কলকাতা, 19 অগাস্ট : কোরোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ করবে, এমন যন্ত্র বসানো হয়েছে কলকাতার বেসরকারি এক হাসপাতালে । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের থেকে এমনই জানানো হয়েছে । শরৎ বোস রোডে অবস্থিত রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান । শিশুমঙ্গল হাসপাতাল নামেও পরিচিত এই প্রতিষ্ঠান । বিগত কয়েকদিন ধরে এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যন্ত্রটির পরিষেবা চালু হয়েছে । দেশের মধ্যে প্রথম এই হাসপাতালেই যন্ত্রটির ব্যবহার চালু হয়েছে বলে হাসপাতালের তরফে দাবি করা হচ্ছে ।
যন্ত্রের নাম শাইকোকান (SHYCOCAN) । পুরো নাম স্কেলিন হাইপারচার্জ কোরোনা ক্যানন । এই যন্ত্রটি COVID-19-এর সংক্রমণ প্রতিরোধক । অর্থাৎ যন্ত্রটি COVID-19-এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া আটকাবে বলে হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে । প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক স্বামী শৈলজানন্দ বলেন, "আমাদের এই জরুরি বিভাগে COVID-19 পজ়িটিভ কোনও রোগী আসতে পারেন । COVID-19-এর উপসর্গ নেই এমন কোনও রোগী আসতে পারেন । টেস্ট না হওয়া পর্যন্ত আমরা জানতে পারব না তিনি পজ়িটিভ, না নেগেটিভ । ওই রোগী পজ়িটিভ হলে অন্য রোগীদের পাশাপাশি এখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে কোরোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থেকে যায় । COVID-19-এর সংক্রমণ রুখে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এই শাইকোকান যন্ত্র । এই যন্ত্রটি যাঁরা এখানে দিয়েছেন, তাঁদের এমন বক্তব্য ।"
স্বামী শৈলজানন্দ বলেন, "এই যন্ত্রটি ফোটন কণা বিচ্ছুরণ করছে, যেটি জরুরি বিভাগে থাকা বায়ুকণার সঙ্গে মিশে ইলেকট্রন ক্লাউড তৈরি করে । এটি COVID-19 ভাইরাসের এস প্রোটিনকে নিউট্রালাইজ়ড করে দেয় । ফলে, এখানে কোনও COVID-19 পজ়িটিভ রোগী এলে, তাঁর থেকে COVID-19-এর ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লেও, ওই ভাইরাস অন্য কাউকে সংক্রমিত করতে পারে না ।"
আরও পড়ুন : রাজ্যে একদিনে কোরোনা আক্রান্ত 3 হাজার 175
COVID-19-এর সংক্রমণ প্রতিরোধক এই শাইকোকান ডিভাইস বিগত বেশ কয়েকদিন ধরে রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানের জরুরি বিভাগে চালু করা হয়েছে । এই যন্ত্র দেশের মধ্যে কি এই প্রথম এই হাসপাতালেই বসানো হল? স্বামী শৈলজানন্দ বলেন, "দেশের মধ্যে এই প্রথম আমাদের এখানে এই যন্ত্র বসানো হয়েছে ।" এই যন্ত্রের মাধ্যমে কতটা উপকার পাওয়া যাবে, সে নিয়ে প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, "এই যন্ত্র যদি ঠিকমতো কার্যকরী হয়, তা হলে COVID-19-এর সংক্রমণ কমবে বলে ধারণা । এই ইমারজেন্সিতে COVID-19-এর উপসর্গহীন কোনও বাহক আসুক কিংবা, COVID-19 পজ়িটিভ কোনও রোগী আসুক, তাঁদের কাছ থেকে COVID-19-এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া কমবে । ইমারজেন্সির এই ঘরের মধ্যে ইলেকট্রন ক্লাউড থাকার ফলে COVID-19-এর ভাইরাস আর সক্রিয় থাকবে না ।" এই হাসপাতালের অন্য কোনও স্থানে এই যন্ত্র আর বসানো হবে কি না, তা এই যন্ত্র কতটা কার্যকর হবে, তার উপর নির্ভর করছে বলেও তিনি জানিয়েছেন ।
আরও পড়ুন : একদিনে সর্বাধিক মৃত্যু দেশে, আক্রান্তের গণ্ডি ছাড়াল 27 লাখ
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসক সত্যব্রত মজুমদার বলেন, "ইমারজেন্সিতে COVID-19 সাসপেক্টেড কোনও রোগী আসতে পারেন, COVID-19-এর উপসর্গহীন কোনও রোগীও আসতে পারেন । এই শাইকোকান থেকে ইলেকট্রনিক যে ক্লাউড বেরোবে, সেটা COVID-19-এর ভাইরাসকে নিউট্রালাইজ়ড করে দেবে । এর ফলে, COVID-19-এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারবে না । ফলে, এই ওয়ার্ডে অন্য যে সব রোগী থাকবেন, কর্তব্যরত চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীরা থাকবেন, সকলেই সুরক্ষিত থাকতে পারবেন ।"
শাইকোকান নামের এই যন্ত্রটি তৈরি হয়েছে এ দেশে । তবে, COVID-19-এর প্রতিরোধের জন্য খোলামেলা কোনও স্থানে এই যন্ত্রের সুফল পাওয়া যাবে না । কারণ, এই যন্ত্র যে ক্লাউড তৈরি করে, তার কার্যকারিতা খোলামেলা স্থানে পাওয়া সম্ভব নয়, তার জন্য ঘেরা স্থান প্রয়োজন । এই যন্ত্র এক হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে COVID-19-এর সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম বলে দাবি করা হয়েছে ।