কলকাতা, 28 নভেম্বর : 2016 সালে বিধানসভা নির্বাচনে একসঙ্গে ভোটে লড়েছিল তারা । তবে তাকে জোট বলতে রাজি ছিল না বাম নেতৃত্ব । বরং বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছিলেন, আসন সমঝোতা হয়েছে । আর বর্তমান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি বলেছিলেন, বাম ও কংগ্রেসের সমঝোতা হলেও আসন ভাগাভাগি ঠিকঠাক হয়নি । তাই, এবার বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাম-কংগ্রেস জোট নিয়ে সচেষ্ট হয়েছেন দুই দলের নেতারা । কিন্তু, তাতে যে এখনও কাঁটা রয়েছে, রাহুল গান্ধির সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের ভার্চুয়াল বৈঠকে তা স্পষ্ট হয়ে গেছে ।
আর কয়েকমাস পরই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন । তা নিয়ে দলের প্রস্তুতি এবং সর্বোপরি বামেদের সঙ্গে জোট নিয়ে নেতাদের মনোভাব জানতে রাহুল গতকাল প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন ।
বৈঠকে মূলত বামফ্রন্টের সঙ্গে আরও নিবিড় সম্পর্ক গড়ার পাশাপাশি কংগ্রেসের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি নির্দেশ দেন, কংগ্রেসকে একক শক্তিতে সংগঠনকে আরও মজবুত করতে হবে । কোনওরকম আপস করা যাবে না দলের সংগঠন নিয়ে । আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল এবং BJP-র বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরিকে রাহুল গান্ধি জানিয়ে দেন, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে ভালো ফল করতেই হবে । কংগ্রেস প্রার্থীরা অগ্রাধিকার পেলে রাজ্যে ফল ভালো হবে বলে রাহুলকে জানিয়েছেন অধীর । রাহুলের নির্দেশ মেনে এবার বামফ্রন্টের সঙ্গে জোট করার ক্ষেত্রে অনড় মনোভাব নিয়ে এগোবেন অধীর চৌধুরি ।
কয়েকদিন আগে শেষ বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের বৈঠকে অধীর চৌধুরি বামফ্রন্ট চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন জানান, সীতারাম ইয়েচুরির মাধ্যমে সোনিয়া গান্ধির কাছ থেকে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের আসন সমঝোতার চূড়ান্ত স্বীকৃতি আনার জন্য । বৈঠকে উপস্থিত RSP-র শ্রমিক সংগঠনের এক নেতা জানিয়েছেন, "হঠাৎ করেই সে দিনের বৈঠকে অধীরবাবু বিমানদাকে বললেন, বিমানদা আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ রয়েছে । সোনিয়া গান্ধির সঙ্গে সীতারাম'দার সম্পর্ক খুব ভালো । আপনি ওনাকে বলে সোনিয়া গান্ধির কাছ থেকে বাম-কংগ্রেস আসন সমঝোতার সম্মতি আনার ব্যবস্থা করুন ।"
বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের শেষ বৈঠকে এমন ঘটনার সাক্ষী থেকে শরিক দলের নেতারা ভাবছেন কীভাবে তাহলে বামফ্রন্টের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হবে? হাইকমান্ড সোনিয়া গান্ধি এখনও সম্পূর্ণ সম্মতি দেননি । এই জোট কি তাহলে কেবলমাত্র রাজ্যস্তরে হবে? প্রশ্ন অনেক । এরইমধ্যে কংগ্রেসের পুরুলিয়ার বিধায়ক নেপাল মাহাত সহ উত্তর এবং দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকজন কংগ্রেস বিধায়ক মনে প্রাণে বামফ্রন্টের সঙ্গে জোট বাঁধতে নারাজ । এখনও তাঁরা জোট ভেঙে দিতে চাইছেন । সূত্রের খবর, গতকালের বৈঠকে রাহুল গান্ধি ধৈর্য হারিয়েছেন । দলের বিধায়করা হাইকমান্ডের হুইপ না মানার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি । কংগ্রেসের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতির স্পষ্ট বার্তা, রাজ্যের প্রত্যেকটি জেলা এবং পঞ্চায়েত স্তরে মানুষের কাছে গিয়ে যৌথভাবে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের কর্মীরা জোট সরকার গঠনের জন্য আবেদন জানাবে । প্রদেশ কংগ্রেসের কর্মীরা এবং নেতারা বেশি করে গণ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবেন । বামফ্রন্টের সঙ্গে যৌথ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে কংগ্রেসের । উভয়পক্ষের আরও নিবিড় জনসংযোগ তৈরি করতে হবে । যারা যেখানে শক্তিশালী সেখানেই প্রার্থী দেবে তারা । রাজ্যে কংগ্রেসের সংগঠন যেখানে অপেক্ষাকৃত দুর্বল, সেখানে দলকে শক্তিশালী করার জন্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে নির্দেশ দেন রাহুল গান্ধি ।
আগামী দিনে গোটা দেশে এবং রাজ্যে কংগ্রেসই যে ভবিষ্যৎ তা ফের মনে করিয়ে দেন রাহুল গান্ধি । গতকালের ভার্চুয়াল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি, বিধানসভায় কংগ্রেসের ডেপুটি লিডার নেপাল মাহাত, কংগ্রেসের মুখ্য সচেতক মনোজ চক্রবর্তী , রাজ্যসভার কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য সহ অন্যরা ।
কোরোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে শয্যাশায়ী রয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান । বৈঠকে তিনি অংশগ্রহণ করতে পারেননি । AICC-র দুই বঙ্গ পর্যবেক্ষক জিতিন প্রসাদ এবং কে সি বেণুগোপালও বৈঠকে ছিলেন।