কলকাতা, ৪ ডিসেম্বর: ডিজিটাল ডিভাইড দূরীকরণে পড়ুয়াদের স্মার্টফোন দিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। এবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেখানো পথে হাঁটতে চলেছে পুরুলিয়ার সিধু-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক অঞ্চলের ও আর্থিকভাবে দুর্বল পড়ুয়া, যাদের নিজস্ব স্মার্টফোন না থাকায় অনলাইন ক্লাস করতে পারছেন না, তাঁদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। ইতিমধ্যেই এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে একটি তহবিল গঠন করে সেখানে দান করার আবেদন জানানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মচারী, আধিকারিক, প্রাক্তনী এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে।
গত 16 মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে রাজ্যের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বহুমাস ধরে বন্ধ থাকায় ধীরে ধীরে রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ই পড়ুয়াদের পঠন-পাঠন চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে অনলাইন মাধ্যমের উপর নির্ভরশীল হয়েছে। একইভাবে পড়ুয়াদের অনলাইন ক্লাস করাতে উদ্যোগী হয়েছিল পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ও। 16 মার্চ থেকেই অনলাইন মাধ্যমে ও পরে কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমেও পড়ুয়াদের পঠন-পাঠন চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু, অনলাইন মাধ্যমে ক্লাস করানোয় কিছু বাধা থেকেই যায়। তা দুর্বল ইন্টারনেট পরিষেবা হতে পারে বা পড়ুয়াদের কাছে স্মার্টফোন নামক যন্ত্রটির অভাব হতে পারে। এই মাধ্যমে যে 100 শতাংশ পড়ুয়ার কাছে পৌঁছানো সম্ভব না তা বুঝেছে কমবেশি সব প্রতিষ্ঠানই।
আরও পড়ুন : হেনস্থার অভিযোগ, শোভনকে সঙ্গে নিয়ে রাজভবনে বৈশাখি
ইতিমধ্যেই ডিসেম্বর মাসেও রাজ্যের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অথচ, 16 ডিসেম্বর থেকে স্নাতকোত্তরের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা সিধু-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু, অনলাইন মাধ্যমে সব পড়ুয়ার কাছে পৌঁছানো সম্ভব নয় তা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'অনলাইন স্টাডি কমিটি'র রিপোর্টে স্পষ্ট। অনলাইন পঠন-পাঠনের মান, তা কত পড়ুয়ার কাছে পৌঁছাচ্ছে, পড়ুয়ারা কতটা বুঝতে পারছে ইত্যাদি জানতে সিধু-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয় এই কমিটি। সেই কমিটি খোঁজ নিয়ে দেখে 70-75 শতাংশ পড়ুয়ার কাছে পৌঁছানো গেলেও স্মার্টফোনে্য অভাবে বাদ রয়ে যাচ্ছে 20-25 শতাংশ পড়ুয়া। সেই চিত্র দেখেই নতুন ভরতি হওয়া সকল পড়ুয়ার কাছে অনলাইন মাধ্যমে শিক্ষা পৌঁছে দিতে স্মার্টফোন দেওয়ার ভাবনাচিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সিধু-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন স্টাডি কমিটির আহ্বায়ক রাজকুমার মোদক বলেন, "অনলাইনে পড়াতে গিয়ে আমরা দেখি ক্লাসে উৎসাহ ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। আমরা তাঁর উৎস অনুসন্ধান করি। পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, অনেকের কাছে স্মার্টফোন নেই। তখন আমাদের উপাচার্য প্রস্তাব দেন, যাঁরা আর্থিকভাবে দুর্বল এবং পড়াশোনায় আগ্রহ আছে তাঁদেরকে যদি স্মার্টফোন দেওয়া যায়। তিনি নিজেও 50 হাজার টাকা দিয়েছেন। আমরা শিক্ষক, কর্মচারী, আধিকারিক, প্রাক্তণীদের কাছে দান করার আবেদন করেছি যাতে একটা তহবিল গঠন করা যায়। আমাদের 20টা বিভাগ আছে। প্রতিটি বিভাগে যদি 10 জন করে পড়ুয়াকেও দিতে পারি তাহলে তাঁদের পড়াশোনার সামগ্রিক রাস্তাটা খুলে যাবে।"
এই উদ্যোগ নিয়ে সিধু-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দীপক কর বলেন, "আমরা ভেবেছিলাম নতুন আসা পড়ুয়াদের নিয়ে অফলাইনে ক্লাস শুরু করতে পারব। কিন্তু, সেটা করা যাচ্ছে না। আমাদের 16 ডিসেম্বর থেকে প্রথম সিমেস্টারের ক্লাস শুরু হবে। আমাদের পুরুলিয়া জেলার ছাত্র-ছাত্রীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সেটার কথা মাথায় রেখে ও গত 6 মাস ধরে যে অনলাইন ক্লাস হয়েছে সেই অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে, যাতে কেউ অনলাইন ক্লাস থেকে না বাদ থাকে তার জন্য অনলাইন স্টাডি কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অংশীদারদের থেকে আমরা অর্থ সংগ্রহ করব। সেই তহবিল থেকে দুস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের আমরা স্মার্টফোন দেব। যাতে অনলাইন স্টাডি ব্যবস্থার মধ্যে আমরা সবাইকে আনতে পারি।"
সিধু-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে 20টি বিভাগ রয়েছে। এই বিভাগগুলিতে স্নাতকোত্তর কোর্সে প্রতি বছর প্রায় 1 হাজার ছাত্র-ছাত্রী ভরতি হন। তাঁদের মধ্যে 20-25 শতাংশ পড়ুয়ার স্মার্টফোনের প্রয়োজন হতে পারে বলে অনুমান করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তহবিলে যথোপযুক্ত অনুদান জমা পড়লে ডিসেম্বরের শেষের দিকেই দুস্থ ও মেধাবি পড়ুয়াদের চিহ্নিত করে তাঁদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে বলে জানান উপাচার্য দীপক কর।