবাজার পৌরসভার
তাঁর জীবন যুদ্ধের কথা প্রসঙ্গে পিন্টু পোহান বলেন, "একসময় দু'বেলা কী খাব তাই ভাবতাম । একটি কলেজে ভর্তিও হয়েছিলাম । কিন্তু সেই সময় পেট বাঁচানো বেশি দরকারি হয়ে পড়ে । অতঃপর পড়াশোনা ছেড়ে এই দোকান সামলানো শুরু করি । তবে পড়াশোনা করতে ভালো লাগত । তাই দোকানদারির পাশাপাশি আবার পড়াশোনা শুরু করি । নেতাজি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে আমি ডিগ্রি অর্জন করি । বিএড করার ইচ্ছা ছিল । কিন্তু আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় তা আমার পক্ষে আর সম্ভব হয়নি ।"
তাঁর এই দীর্ঘদিনের দোকানদারি ও লেখালেখির পর্বের মাঝে বহু বিখ্যাত মানুষের প্রশংসা পেয়েছেন পিন্টু পোহান ৷ তাঁকে বাহবা জানিয়ে পিঠ চাপড়ে গিয়েছেন অনেকে, কিন্তু দরকারে পাশে থাকেননি কেউ । এমনকি আজও বন্ধু মহলে তাঁর পড়াশোনা-লেখার প্রতি আগ্রহের জন্য বিভিন্ন বিদ্রুপের মুখোমুখি হতে হচ্ছে এই কৃতী মানুষটিকে (struggle of Behala shopkeeper for his writings) ৷ এবিষয় তিনি বলেন," রোজ বাড়ি যাওয়ার পর ভাবতাম কালকে দোকান খুলতে পারব কি না । যখন পড়াশোনা করতাম খুব জোরে বক্স বাজিয়ে দেওয়া হতো । কেউ রাস্তায় যেতে যেতে আমায় দেখিয়ে পাগল বলে চিৎকার করতো । বিভিন্ন ব্যঙ্গ বিভিন্ন তামাশা করা হয়েছে আমার সঙ্গে । আমাদের সমাজ আজও শিক্ষিত হতে পারেনি । একজন দোকানদার দোকানে বসে গল্প লিখছে-রবীন্দ্ররচনাবলী পড়ছেন তা আজও তারা মেনে নিতে পারেন না ৷" তবে বর্তমানে 2 সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ভালোই আছেন পিন্টু । সংসার ও জীবন চলার পাশাপাশি চলছে তাঁর কলমও ৷