কলকাতা, 29 জুলাই : পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) শনিবার গ্রেফতার হওয়ার পরেও দেখতে দেখতে প্রায় ছ’দিন অতিবাহিত । কিন্তু নিজের অবস্থান নিয়ে নীরব ছিলেন এই তৃণমূল নেতা । অবশেষে শুক্রবার নীরবতা ভাঙলেন পার্থ । বললেন, তিনি চক্রান্তের শিকার ।
আর তার এই বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে তরজা । তবে এই অবস্থাতেও পার্থর পাশে দাঁড়াচ্ছে না তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) । তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার, একথার জবাবে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (TMC Leader Kunal Ghosh) স্পষ্টভাষায় এদিন জানিয়েছেন, তিনি (পার্থ) যদি নির্দোষ হতেন তাহলে প্রথমেই বলতে পারতেন । এখন তিনি যে নির্দোষ তাকে আইনের মাধ্যমে প্রমাণ করে আসতে হবে । চক্রান্ত হলে, আইনি পথ খোলা আছে ।
একই সঙ্গে বিজেপির জাতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ (BJP Leader Dilip Ghosh) আবার পার্থর এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তৃণমূলকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি । তিনি বলেন, ‘‘পার্থবাবু স্পষ্ট করে বলুন, আজ তিনি যে চক্রান্তের কথা বলছেন সেই চক্রান্ত করছে কে ?’’
প্রসঙ্গত, এই মুহূর্তে রাজ্য রাজনীতিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের রীতিমতো আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছেন । গত শনিবার 27 ঘণ্টা জেরার পর গ্রেফতার হলেও প্রথমেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দলীয় পদ বা মন্ত্রিসভা থেকে সরাইনি তৃণমূল কংগ্রেস । কিন্তু পরবর্তীতে যত সময় গিয়েছে, দলের অন্দরে তাঁকে নিয়ে ক্ষোভ বেড়েছে ।
তৃণমূলের একাংশ দাবি করে, তিনি হাসপাতালে যাওয়ার সময় অনেক কথাই বলতে পারছেন ৷ কিন্তু তিনি যে নির্দোষ সেই কথাটা স্পষ্ট ভাষায় বলছেন না পার্থ চট্টোপাধ্যায় । আর তার এই নীরবতার কারণ এই অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে দলকে । দলের অন্দরের ক্ষোভের কারণে গতকাল প্রথমে মন্ত্রিত্ব থেকে পরে দলীয় সমস্ত পথ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেয় তৃণমূল কংগ্রেস । এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (TMC MP Abhishek Banerjee) স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, পার্থর জন্য দলে ফিরে আসার রাস্তা খোলা রয়েছে । তবে তাঁকে আদালতের রায়ে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে আসতে হবে । যেহেতু তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠছে জনমানসে ৷ তাঁর বান্ধবীর ফ্ল্যাট থেকে অর্থ উদ্ধার নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, সেই কারণে মানুষকে বেনিফিট অব ডাউট দিয়ে পার্থবাবুকে দল থেকে অপসারণ করা হচ্ছে ।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে অপসারণের 24 ঘণ্টার মধ্যেই আবার মুখ খুললেন পার্থ ৷ এবার তিনি দাবি করলেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার । খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তাঁর বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র করেছে কে ? এদিন বিজেপির তরফ থেকে সেই প্রশ্নটাই বড় করে তুলে ধরা হয়েছে । বিজেপির জাতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘এতদিন আমরা শুনেছি তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে কেন্দ্র । কখনও তারা বলেছে ষড়যন্ত্র করছে বিজেপি । এমনকি ইডি-সিবিআইয়ের চক্রান্ত বলা হত । কিন্তু তিনি একজন মন্ত্রী ছিলেন । তিনি তো আর পাঁচজনের মতো সাধারণ মানুষ নন । এক্ষেত্রে পার্থবাবু কার চক্রান্তের কথা বলছেন ? এটা তাঁরই দায়িত্ব স্পষ্টভাবে মানুষের কাছে তাঁর বক্তব্য নিয়ে আসা । মানুষ বিশ্বাস করে তাঁর কাছে টাকা দিয়েছিল । তাঁর উচিত মানুষের বিশ্বাস রেখে কারা চক্রান্ত করছে তা খুলে বলা ।’’
এদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায় এর চক্রান্তের তত্ত্ব নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণল ঘোষ । সংবাদ মাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘যদি কেউ নির্দোষ হন, সাধারণ প্রতিক্রিয়া হবে প্রথম সুযোগেই তিনি যে নির্দোষ, তা ব্যক্ত করার চেষ্টা করা । এটা হল স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া । গত কয়দিনের ঘটনাক্রম সকলেই দেখেছেন । আমাদের প্রতিক্রিয়াও সবাই দেখেছেন । আজকে কি বললেন তার উপর দাঁড়িয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না ।’’
তৃণমূলের মুখপাত্র আরও বলেন, ‘‘যদি তিনি মনে করেন তার সঙ্গে ষড়যন্ত্র হয়েছে, তা হলেও এ নিয়ে আমার কোনও মন্তব্য নেই । এই মুহূর্তে তার জন্য আইন এর দরজা খোলা রয়েছে । তিনি সেটা আইনের দরজায় লড়বেন । সেখানে নির্দোষ প্রমাণিত হলে কারও কিছু বলার থাকবে না ।’’
আরও পড়ুন : Arpita Mukherjee: আকুল কান্নায় ভেঙে পড়লেন অর্পিতা ! টেনে-হিঁচড়ে ঢোকানো হল হাসপাতালে