কলকাতা, 1 অগস্ট : দুই দলের দুই নেতা ৷ একজন রাজনীতি করেন গঙ্গাপাড় থেকে ৷ আর দ্বিতীয়জন আরবসাগরের তীরে বসে সামলান দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ৷ মাত্র দশদিনের ব্যবধানে এই দুই নেতা ভাগ্যের পরিহাসে একই বিন্দুতে এসে পৌঁছলেন ৷ দু’জনেই এখন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (Enforcement Directorate) হেফাজতে৷ দু’জনেই বিদ্ধ দুর্নীতির অভিযোগে ৷
এই দুই নেতার একজন পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় (Partha Chatterjee) ৷ তৃণমূলের (Trinamool Congress) প্রাক্তন মহাসচিব ও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের (Bengal CM Mamata Banerjee) মন্ত্রিসভার প্রাক্তন সদস্য ৷ দ্বিতীয়জন সঞ্জয় রাউত (Sanjay Raut) ৷ রাজ্যসভার সাংসদ ও শিবসেনার (Shiv Sena) মুখপাত্র ৷ দু’জনেই নিজ নিজ রাজ্য ও দলে হেভিওয়েট রাজনৈতিক নেতা হিসেবে পরিচিত ৷
আর এই দুই রাজনৈতিক নেতার সৌজন্যে দুই রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও মহারাষ্ট্র এবং দুই বিজেপি (BJP) বিরোধী রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেস ও শিবসেনা আজ একমেরুতে ৷
যদিও দুই নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ একেবারে ভিন্ন ৷ পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হয়েছেন এসএসসি দুর্নীতি কাণ্ডে (Bengal SSC Scam) ৷ তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অর্পিতা মুখোপাধ্য়ায়ের (Arpita Mukherjee) দু’টি ফ্ল্যাট থেকে পাওয়া গিয়েছে প্রায় 50 কোটি টাকা, কয়েক কোটি টাকার গয়না, বিদেশি মুদ্রা ৷ এছাড়া পার্থ-অর্পিতার অনেক সম্পত্তিরও হিসেব মিলেছে ৷
অন্যদিকে মুম্বইয়ের পাত্রা বস্তি সংস্কারে জমি দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে ৷ সেই মামলার তদন্তে জানা যায়, কোটি কোটি টাকার বেআইনি লেনদেন হয়েছে ৷ ইডি (ED) তদন্তে সঞ্জয় রাউতের নাম উঠে আসে ৷ আর সেই তদন্তে একবার জেরা করা হয় সঞ্জয় ৷ তার পর একাধিকবার নোটিশ দেওয়া হলেও তিনি যাননি ৷ শেষে রবিবার তাঁর বাড়িতে হানা দেয় ইডি৷ 9 ঘণ্টা জেরার পর তাঁকে গ্রেফতার করা হয় ৷
দুর্নীতির অভিযোগে ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া যেমন পার্থ ও সঞ্জয়ের মধ্যে মিল তৈরি করেছে, তেমনই অমিল রয়েছে প্রচুর ৷ এটা ঠিক যে তৃণমূল ও শিবসেনা বিজেপি বিরোধী দুইটি রাজনৈতিক দল ৷ কিন্তু সঞ্জয় রাউত নিজে জাতীয় রাজনীতিতে অনেক বেশি মোদি (Narendra Modi) সমালোচক ও উদ্ধব ঠাকরের (Uddhav Thackeray) অনুগামী হিসেবে পরিচিত ৷ সেই কারণেই মহারাষ্ট্রে রাজনৈতিক সংকটের (Maharashtra Political Crisis) সময় তিনি উদ্ধবের পাশেই ছিলেন ৷ বিদ্রোহী বিধায়কদের বিরুদ্ধে বারবার তোপ দেগেছেন ৷ এমনকী, বিদ্রোহী সেনা বিধায়কদের নিয়ে বিজেপি মহারাষ্ট্রে উদ্ধবকে গদিচ্যূত করে সরকার গড়ে ফেললেও নিজের অবস্থান পালটাননি সঞ্জয় ৷
সেই কারণেই সম্ভবত, সোমবার সকালে তাঁকে ইডি গ্রেফতার করার পরই উদ্ধব শিবির বিজেপিকে নিশানা করতে শুরু করে ৷ উদ্ধব নিজে সরব হয়েছেন বিজেপির বিরুদ্ধে ৷ সঞ্জয়ের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরীও (Congress Leader Adhir Chowdhury) ৷
উল্টোদিকে পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় এখনও দলকে পাশে পাননি ৷ বরং তাঁকে দলের সব পদ থেকে ছেঁটে ফলে ঘাসফুল শিবির জানিয়ে দিয়েছে যে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার দায় পার্থর ৷ কলুষমুক্ত হয়েই তাঁকে ফিরতে হবে রাজনীতিতে ৷ সঞ্জয় যেমন উদ্ধবের আস্থাভাজন, সেরকম পার্থকেও বাংলার রাজনীতি বরাবর মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের ঘনিষ্ঠ-বৃত্তে থাকা রাজনীতিক হিসেবেই জানে ৷ তিনি হয়তো সঞ্জয়ের মতো বিজেপি বিরোধিতায় অতটা ‘ভোকাল’ নন, কিন্তু বরাবর দলের নীতি মেনেই বারবার বিজেপিকে স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে আক্রমণ শানিয়েছেন ৷
রাজনৈতিক মহলের মতে, সেই কারণেই গ্রেফতার হওয়ার পর বিজেপিকে সেভাবে নিশানা করেননি পার্থ ৷ বরং দলনেত্রীর প্রতি আস্থাজ্ঞাপন করেছেন ৷ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতার সিদ্ধান্তের উপর ভরসা রেখেছেন ৷
এখন প্রশ্ন, ইডি হেফাজতে থাকা এই দুই নেতার রাজনৈতিক ভাগ্যও কি ভবিষ্য়তে একই হবে ? দু’জনেই কি স্বমহিমায় আবার ফিরবেন রাজনীতিতে ? উত্তর লুকিয়ে সময়ের গর্ভে ৷
আরও পড়ুন : Partha-Arpita: লকআপে পার্থ-অর্পিতার গতিবিধির উপর সর্বক্ষণ নজর রাখছে দুটি সিসিটিভি ক্যামেরা !