কলকাতা, 17 মে : করোনা আবহে পারদ চড়াল সিবিআইয়ের তৎপরতা ৷ নারদ কাণ্ডে হঠাৎ গ্রেফতার রাজ্য়ের দুই মন্ত্রী-সহ চার হেভিওয়েট ! যাঁদের মধ্যে অন্যতম একদা তৃণমূলের দাপুটে নেতা, কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের কাছের মানুষ ‘কানন’ ওরফে শোভন চট্টোপাধ্য়ায় ৷ সোমবার নারদ কাণ্ডে তাঁকে গ্রেফতার করে সিবিআই ৷ যা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে ৷ তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, বিধানসভা ভোটে হেরে প্রতিহিংসামূলক আচরণ করছে বিজেপি ৷ যার শিকার রাজ্য়ের দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও সুব্রত মুখোপাধ্য়ায়, তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র এবং কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্য়ায় ৷
সামগ্রিকভাবে এই গ্রেফতারিতে যে নামটা রাজনৈতিক বিশ্লষকদের নজর কেড়েছে, সেটি হল শোভন চট্টোপাধ্য়ায় ৷ বৈশাখী ঝড়ে মন উড়িয়েই কি ফ্যাঁসাদে পড়লেন এই দাপুটে রাজনীতিক ? ওয়াকিবহাল মহলের অনুমান কিন্তু তেমনটাই ৷
একটা সময় শোভন ছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের প্রিয় পাত্র ৷ তাঁর উপর অগাধ আস্থা ছিল মমতার ৷ বয়সে ছোট শোভনকে অত্যন্ত স্নেহও করতেন নেত্রী ৷ ডাকতেন কানন বলে ৷ পাল্টা নেত্রীর প্রতি আনুগত্য়ে খামতি ছিল না শোভন চট্টোপাধ্য়ায়েরও ৷ কলকাতার মেয়র থেকে বেহালা পূর্বের বিধায়ক, এমনকী মন্ত্রী, মমতার দেওয়া সবক’টি দায়িত্বই সাফল্যের সঙ্গে সামলেছেন শোভন ৷ অন্যদিকে, ঘরোয়া জীবনেও তিনি ছিলেন সুখী মানুষ ৷ স্ত্রী রত্না ও দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কার্যত সোনার সংসার ছিল শোভন চট্টোপাধ্য়ায়ের ৷
সবকিছুই যখন ঠিকঠাক চলছে, ঠিক তখনই শোভনের জীবনে হাজির হন নতুন বন্ধু ৷ নাম তাঁর বৈশাখী বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ৷ পেশায় অধ্যাপক বৈশাখী ক্রমশ আধিপত্য় বিস্তার করেন ব্য়ক্তি শোভনের জীবনে ৷ বৈশাখী নিজে বিবাহিতা হলেও শোভনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে শুরু হয় নানা জল্পনা ৷ যার রেশ গড়ায় শোভন-রত্নার অন্দর মহল থেকে আদালত পর্যন্ত ৷ বৈশাখীর সঙ্গ পেতে স্ত্রীকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন শোভন ৷ শুরু হয় ডিভোর্সের মামলা ৷
এই গোটা পর্ব ভাল চোখে দেখেননি মমতা স্বয়ং ৷ তিনি পাশে দাঁড়ান রত্নার ৷ দীর্ঘ টানবাহানার পর তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেন শোভন-বৈশাখী ৷ অন্যদিকে, স্বামীর ছেড়ে যাওয়া আসনেই (বেহালা পূর্ব) ভোটে জিতে বিধায়ক হন রত্না ৷ ইতিমধ্যে শোভন-বৈশাখীর একাধিক আচরণে ক্ষুব্ধ হয় বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব ৷ একুশের বিধানসভা ভোটে টিকিট না পেয়ে সটান বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে চিঠি লিখে বিজেপি ছাড়ার কথা জানান শোভন-বৈশাখী ৷ তার আগে দীর্ঘ সময় দলের কাজে নিষ্ক্রিয় ছিল এই জুটি ৷ পরে তাঁদের নানা আচরণ কার্যত বালখিল্যের পর্যায়ে চলে গিয়েছিল ৷ যা ম্য়ানেজ দিতে মাঠে নামতে হয়েছিল মুকুল রায়, কৈলাস বিজয়বর্গীর মতো নেতাদের ৷
ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, বৈশাখীর অঙ্গুলি হেলনে চলতে গিয়েই কপাল পুড়ল শোভনের ৷ তৃণমূল ছাড়া থেকে শুরু করে বিজেপিতে যোগদান এবং বিজেপিতে ঢুকেও অশান্তি ৷ পুরোটাই আসলে বৈশাখী ঝড়ের ক্ষত ৷ বিজেপি নেতৃত্ব যে শোভন-বৈশাখীর এই ‘যেমন খুশি করো’য় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ, তারই প্রমাণ মিলল সোমবার, সিবিআইয়ের হাতে শোভনের গ্রেফতারিতে ৷
আরও পড়ুন : লাইভ : করোনা আবহে গ্রেফতার করা কি উচিৎ হয়েছে সিবিআইয়ের ? প্রশ্ন অধীরের
অনেকেরই ব্যাখ্যা, নারদ কাণ্ডে পিঠ বাঁচাতেই বিজেপিতে গিয়েছিলেন শোভন ৷ কিন্তু নতুন দলে গিয়েও বৈশাখীর রাজনৈতিক উচ্চাশা পূরণ হয়নি ৷ আর সেই কারণেই নিজে এবং শোভনকে গেরুয়া শিবির থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন তিনি ৷ কিন্তু প্রশ্ন হল, এবার তবে কী হবে ? কারণ, এই ঘটনার পর বিজেপিতে থাকা কি আদৌ সম্ভব হবে শোভনের পক্ষে ? যদিও শোভন বা বৈশাখী আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপি ছেড়েছেন কিনা, সেটাই এখনও স্পষ্ট নয় ৷ অন্যদিকে, এত কাণ্ডের পর মমতাও কি আর তাঁর প্রিয় কাননকে ঘাসফুলের বাগানে ফেরাবেন ? উত্তর দেবে সময় ৷