ETV Bharat / city

বল খুঁজতে গিয়ে গ্রিলের ফলায় হাত এফোঁড়-ওফোঁড়, মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচলেন যুবক

পাঁচিল টপকে বল আনতে গিয়ে আচমকা পা পিছলে পাঁচিলের উপরে থাকা লোহার রেলিংয়ে পড়ে যান বেহালার এক যুবক ৷ রেলিংয়ের একটি ফলা তাঁর বাঁ হাতের কনুইয়ের কিছুটা উপর দিয়ে ঢুকে বেরিয়ে যায় কনুইয়ের নীচ দিয়ে । এ ভাবে বিঁধে থাকা অবস্থায় ওই রেলিংয়ের কিছুটা অংশসহ ওই যুবককে নিয়ে আসা হয় SSKM হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে । বিরল এই ঘটনায় ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারে সফল হন SSKM হাসপাতালের চিকিৎসকরা । যার জেরে প্রাণ ফিরে পান ওই যুবক ৷

জখম যুবক
author img

By

Published : Nov 20, 2019, 1:38 AM IST

Updated : Nov 20, 2019, 2:31 AM IST

কলকাতা, 20 নভেম্বর : ক্রিকেট খেলার সময় বল খুঁজতে গিয়ে মৃত্যুর দোরগোড়া থেকে ফিরে এলেন এক যুবক । পাঁচিল টপকে বল আনতে গিয়ে আচমকা পা পিছলে পাঁচিলের উপরে থাকা লোহার রেলিংয়ে পড়ে যান তিনি ৷ রেলিংয়ের একটি ফলা তাঁর বাঁ হাতের কনুইয়ের কিছুটা উপর দিয়ে ঢুকে বেরিয়ে যায় কনুইয়ের একটু নীচ দিয়ে । এ ভাবে বিঁধে থাকা অবস্থায় ওই রেলিংয়ের কিছুটা অংশসহ ওই যুবককে নিয়ে আসা হয় SSKM হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে । রেলিংয়ের ওই অংশটি হাতের মধ্যে বিঁধে থাকায় যে কোনও মুহূর্তে মৃত্যু হতে পারত তাঁর । কিন্তু বিরল এই ঘটনায় ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারে সফল হন SSKM হাসপাতালের চিকিৎসকরা । যার জেরে প্রাণ ফিরে পান তিনি ৷

আরও পড়ুন : অন্য শিশুরা দেখতে পাবে, মৃত সন্তানের কর্নিয়া দান দম্পতির

ওই যুবক বেহালার বাসিন্দা । কলেজ পড়ুয়া । তবে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনতে রাজি হননি তাঁর পরিবারের সদস্যরা ৷ যদিও বিরল এই ঘটনা প্রসঙ্গে SSKM হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ ওই যুবককে ট্রমা কেয়ার সেন্টারে নিয়ে আসা হয়েছিল ৷ তখন গ্রিলের একটি অংশ তাঁর হাতের মধ্যে গেঁথে ছিল । বাঁ হাতের একদিক দিয়ে ঢুকে গ্রিলের একটি ফলা হাতের অন্য দিক দিয়ে বের হয়ে ছিল । দ্রুত তাঁর চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া হয়েছিল । গ্রিলের অংশটি এমনভাবে গেঁথে ছিল হাতের মধ্যে যে যে কোনও মুহূর্তে সেখানকার মেজর শিরা, ধমনী বা নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল । তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায় হাতে গেঁথে থাকা গ্রিলের ওই অংশটির জন্য ভিতরে মেজর কোনও ইনজুরি হয়নি ৷

চিকিৎসক রুদ্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, " গ্রিলের একটি অংশ ওই রোগীর হাতের মধ্যে গেঁথে থাকলেও, গেঁথে থাকা ওই অংশের সঙ্গে গ্রিলের আরও অনেকটা অংশসহ রোগীকে আমাদের এখানে নিয়ে আসা হয়েছিল । গ্রিলের গোটা ওই অংশটির ওজন প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন কেজির মতো হবে । আমাদের দু'জন চিকিৎসক রোগীসহ গ্রিলের গোটা ওই অংশটি ধরে নিয়ে দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান । " সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক রুদ্রদীপবাবু আরও জানিয়েছেন, রক্তের জন্য ব্লাডব্যাংক থেকেও তৎপরতা নেওয়া হয় । দ্রুত রক্তের ব্যবস্থাও হয়ে যায় । প্রয়োজনে CTVS-এর চিকিৎসকদের সাহায্যের প্রয়োজন, এ কথা জানানো হলে, CTVS-এর একজন চিকিৎসকও দ্রুত চলে আসেন । এর পরে জেনেরাল অ্যানাসথেশিয়া করে শুরু হয় অস্ত্রোপচার । সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকারের অধীনে রোগীকে ভরতি নেওয়া হয়েছিল । তাঁর তত্ত্বাবধানে সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক রুদ্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, চিকিৎসক মোনালিসা খান, চিকিৎসক সৃজা বসু এবং CTVS-এর চিকিৎসক সৌম্যদর্শন সান্যাল অস্ত্রোপচার করেন ।

অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসকরা দেখেন, গেঁথে থাকা গ্রিলের ওই অংশটি হাতের মেজর কোনও শিরা, ধমনী বা নার্ভকে ইনজুরি করেনি ঠিকই । তবে শিরা, নার্ভ বা ধমনীর গা ঘেঁষে রয়েছে ৷ রুদ্রদীপবাবু বলেন, "এর জন্য অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে গ্রিলের ওই অংশটি হাতের যেখান দিয়ে গেছে সেই বরাবর হাতের ওই অংশ কেটে গেঁথে থাকা গ্রিলের অংশটিকে বের করা হয় । গ্রিলের ওই অংশটিকে শিরা, ধমনী, নার্ভ বাঁচিয়ে বের করা হয় ।" তিনি আরও বলেন, " রোগী এখন হাত নাড়াতে পারছেন । কিন্তু যেহেতু একটি ফরেন‌ বডি ঢুকে গিয়েছিল ৷ তাই সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হলেও সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে । আমরা আশা করছি, ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে আগামী দিনে রোগীর হাতের অবস্থা আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে ।"

কতটা বিপজ্জনক ছিল অস্ত্রোপচার?

রুদ্রদীপবাবু বলেন, "বিরল এই অস্ত্রোপচার খুবই বিপজ্জনক ছিল । কারণ, এ দিক থেকে ও দিকে একটু নড়লেই হাতের মেজর শিরা, ধমনী, নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেত ৷ তাতে হাত কেটে বাদ দিতে হতো ।" জানান, ওই যুবকের বাড়ির লোকরাও খুব বুদ্ধিমানের মতো কাজ করেছেন । অন্য কোথাও দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন । তিন-সাড়ে তিন কেজির মতো ভারী গ্রিলের ওই গোটা অংশসহ রোগীকে খুব সাবধানে হাসপাতালে এনেছিলেন তাঁরা ৷ তিনি আরও বলেন, " হাসপাতালে নিয়ে আসার সময়ও অত ভারী গ্রিলের ওই অংশটি একটু এ দিক থেকে ও দিকে সরে গেলেই মেজর ইনজুরি হয়ে যেতে পারত । এই অস্ত্রোপচার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল । কারণ গ্রিলের অংশটি হাতের যেখান দিয়ে ঢুকেছে এবং যেখান দিয়ে বেরিয়েছে, হাতের মেজর শিরা, ধমনী, নার্ভ ওই জায়গা দিয়েই যায় । রোগী ভাগ্যবান যে মেজর শিরা, ধমনী বা নার্ভে সরাসরি কোনও ইনজুরি হয়নি ।" এই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হতে দেড় ঘণ্টার মত সময় লেগেছিল । অস্ত্রোপচারের সময় কোনও ভাবে কোনও রকম ইনজুরি যাতে না হয় তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল ৷ পাশাপাশি চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচারের সময় মেজর শিরা, ধমনী, নার্ভ ইনজুরি হলে তা মেরামতের জন্য প্রস্তুত ছিলেন তাঁরা ৷ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই যুবকের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গেছে ।

কলকাতা, 20 নভেম্বর : ক্রিকেট খেলার সময় বল খুঁজতে গিয়ে মৃত্যুর দোরগোড়া থেকে ফিরে এলেন এক যুবক । পাঁচিল টপকে বল আনতে গিয়ে আচমকা পা পিছলে পাঁচিলের উপরে থাকা লোহার রেলিংয়ে পড়ে যান তিনি ৷ রেলিংয়ের একটি ফলা তাঁর বাঁ হাতের কনুইয়ের কিছুটা উপর দিয়ে ঢুকে বেরিয়ে যায় কনুইয়ের একটু নীচ দিয়ে । এ ভাবে বিঁধে থাকা অবস্থায় ওই রেলিংয়ের কিছুটা অংশসহ ওই যুবককে নিয়ে আসা হয় SSKM হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে । রেলিংয়ের ওই অংশটি হাতের মধ্যে বিঁধে থাকায় যে কোনও মুহূর্তে মৃত্যু হতে পারত তাঁর । কিন্তু বিরল এই ঘটনায় ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারে সফল হন SSKM হাসপাতালের চিকিৎসকরা । যার জেরে প্রাণ ফিরে পান তিনি ৷

আরও পড়ুন : অন্য শিশুরা দেখতে পাবে, মৃত সন্তানের কর্নিয়া দান দম্পতির

ওই যুবক বেহালার বাসিন্দা । কলেজ পড়ুয়া । তবে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনতে রাজি হননি তাঁর পরিবারের সদস্যরা ৷ যদিও বিরল এই ঘটনা প্রসঙ্গে SSKM হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ ওই যুবককে ট্রমা কেয়ার সেন্টারে নিয়ে আসা হয়েছিল ৷ তখন গ্রিলের একটি অংশ তাঁর হাতের মধ্যে গেঁথে ছিল । বাঁ হাতের একদিক দিয়ে ঢুকে গ্রিলের একটি ফলা হাতের অন্য দিক দিয়ে বের হয়ে ছিল । দ্রুত তাঁর চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া হয়েছিল । গ্রিলের অংশটি এমনভাবে গেঁথে ছিল হাতের মধ্যে যে যে কোনও মুহূর্তে সেখানকার মেজর শিরা, ধমনী বা নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল । তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায় হাতে গেঁথে থাকা গ্রিলের ওই অংশটির জন্য ভিতরে মেজর কোনও ইনজুরি হয়নি ৷

চিকিৎসক রুদ্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, " গ্রিলের একটি অংশ ওই রোগীর হাতের মধ্যে গেঁথে থাকলেও, গেঁথে থাকা ওই অংশের সঙ্গে গ্রিলের আরও অনেকটা অংশসহ রোগীকে আমাদের এখানে নিয়ে আসা হয়েছিল । গ্রিলের গোটা ওই অংশটির ওজন প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন কেজির মতো হবে । আমাদের দু'জন চিকিৎসক রোগীসহ গ্রিলের গোটা ওই অংশটি ধরে নিয়ে দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান । " সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক রুদ্রদীপবাবু আরও জানিয়েছেন, রক্তের জন্য ব্লাডব্যাংক থেকেও তৎপরতা নেওয়া হয় । দ্রুত রক্তের ব্যবস্থাও হয়ে যায় । প্রয়োজনে CTVS-এর চিকিৎসকদের সাহায্যের প্রয়োজন, এ কথা জানানো হলে, CTVS-এর একজন চিকিৎসকও দ্রুত চলে আসেন । এর পরে জেনেরাল অ্যানাসথেশিয়া করে শুরু হয় অস্ত্রোপচার । সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকারের অধীনে রোগীকে ভরতি নেওয়া হয়েছিল । তাঁর তত্ত্বাবধানে সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক রুদ্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, চিকিৎসক মোনালিসা খান, চিকিৎসক সৃজা বসু এবং CTVS-এর চিকিৎসক সৌম্যদর্শন সান্যাল অস্ত্রোপচার করেন ।

অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসকরা দেখেন, গেঁথে থাকা গ্রিলের ওই অংশটি হাতের মেজর কোনও শিরা, ধমনী বা নার্ভকে ইনজুরি করেনি ঠিকই । তবে শিরা, নার্ভ বা ধমনীর গা ঘেঁষে রয়েছে ৷ রুদ্রদীপবাবু বলেন, "এর জন্য অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে গ্রিলের ওই অংশটি হাতের যেখান দিয়ে গেছে সেই বরাবর হাতের ওই অংশ কেটে গেঁথে থাকা গ্রিলের অংশটিকে বের করা হয় । গ্রিলের ওই অংশটিকে শিরা, ধমনী, নার্ভ বাঁচিয়ে বের করা হয় ।" তিনি আরও বলেন, " রোগী এখন হাত নাড়াতে পারছেন । কিন্তু যেহেতু একটি ফরেন‌ বডি ঢুকে গিয়েছিল ৷ তাই সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হলেও সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে । আমরা আশা করছি, ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে আগামী দিনে রোগীর হাতের অবস্থা আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে ।"

কতটা বিপজ্জনক ছিল অস্ত্রোপচার?

রুদ্রদীপবাবু বলেন, "বিরল এই অস্ত্রোপচার খুবই বিপজ্জনক ছিল । কারণ, এ দিক থেকে ও দিকে একটু নড়লেই হাতের মেজর শিরা, ধমনী, নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেত ৷ তাতে হাত কেটে বাদ দিতে হতো ।" জানান, ওই যুবকের বাড়ির লোকরাও খুব বুদ্ধিমানের মতো কাজ করেছেন । অন্য কোথাও দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন । তিন-সাড়ে তিন কেজির মতো ভারী গ্রিলের ওই গোটা অংশসহ রোগীকে খুব সাবধানে হাসপাতালে এনেছিলেন তাঁরা ৷ তিনি আরও বলেন, " হাসপাতালে নিয়ে আসার সময়ও অত ভারী গ্রিলের ওই অংশটি একটু এ দিক থেকে ও দিকে সরে গেলেই মেজর ইনজুরি হয়ে যেতে পারত । এই অস্ত্রোপচার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল । কারণ গ্রিলের অংশটি হাতের যেখান দিয়ে ঢুকেছে এবং যেখান দিয়ে বেরিয়েছে, হাতের মেজর শিরা, ধমনী, নার্ভ ওই জায়গা দিয়েই যায় । রোগী ভাগ্যবান যে মেজর শিরা, ধমনী বা নার্ভে সরাসরি কোনও ইনজুরি হয়নি ।" এই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হতে দেড় ঘণ্টার মত সময় লেগেছিল । অস্ত্রোপচারের সময় কোনও ভাবে কোনও রকম ইনজুরি যাতে না হয় তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল ৷ পাশাপাশি চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচারের সময় মেজর শিরা, ধমনী, নার্ভ ইনজুরি হলে তা মেরামতের জন্য প্রস্তুত ছিলেন তাঁরা ৷ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই যুবকের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গেছে ।

Intro:EXCLUSIVE

কলকাতা, ১৯ নভেম্বর: ক্রিকেট খেলার সময় বল খুঁজতে গিয়ে মৃত্যুর দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন এই তরুণ। কারণ, পাঁচিল টপকে ওই বল আনতে গিয়েছিলেন তিনি। আর তখনই আচমকা পা পিছলে ওই পাঁচিলের উপরের লোহার রেলিংয়ে তিনি পড়ে যান। রেলিংয়ের একটি ফলা এই তরুণের বাঁ হাতের কনুইয়ের কিছুটা উপর দিয়ে ঢুকে বেরিয়ে যায় কনুইয়ের একটু নীচ দিয়ে। এভাবে বিঁধে থাকা অবস্থায় ওই রেলিংয়ের কিছুটা অংশসহ এই তরুণকে নিয়ে আসা হয় SSKM হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে। রেলিংয়ের ওই অংশটি হাতের মধ্যে বিঁধে থাকার কারণে যে কোনও মুহূর্তে এই তরুণের মৃত্যু হতে পারত। এমনকী, অস্ত্রোপচারের সময়েও তাঁর মৃত্যু হয়ে যেতে পারত। অবশেষে, বিরল এই ঘটনায় ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারে সফল হলেন SSKM হাসপাতালের চিকিৎসকরা। যার জেরে প্রাণ ফিরে পেলেন এই তরুণ।
Body:বছর ১৮-র এই তরুণ বেহালার বাসিন্দা। তিনি একটি কলেজের পড়ুয়া। তবে, এভাবে বেঁচে যাওয়ার পরেও এই তরুণের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনতে রাজি হননি পরিজনরা। যদিও, বিরল এই ঘটনার বিষয়ে SSKM হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ এই রোগীকে যখন এখানকার ট্রমা কেয়ার সেন্টারে নিয়ে আসা হয়েছিল, তখন ওই গ্রিলের একটি অংশ তাঁর হাতের মধ্যে গেঁথে ছিল। বাঁ হাতের একদিক দিয়ে ঢুকে গ্রিলের একটি ফলা হাতের অন্য দিক দিয়ে বের হয়ে ছিল। তাঁরা জানিয়েছেন, দ্রুত এই রোগীর চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া হয়। গ্রিলের ওই অংশটি এমন ভাবে গেঁথে ছিল হাতের মধ্যে, তাতে যে কোনও মুহূর্তে সেখানকার মেজর শিরা, ধমনী, নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তবে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁরা দেখেন, খুব বাঁচোয়া যে, মেজর কোনও ইনজুরি করতে পারেনি হাতের মধ্যে গেঁথে থাকা গ্রিলের এই অংশ।

চিকিৎসক রুদ্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "গ্রিলের একটি অংশ এই রোগীর হাতের মধ্যে গেঁথে থাকলেও, গেঁথে থাকা এই অংশের সঙ্গে গ্রিলের আরও অনেকটা অংশ সহ এই রোগীকে আমাদের এখানে নিয়ে আসা হয়েছিল। গ্রিলের গোটা এই অংশটির ওজন তিন-সাড়ে তিন কেজির মতো হবে। আমাদের দুজন চিকিৎসক, রোগী সহ গ্রিলের গোটা এই অংশটি ধরে নিয়ে দ্রুত অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান।" সার্জারি বিভাগের এই চিকিৎসক জানিয়েছেন, রক্তের জন্য ব্লাডব্যাংক থেকেও তৎপরতা নেওয়া হয়। দ্রুত রক্তের ব্যবস্থাও হয়ে যায়। প্রয়োজনে CTVS-এর চিকিৎসকদের সাহায্যের প্রয়োজন। একথা জানানো হলে, CTV-এর একজন চিকিৎসকও দ্রুত চলে আসেন। এর পরে জেনারেল অ্যানাসথেশিয়া করে শুরু হয় অস্ত্রোপচার। সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকারের অধীনে এই রোগীকে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। তাঁর তত্ত্বাবধানে সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক রুদ্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, চিকিৎসক মোনালিসা খান, চিকিৎসক সৃজা বসু এবং CTVS-এর চিকিৎসক সৌম্যদর্শন সান্যাল অস্ত্রোপচার করেন।
Conclusion:অস্ত্রোপচারের সময় চিকিৎসকরা দেখেন, গেঁথে থাকা গ্রিলের ওই অংশটি হাতের মেজর কোনও শিরা, ধমনী, নার্ভকে ইনজুরি করেনি ঠিকই। তবে, এগুলির গা ঘেঁষে রয়েছে গেঁথে থাকা ওই অংশটি। চিকিৎসক রুদ্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "এর জন্য অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে গ্রিলের ওই অংশটি হাতের যেখান দিয়ে গিয়েছে, সেই বরাবর হাতের ওই অংশ কেটে গেঁথে থাকা গ্রিলের ওই অংশটিকে বের করা হয়। গ্রিলের ওই অংশটিকে শিরা, ধমনী, নার্ভ বাঁচিয়ে বের করা হয়।" তিনি বলেন, "এই রোগী এখন হাত নাড়াতে পারছেন। কিন্তু, যেহেতু একটি ফরেন‌ বডি ঢুকে গিয়েছিল, তাতে সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হলেও সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি, ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে আগামী দিনে এই রোগীর হাতের অবস্থা আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।"

কতটা বিপজ্জনক ছিল এই অস্ত্রোপচার? চিকিৎসক রুদ্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "বিরল এই অস্ত্রোপচার খুবই বিপজ্জনক ছিল। কারণ, এদিক থেকে ওদিকে একটু নড়লেই হাতের মেজর শিরা, ধমনী, নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেত, তাতে হাট কেটে বাদ দিতে হতো।" এই তরুণের বাড়ির লোকরাও খুব বুদ্ধিমানের মতো কাজ করেছেন। অন্য কোথাও দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা এই হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। তিন-সাড়ে তিন কেজির মতো ভারী গ্রিলের ওই গোটা অংশ সহ রোগীকে খুব সাবধানে এই হাসপাতালে তাঁরা নিয়ে এসেছেন। এ কথা জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, "হাসপাতালে নিয়ে আসার সময়ও অত ভারী গ্রিলের ওই অংশটি একটু এদিক-ওদিক সরে গেলেই মেজর ইনজুরি হয়ে যেতে পারত। এই অস্ত্রোপচার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। কারণ, গ্রিলের অংশটি হাতের যেখান দিয়ে ঢুকে এবং যেখান দিয়ে বেরিয়েছে, হাতের মেজর শিরা, ধমনী, নার্ভ ওই জায়গা দিয়েই যায়। রোগী ভাগ্যবান যে এই মেজর শিরা, ধমনী, নার্ভ সরাসরি ইনজুরি হয়নি।" এই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হতে দেড় ঘন্টার মত সময় লেগেছিল। অস্ত্রোপচারের সময় কোনও ভাবে কোনও রকম ইনজুরি যাতে না হয় এই তরুণের হাতে, তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা তাঁরা নিয়েছিলেন। এ কথার পাশাপাশি চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচারের সময় যদি মেজর শিরা, ধমনী, নার্ভ ইনজুরি হয়ে যায়, তা হলে সে সব মেরামতের জন্যও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল তাঁরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই রোগীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গিয়েছে।
_______



ছবি:
wb_kol_02a_rare_surgery_pic_7203421
এবং,
wb_kol_02b_rare_surgery_pic_7203421
জখম রোগীর ছবি



Last Updated : Nov 20, 2019, 2:31 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.