কলকাতা, 10 অগস্ট: সরকারি বাংলা মাধ্যম বনাম প্রাইভেট ইংলিশ মিডিয়াম ! রাজ্যজুড়ে ক্রমশ প্রকট দুই পক্ষের লড়াই ! প্রথম দলের সমস্যা, বাংলায় দখল থাকলেও ইংরেজি ভাষার প্রসঙ্গ উঠলেই অধিকাংশ পড়ুয়া গুটিয়ে যায় ! কারণ, তারা নাকি ব্রিটিশদের ভাষাটা ঠিক মতো পারে না ! আর দ্বিতীয় পক্ষের বক্তব্য হল, বাঙালি হওয়া সত্ত্বও তাদের নাকি বাংলাটা আসে না ! শিক্ষামহলের অধিকাংশ বলেন, এই বিভেদ ও মানসিকতা আদতে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ৷ বাঙালি হয়ে বাংলা বলতে, লিখতে বা পড়তে না-পরাটা শুধু লজ্জার নয়, আত্মঘাতীও বটে ৷ অন্যদিকে, ইংরেজিতে নড়বড়ে হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকস্তরে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে আগামী দিনে বিরাট সমস্যায় পড়তে হবে বাংলা মাধ্যমের ছাত্রছাত্রীদের ৷ এই বিবাদ ঘোচাতেই উদ্যোগী হল কলকাতার বড়িশা জনকল্যাণ বিদ্যপীঠ ৷ সৌজন্যে বিলেতবাসী এক বঙ্গতনয়া ৷ আদতে বাঙালি হলেও যার জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা, সবটুকুই লন্ডনে (London) ৷ স্কুল কর্তৃপক্ষের মধ্যস্থতায় 15 বছরের সেই আরাত্রিকা লাহিড়িই বড়িশা জনকল্যাণ বিদ্যপীঠের ছাত্রীদের দিচ্ছে ইংরেজির পাঠ !
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শর্মিলা সেনগুপ্ত এই প্রসঙ্গ জানান, আরাত্রিকা তাঁর এক বান্ধবীর মেয়ে ৷ লাহিড়ি পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে ব্রিটেনের বাসিন্দা হলেও মাস কয়েকের জন্য ফিরেছেন স্বদেশে ৷ দেশে ফিরে আরাত্রিকা তার বাবা-মাকে জানিয়েছিল, বাঙালি পড়ুয়াদের জন্য সে কিছু করতে চায় ৷ বাংলা মাধ্যমের পড়ুয়াদের ইংরেজি ভীতি তার অজানা ছিল না ৷ তাই কোনও একটি স্কুলে পড়ুয়াদের ইংরেজি ভাষা (Special English Class in Bengali Medium School) শেখাতে চেয়েছিল সে ৷
আরও পড়ুন: Jalpaiguri School: ইটিভি ভারতের খবরের জের ! খুলল 'বন্ধ' স্কুলের তালা
আরাত্রিকার এই প্রস্তাব সানন্দে গ্রহণ করেন শর্মিলা ৷ তাঁর মধ্যস্থতাতেই বড়িশা জনকল্যাণ বিদ্যপীঠে ক্লাস করানোর সুযোগ পায় বিলেতের এই বাঙালি কিশোরী ৷ এমন আয়োজনে দারুণ মজা পেয়েছে স্কুলের ছাত্রীরাও ৷ প্রধান শিক্ষিকা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই এই উদ্যোগের সুফল মিলতে শুরু করেছে ৷ প্রাথমিক বাধা কাটিয়ে ছাত্রীরা আগের তুলনায় অনেকটাই সড়গড় হয়ে উঠেছে ইংরেজি ভাষায় ৷
প্রসঙ্গত, শর্মিলা নিজেও ইংরেজির শিক্ষিকা ৷ তিনি মনে করেন, কোনও একটি ভাষাকে রপ্ত করতে হলে শুধুমাত্র 40-45 মিনিটের একটি ক্লাস যথেষ্ট নয় ৷ তার জন্য নিরন্তর সেই ভাষায় ভাবতে শেখা, কথা বলার প্রয়োজনীয়তা থাকা দরকার ৷ যেখানে সেই ব্যক্তি বাধ্য হবে সংশ্লিষ্ট ভাষা ব্যবহার করতে ৷ আরাত্রিকা সেই প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হয়েছে ৷ তাই তার এমন প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রধান শিক্ষিকা ৷ একইসঙ্গে তাঁর আক্ষেপ, বাংলাতেও অনেক ভালো মানের বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল রয়েছে ৷ কিন্তু, সেখানকার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এভাবে সহযোগিতা করার মানসিকতা দেখা যায় না ৷ যদি তেমনটা হত, তাহলে হয়তো সহজেই সরকারি বাংলা মাধ্যম বনাম প্রাইভেট ইংলিশ মিডিয়ামের অনভিপ্রেত বিভেদ বহুলাংশে ঘোচানো সম্ভব হত ৷