কলকাতা, 22 অক্টোবর: রাজনৈতিক টানাপড়েনে কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কে দুর্নীতির কথা উঠে এসেছে একাধিক বার । তবে শুধুমাত্র কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কই নয়, রাজ্যের শহরাঞ্চলের বিভিন্ন সমবায় ব্যাঙ্কে (আরবান কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্কস-ইউসিবি) ব্যাঙ্কেও ভুরি ভুরি অনিয়ম চোখে পড়ছে বলে এবার সামনে এল । তা নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই ওই সব ব্যাঙ্কের উপর নজরদারি চালাচ্ছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই) । গত এক বছর ধরে নীরবে আরবিআই-এর আতসকাঁচের নীচে রয়েছে ওই সব ব্যাঙ্ক ।
আরবিআই-এর একটি সূত্র জানিয়েছে, বেশ কিছু সমবায় ব্যাঙ্কের কর্মপদ্ধতি, বিশেষ করে তাদের রোজকার কার্য পরিচালনা, মূলধনের প্রবাহ এবং ঋণদানের ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত ত্রুটি, এ সবের উপর নজর রাখা হয়েছে । শুধু নজরদারিই নয়, গত এক বছরে একাধিক সমবায় ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে ।
আরও পড়ুন: Suvendu-Babul : পিসি-ভাইপোর সঙ্গে কীসের চুক্তি ? বাবুলকে আক্রমণ শুভেন্দু'র
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে থেকে এই বিশেষ নজরদারি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আরবিআই কর্তা । তাঁর বক্তব্য, ‘‘নজরদারি, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, এ সব ছুটকো ঘটনা ৷ হিমশৈলের চূড়া মাত্র ৷ বহু দিন থেকে নিঃশব্দে নজরদারি চলছে ৷ কাজ প্রায় গুটিয়ে এনেছি আমরা ৷ শহরাঞ্চলের একাধিক সমবায় ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে খুব শীঘ্র বড় ধরনের শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হবে ৷ অনিয়মের গুরুত্ব যাচাই করে অনেক ব্যাঙ্কের লাইসেন্সও বাতিল করা হতে পারে ৷ জরিমানাও দিতে হতে পারে বড় অঙ্কের ৷’’
গত বছর পর্যন্ত সমবায় ব্যাঙ্কগুলির নিয়ন্ত্রণ সংশ্লিষ্ট রাজ্যের হাতেই ছিল । কিন্তু ২০২০-র সেপ্টেম্বরে সংসদে সংশোধিত ব্যাঙ্কিং প্রবিধান আইন পাস করিয়ে সমবায় ব্যাঙ্কগুলির নিয়ন্ত্রণ সরাসরি আরবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়া হয় । এর ফলে, ব্যাঙ্কের কাজকর্মের তদারকি এবং পরিচালনার ভার আরবিআই-এর হাতে ওঠে । এমনকি আরবিআই চাইলে রাজ্যের সঙ্গে পরামর্শ করে সমবায় ব্যাঙ্কের বোর্ড অব ডিরেক্টরও পাল্টাতে পারে । অনিয়মের অভিযোগে লাইসেন্স বাতিল, যে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিতে পারে আরবিআই । তার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্যের অনুমতিরও প্রয়োজন নেই তাদের ।
আরও পড়ুন: BJP Protest : বাংলাদেশের ঘটনার প্রতিবাদে আসানসোলে শুভেন্দুর মশাল মিছিল
নিয়ন্ত্রণ হাতে পাওয়ার দেড় মাসেক মধ্যেই বাংলার বেশ কিছু সমবায় ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় আরবিআই । গত বছর ডিসেম্বরে এক সঙ্গে তিনটি শহরাঞ্চলের সমবায় ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে জরিমানা ধার্য করে তারা, যার মধ্যে দু’টি আবার বাংলার । প্রথমটি, বড়াল ইউনিয়ন কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্ক এবং দ্বিতীয়টি, খাতড়া পিপলস কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্ক । তৃতীয়টি পড়শি রাজ্য ওড়িশার বেরহমপুরের কোঅপারেটিভ আরবান ব্যাঙ্ক লিমিটেড । আরবিআই-এর নিয়ন্ত্রক সম্মতির নির্দেশিকা লঙ্ঘনের জন্য জরিমানা করা হয় তিনটি ব্যাঙ্ককেই । এ বছর মে মাসে, হাওড়ার বাগনানের ইউনাইটেড কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্কের লাইসেন্স বাতিল করে দেয় আরবিআই । সেই সময় কারণ দেখানো হয় যে, পর্যাপ্ত মূলধন এবং আয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য নেই বলেই সেটির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে ।
আরও পড়ুন: BJP Innner Clash: আসানসোলে বিজেপির প্রতিবাদ মিছিলে দুই শিবিরের মধ্যে বচসা-হাতাহাতি
যদিও সমবায় ব্যাঙ্কগুলির তদারকি এবং পরিচালনার ভার আরবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়া নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে তিনি জানান, সমবায় ব্যাঙ্কগুলি বরাবরই রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল । এক তরফা সিদ্ধান্তে সেগুলিকে আরবিআই-এর নজরদারির আওতায় আনা রাজ্যের ক্ষমতায় হ্সতক্ষেপ বই অন্য কিছু নয় ।
সেই সময় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর দখলে থাকা কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের দুর্নীতি নিয়েও সরব হন মমতা । ওই ব্যাঙ্কে প্রচুর বেনামি অ্যাকাউন্ট রয়েছে এবং তার মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা তছরুপ হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি । সেগুলির অডিট হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি । যদিও রাজ্যের এই বিশেষ অডিট আটকে দেয় হাইকোর্ট । তা নিয়েও বিজেপি নেতাকে কটাক্ষ করেন মমতা । দুর্নীতি ঢাকতে শিশিরপুত্র আদালতকে ঢাল করে এগোচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি ।