কলকাতা, 6 ডিসেম্বর : সুদীপ্ত সেন জেলে বসে চিঠি লিখলেন । সেই চিঠি কারা দপ্তরের সম্পত্তি । কীভাবে তা বেসরকারি সংস্থা প্রশান্ত কিশোরের হাতে চলে গেল? প্রশ্ন বিরোধীদের । এসবই শাসকদলের চক্রান্ত বলে মনে করছে বিরোধীরা ।
সারদা কাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত সুদীপ্ত সেন চলতি মাসের 1 তারিখে একটি চিঠি লেখেন । প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে নাকি সেই চিঠি লেখা হয় । চিঠিতে শার্ষ স্থানীয় বাম ও কংগ্রেস নেতাদের নাম উল্লেখ করা হয় বলে সূত্রের খবর । বলা হয়, সুদীপ্তর থেকে টাকা নিয়েছেন অধীর চৌধুরি, বিমান বসু, সুজন চক্রবর্তী, মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারীর মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব । তারপর থেকে রাজ্য-রাজনীতি তোলপাড় । যদিও বিরোধীদের দাবি, বিধানসভা নির্বাচনের আগে এসব তৃণমূল কংগ্রেসের চক্রান্ত । বিরোধী নেতাদের বক্তব্য, সংশোধনাগার থেকে যদি চিঠি পাঠানো হয়, তাহলে তা কারা দপ্তরের সম্পত্তি । সেই চিঠি প্রশান্ত কিশোরের হাতে কীভাবে এল? বিরোধীদের প্রশ্ন হঠাৎ করে এত বছর পর জেলে বসে কেন এমন চিঠি লিখতে গেলেন সুদীপ্ত সেন? কার মদতে এসব হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুজন চক্রবর্তী । তিনি বলেন, "সাত বছর ধরে সিবিআই, সিট তদন্ত করল । তখন কিছু হল না । আমরা লড়াই করেছি । তৃণমূল বিষয়টা আটকানোর চেষ্টা করেছে । এখন যারা বিরোধী, যাঁরা তৃণমূল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে ।" পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, সিপিআইএমের অস্তিত্ব নিয়ে একসময় প্রশ্ন তোলা হয়েছিল । অথচ তারাই এখন এত প্রাসঙ্গিক । তাঁর দাবি, "বাম-কংগ্রেসকে ভয় পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস । তাই এসব করছে ।"
আরও পড়ুন : টাকা নিয়েছেন অধীর-সুজন-বিমান? সুদীপ্তর চিঠিতে জল্পনা, চক্রান্তের গন্ধ বিরোধীদের
তৃণমূল কংগ্রেস তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করেছেন অধীর চৌধুরি । সুদীপ্ত সেনের চিঠি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "কোনও কাকতাড়ুয়া আইনজীবীর পাল্লায় পড়বেন না । আপনার ক্ষতি হবে । আমাদের কিছু যায় আসে না । আমার রাজনৈতিক জীবনে কোনওদিন শঠতা করিনি । সততার সঙ্গে রাজনীতি করি বলে দিদি, মোদির বিরুদ্ধে গলা তুলে কথা বলতে পারি । রাজনীতি করতে এসেছি, চৌর্যবৃত্তি করতে নয় ।" নিজেকে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী সাংসদ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তৃণমূল সরকার তাঁর ছোটো ছোটো ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছে । যাতে অভাবে তিনি শেষ হয়ে যান । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বহরমপুরের সাংসদ বলেন, "চেষ্টা করলেও অধীর চৌধুরির ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারবেন না । আপনার দল সারদাকাণ্ডে যুক্ত । আপনার নেতাদের সিবিআই গ্রেপ্তার করে ।" ভোটের ময়দানে তাঁদের সঙ্গে পাল্লা দিতে চ্যালেঞ্জ জানান অধীর ।
আরও পড়ুন : সুদীপ্ত সেনের বাকি জিনিস কোথায়? প্রশ্ন রাজীবকে
সিপিআইএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, "সুদীপ্ত সেন জেল থেকে চিঠি লিখলেন বিমান বসু, সুজন চক্রবর্তী, এবং অধীর চৌধুরিকে নিয়ে । তিনি চিঠিতে লিখলেন এঁরা টাকা নিয়েছেন । যে চিঠি জেলে বসে লিখলেন, তা তো কারা দপ্তরের সম্পত্তি । কীভাবে প্রশান্ত কিশোরের হাতে এবং সংবাদমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে গেল সেই চিঠি? এটাই আসলে দুর্নীতি । এর জবাব আগে তৃণমূল কংগ্রেসকে দিতে হবে ।" পাশাপাশি তিনি বলেন, "যাকে দলের মুখপাত্র করেছেন, তিনি দিনের পর দিন বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডাকাত রানি । সারদার থেকে সবচেয়ে লাভবান হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সামনে বিধানসভা নির্বাচন । তাই কংগ্রেসের আর বামফ্রন্টের গায়ে কাদা ছিটানোর জন্য ওই চিঠি কারা দপ্তরের হাত থেকে বেসরকারি সংস্থার হাতে চলে এল ।"
আরও পড়ুন : লোকসানে চলা চ্যানেল 6 কোটিতে কেন কিনলেন সুদীপ্ত ? শুভাপ্রসন্নকে প্রশ্ন ED-র
সারদাকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত সুদীপ্ত সেন বর্তমানে প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে রয়েছেন । সূত্রের খবর, এডিজি(কারা)-র দপ্তরে সুদীপ্ত সেনের নাম করে ওই চিঠি জমা হয়েছে । তবে সেই চিঠির সত্যতা বিচার করেনি ইটিভি ভারত । এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি কারা কর্তৃপক্ষ ।