কলকাতা, 8 মার্চ : মানুষের বিপদের কথা কানে এলেই ছুটে যান তিনি । ঝড়, জল, বৃষ্টি যে কোনও দুর্যোগকে উপেক্ষা করে মানুষের পাশে দাঁড়ান হাসিমুখে । তিনি ষাটোর্ধ্ব সিস্টার গীতা দে ।
দক্ষিণ কলকাতার একটি হাসপাতালে নার্সের কাজ করতেন তিনি । 2009 সালে পেশাগত জীবন থেকে অবসর নিয়েছেন । কিন্তু এখনও মানুষের সেবায় নিয়োজিত তিনি ।
এখনও নিয়ম করে দক্ষিণ কলকাতার একাধিক জায়গায় রাস্তায় দাঁড়িয়েই সুগার, প্রেসার এবং ওজন মাপেন । কখনও বা নামমাত্র আবার কখনও বা বিনা পয়সায় মানুষকে সেবা দেন । দরিদ্রদের শুধু ওষুধ কিনে দেওয়াই নয়, বাড়ি যাওয়ার ভাড়াটুকুও দিয়ে দেন । কারও গর্ভপাতজনিত সমস্যা, কোনও বৃদ্ধ-বৃদ্ধার শারীরিক সমস্যা আবার ভবঘুরেদের পায়ে পচন ধরলে এখনও খোঁজ আসে ষাটোর্ধ্ব গীতাদেবীর ।
সেই সময় নানা কারণে রাজ্য উত্তপ্ত ৷ চলছে নকশাল আন্দোলন । তখনও ঘর-সংসার হয়নি গীতাদেবীর । প্রায় মধ্যরাতে খবর পেলেন কুঁদঘাটের কাছাকাছি কোনও এক গোপন ডেরায় ভয়ঙ্করভাবে জখম হন এক নকশাল নেতা । গভীর রাতে অপরিচিত কয়েকজন এসে গীতাকে নিয়ে গেল ঘটনাস্থানে । সেই অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়লে আজও গায়ে কাঁটা দেয় তাঁর ৷
এখনও পর্যন্ত কাউকেই ফিরিয়ে দেননি তিনি । নিজের ও পরিবারের কথা না ভেবে সকলের জন্য বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত । মেয়ের 104 ডিগ্রি জ্বর সত্ত্বেও তাকে ফেলে বেরিয়ে গিয়েছিলেন মানুষের সেবায় । পরে জানতে পেরেছিলেন, মেয়ের টাইফয়েড হয়েছে । কারণ মানুষের সেবাতেই আনন্দ খুঁজে পান তিনি ৷
মানুষের সেবাই তাঁর মূল মন্ত্র। সংসারে আর্থিক সংকট থাকলেও মানুষের সেবায় পিছিয়ে আসেন না কখনও । কোনও দিন আলু সেদ্ধ আর ভাত খেয়েই কাটাতে হয় । বর্তমানে মেয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে কিছুটা হলেও সংসারের হাল ফিরেছে । অবসরপ্রাপ্ত স্বামী সামান্য টাকা পেনশন পান । দুইয়ে মিলে চলে সংসার ।
2003 সালে প্রথম শুরু করেন এই কাজ । বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কাজ । কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের গাড়িগুলিতে ফার্স্ট এইড বক্স তাঁরই দেওয়া । উত্তম কুমার, সুপ্রিয়া রায়, সুচিত্রা সেন, মাদার টেরিজ়া, রবি ঘোষ সহ অনেকেই তাঁকে চিনতেন বা চেনেন ।
প্রতি বছরই নারী দিবস আসবে, ঘটা করে পালিত হবে । আর এভাবেই সবার আড়ালে থেকে মানুষের সেবায় কাজ করে যাবেন কোনও না কোনও গীতা দেবী ৷