কলকাতা, 9 মে : পিরিয়ড ইজ নরমাল ! সচেতনতা বৃদ্ধিতে ইদানীং অনেক প্রচার চোখে পড়ে ৷ কিন্তু তাতে আসল কাজ হচ্ছে কি ?
একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও এক মহিলাকে ঋতুস্রাবের দাগ লাগায় যখন অতিরিক্ত টাকা গুণতে হল, তখন ওই প্রশ্নই আবার প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল ৷ ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি হোটেলের ৷ হোটেল থেকে চেক আউট করে বেরিয়ে আসার সময় তাঁর থেকে চাওয়া হল অতিরিক্ত টাকা ৷ কারণ, বিছানার চাদরে লেগেছে ঋতুস্রাবের দাগ ৷ তাই বিলের সঙ্গে দিতে হবে অতিরিক্ত টাকা ৷ এমনই অভিযোগ করেছেন মালবিকা দাস (নাম পরিবর্তিত)। যিনি পেশায় কলকাতার নামকরা এক কলেজের অধ্যাপিকা (professor fined at hotel for Period stains in bedsheet) ৷
প্রসঙ্গত, রবিবার রাতে নিজের কাকাকে নিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান মালবিকা । তাঁরা একটি হোটেল বুকিং অ্যাপের মাধ্যমে পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি হোটেলে ঘর বুক করেন । আজ সকালে চেক আউট করার সময় সেই ঘরের বিছানার চাদর নিয়ে সমস্যার সূত্রপাত হয় । মালবিকা দাস বলেন, "আজ হোটেল থেকে চেক আউট করার সময় আমাকে যখন বিলটি দেওয়া হয়, তখন আমি বিলটি দেখে অবাক হয়ে যাই । 'লন্ড্রি'র খাতে নেওয়া হয়েছে 400 টাকা । আমি রিসেপশনে জিজ্ঞেস করায় কর্মরত হোটেল কর্মী জানান, চাদরে ঋতুস্রাবের দাগ লেগেছে যা ধুলেও যাবে না, তাই এই চাদরটি আর ব্যবহার করা যাবে না ৷ তাই টাকাটা নেওয়া হয়েছে ৷ তখন আমি তাঁদের জিজ্ঞেস করি, ওই দাগের জায়গায় যদি টমেটো কেচাপ বা অন্য কিছু পড়ে যেত তাহলেও কি তাঁর থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া হত !"
এই বিষয়ে ওই হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁদের বক্তব্য, "হোটেলে নিয়মাবলীতে রয়েছে যে যিনি ঘর ভাড়া নিচ্ছেন তাঁর মাধ্যমে যদি হোটেলের সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে সেই খাতে টাকা নেওয়া হবে । চাদরে রক্তের দাগ ছিল যা আর ধুলেও উঠবে না । তাই বাড়তি টাকা নেওয়া হয়েছে ।" কর্তৃপক্ষের একজন বলেন, "যাঁরা ঘর ভাড়া নিচ্ছেন তাঁদের যাতে হোটেলের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কোনও অভিযোগ না থাকে তাই সেই বিষয় আমরা সর্বদা তৎপর । তবে এই পুরো বিষয়টি যখন ঘটে তখন রিসেপশনে অন্যরাও উপস্থিত ছিলেন । তাই সেই ক্ষেত্রে আমরা ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ।"
আরও পড়ুন : common health problems of women : মেয়েদের এইসব শারীরিক সমস্যায় অবহেলা নয়, বলছেন স্ত্রীরোগ-বিশেষজ্ঞ
উল্লেখ্য, 2018-এর ছবি প্যাড ম্যানের মুক্তির আগে এরকমই প্রচার দেখা গিয়েছিল সারা দেশ জুড়ে ৷ নেতা থেকে অভিনেতা সকলেই সামিল হয়েছিলেন সেই প্রচারে ৷ প্যাড হাতে তাঁদের বলতে দেখা গেছিল এই কথাটি ৷ ঋতুস্রাব যে লুকনোর বা বলতে লজ্জা পাওয়ার বিষয় নয়, সেটাই সকলে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন এর মাধ্যমে ৷ আর জামাকাপড়ে ঋতুস্রাবের দাগ লাগাটাও যে বিশাল কিছু বা লজ্জার বিষয় নয়, তা প্রায়শ্যই বিভিন্ন সিনেমা বা বিজ্ঞাপনে তুলে ধরা হয় ৷ এছাড়া আরও অনেক সংস্থাও সমাজকে এই ট্যাবু থেকে মুক্ত করতে প্রচার চালায় ৷ স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রশ্ন উঠছে, এত প্রচারের ফলে কি কোনও লাভ হচ্ছে ?
মালবিকা দাস বলেন, "এটা তো প্রকৃতির একটা স্বাভাবিক নিয়ম, তাহলে এই বিষয়টি নিয়ে আমার থেকে বা আর কারও থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া উচিত নয় । কারণ এর আগেও একটি হোটেলে একই ঘটনা ঘটেছিল, কিন্তু পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে কতৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে আর কোনও কথা বাড়ায়নি ।" তিনি আরও বলেন, "আমি যদি অসুস্থতার কারণে বিছানায় বমি করে ফেলতাম তাহলে কি ওনারা আমার থেকে বাড়তি টাকা নিতেন !" এই বিষয় হোটেল কতৃপক্ষের সাফাই হল, তাঁরা অনেক বছর ধরেই এই ব্যবসায় রয়েছেন তাই কোন দাগ ধুলে উঠবে আর কোনটা উঠবে না সেটা তাঁরা জানেন ।