কলকাতা, 27 সেপ্টেম্বর : বিস্ফোরক শোভন-পুত্র ঋষি ওরফে সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায় । গতকাল থেকে ঘটনাক্রম যে দিকে গড়িয়েছে তাতে বাবা-ছেলের সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে । গোটা পরিস্থিতি এতটাই অস্বস্তিকর যে ঋষি বলছেন, "ওঁর বাবা হওয়ার যোগ্যতা নেই । উনি একজন স্বার্থপর ।"
রবিবারই জানা যায়, কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তাঁর বেহালা পর্ণশ্রীর মহারানি ইন্দিরা দেবী রোডের বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছেন তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে । এমন ঘটনায় রত্না চট্টোপাধ্যায় আগেই আইনি লড়াইয়ের কথা জানিয়েছেন । এই অবস্থায় বাবার উপর রীতিমতো ক্ষুব্ধ শোভন-পুত্র । যেভাবে গোটা বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে নিয়ে এসে বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে তাতে বীতশ্রদ্ধ ঋষি এদিন ইটিভি ভারতকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, "অনেস্টলি বলতে গেলে দেখুন, ওঁদের দু'জনের কোনও কাজ নেই । আমরা একটা নরমাল জীবন যাপন করছি । আমার মা একটি বিধানসভার এমএলএ । আমার নিজের ব্যবসা আছে । বোনেরও পড়াশোনা আছে ৷ এই অবস্থায় আমাদের এই স্বাভাবিক জীবনকে বিঘ্নিত করতে প্রত্যেক মাসে চেষ্টা চালাচ্ছেন ওঁরা । একটার পর একটা ঘটনায় আমাদের অসম্মানিত করার চেষ্টা করছেন উনি । ইনফরমেশন দিচ্ছেন মিডিয়াকে । এমন জিনিস দেখানোর চেষ্টা করছেন যার কোনও বাস্তবতা নেই । আর এই জায়গা থেকেই আমাদের মনে হচ্ছে উনি আমাদের হ্যারাস করার চেষ্টা করছেন ।"
ঋষি আরও বলেন, "এইখানে সকলকে একটাই কথা বুঝতে হবে, তিনি কোন জায়গার মানুষ ছিলেন এককালে, আর এখন তিনি কোথায় নেমে এসেছেন । ওঁকে ভাবতে হবে, যিনি একটা সময় কলকাতার মতো একটা শহরের মেয়র ছিলেন, তিনিই এখন তাঁর পরিবারকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করছেন । এটাই প্রচণ্ড বড় একটা মকারির (উপহাস) জায়গা । আমি যে পরিবার থেকে আসি, সেই পরিবার থেকেই উনি অর্থাৎ শোভনবাবুও আসেন । আমাদের পরিবারে এই ধরনের নিম্নমানের পদ্ধতি ব্যবহার করে কাউকে হ্যারাস করা শেখানো হয় না । আমরা রীতিমতো একটা শিক্ষিত পরিবার । ছোটবেলা থেকেই আমাদের অন্যদের সম্মান দিতে শেখানো হয়েছে । শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নিজেই আমাদের এসব শিখিয়েছেন । কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখন নিজে তিনি সেসব ভুলে গিয়েছেন ।"
তিনি বলেন, "এসব নিয়ে রোজ রোজ মন্তব্য করতেও আর ভাল লাগে না । আমার মনে হয় ওঁর মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন । তবে নিজে পাগল হয়ে যাচ্ছেন বলে অন্যদের পাগল করে দেবেন এমনটা বোধহয় ওঁকে মানায় না । বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় এখন যে বাড়ি পেয়ে গিয়েছেন বলা হচ্ছে, সবচেয়ে প্রথমে মনে রাখতে হবে সেটা পৈত্রিক সম্পত্তি । আমি শুনেছি বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় 2000 সাল থেকে নাকি আইন নিয়ে গবেষণা করছেন । ভারত বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র । আমাদের দেশে একটা আইনের শাসন আছে । কোনও 'ব়্যান্ডাম' মহিলা আমাদের আইন শিখিয়ে যাবেন, আর তা বিশ্বাস করে গোটা শহর হইহই করবে... শহরের মানুষের অনেক কাজ আছে । সাধারণ মানুষের এসব শোনার সময় নেই ।"
শোভনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে ঋষি বলেন, "শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পলিটিক্যাল কেরিয়ার জিরো । একটা ঘরের মধ্যে লুকিয়ে আছেন । আবার বলছেন, আমার অন্য বাড়িটা আমি বিক্রি করে দিচ্ছি । 35 বছর ধরে মেয়র-মিনিস্টার হয়ে নিজের বাড়ি বিক্রি করার জন্য এতদূর এসেছেন ! নাকি নিজের বাচ্চা, যাদের জন্ম দিয়েছেন উনি, তাদের হ্যারাস করার জন্য এতদূর এসেছেন । আমরা আর ওঁর বিষয়ে ভাবছি না । আমরা আমাদের নিজেদের জীবন বেছে নিয়েছি । আমরা ভাবছি না যে, বাবা আবার বাড়ি আসবেন । মানুষ হিসাবে আমাদের সবাইকেই এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হয় ৷ আমরাও সেই চেষ্টাই করছি, যাতে ভবিষ্যতে আমাদের এই সমস্যাগুলোর সম্মুখীন না হতে হয় ।"
সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায়ের তোপ, "শোভন চট্টোপাধ্যায় বাবা হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বাবা হওয়ার যোগ্য উনি নন । শোভন চট্টোপাধ্যায় যদি এই মুহূর্তে কিছু চেনেন তাহলে শুধু নিজেকেই চেনেন । উনি আসলে স্বার্থপর । ওঁকে এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়াতে হচ্ছে ভেবে লজ্জা লাগছে যে ওঁর বাঁচার জন্য নাকি পৈতৃক বাড়ি বিক্রি করে দিতে হবে । আমরা এখন ওঁর দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত । একই সঙ্গে অনুরোধ, ওঁর যা খুশি তাই করুন, তবে এভাবে টিভির সামনে আমাদের বিব্রত করবেন না ।"
আরও পড়ুন : Sovan Baisakhi Ratna: শোভনের বাড়ি কিনে রত্নাকে উচ্ছেদ নোটিশ পাঠাচ্ছেন বৈশাখী, পাল্টা প্রস্তুতি শোভন-পত্নীর