কলকাতা, 2 জুলাই: শহর ও শহরতলীতে দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে 15 বছরের পুরনো বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত গাড়িগুলিকে বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাজ্য পরিবহণ দফতর । ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে সেই রকম বহু গাড়ি । পাবলিক ভেহিকেলস ডিপার্টমেন্টের তরফে এই ধরণের পুরনো গাড়ির মালিকদের নোটিশও পাঠানো হয়েছে । এর মধ্যে রয়েছে বহু হলুদ ট্যাক্সিও । ফলে স্বাভাবিকভাবেই শহরের রাস্তায় ইতিমধ্যেই দেখা দিতে শুরু করেছে হলুদ ট্যাক্সির অভাব (number of yellow taxis are decreasing in Kolkata)।
শহরকে দূষণমুক্ত রাখতে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের তরফে 15 বছরের পুরনো গাড়ি বাতিলের উপর জোর দেওয়া হয়েছে । তাই চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকেই বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা । যা চলবে আগামী বছর পর্যন্ত । এই সময়ের মধ্যে স্ক্র্যাপ বা কাটাই হয়ে যাবে হাজার হাজার বেসরকারি বাস, মিনিবাস, অটো, ট্যাক্সি-সহ বহু ব্যাক্তিগত গাড়িও । এমনিতেই 2018 সাল থেকে ভাড়া বাড়েনি হলুদ ট্যাক্সির, সঙ্গে দোসর হয়েছে জ্বালানির অগ্নিমূল্য । ফলে এমনিতেই ধুঁকছে ট্যাক্সি পরিবহণ ব্যবসা । এবার এই স্ক্র্যাপ আইনের জন্য ট্যাক্সি মালিকদের কপালে হাত । বিশেষ করে সেই সব ট্যাক্সি মালিকরা আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন যাঁদের শুধুমাত্র একটি বা দুটি ট্যাক্সি রয়েছে । এবং যেগুলির বয়স 15 বছরের বেশি ৷ তাই এবার সার্বিক বিষয়টি জানিয়ে বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে পরিবহনমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে হলুদ ট্যাক্সি চালক ও মালিকদের সমস্যার কথা জানিয়ে চিঠি দেওয়া হবে ।
পাবলিক ভেহিকেলস ডিপার্টমেন্টের থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে আগামী কয়েকমাসের মধ্যে প্রায় 1000 থেকে 2000 ট্যাক্সি বাতিল হয়ে যাবে । যদিও 2024 এর মধ্যে এই সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে । বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার বসু এই প্রসঙ্গে বলেন,"কেন্দ্রীয় সরকারের এই উদাসীনতার জন্য প্রতিনিয়ত জ্বালানি সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে চলেছে । পরিবহণমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে পুরো বিষয়টি জানানো হবে ।
পাশাপাশি সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরাও এটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি যাতে যাত্রী এবং ট্যাক্সি মালিক উভয়ের জন্য সুরাহার পথ মেলে । একটা কথা স্বীকার করতেই হবে যে অন্যান্য অ্যাপ ক্যাবের তুলনায় হলুদ ট্যাক্সি এখনও অনেকটাই সস্তা ৷ সাধারণ মানুষ তাই রাস্তায় নেবে আগে হলুদ ট্যাক্সির খোঁজই করেন । তবে যে সমস্ত ট্যাক্সি বাতিল হয়ে যাচ্ছে সেগুলির থেকে তাঁরা যা টাকা পাওয়া যাবে, বড়জোর 30 থেকে 40 হাজার টাকা তাতে নতুন একটি ট্যাক্সি কখনোই সেই মালিকদের পক্ষে পথে নামানো সম্ভব হবে না । সেই জন্য তাদের একটা আর্থিক সহায়তা বা কোনও বিকল্প উপায় সাহায্য করতে হবে । তবে আমরা আশাবাদী যে পরিবহনমন্ত্রী বর্তমান পরিস্থিতি বুঝে ট্যাক্সি চালকদের কথা মাথায় রেখেই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন ।"
আরও পড়ুন : বাতিল একাধিক লোকাল, জেনে নিন কবে কোন কোন ট্রেন বন্ধ থাকবে
এখন একটি ট্যাক্সি পথে নামতে গেলে খরচ পড়বে প্রায় 8 থেকে 9 লক্ষ টাকার কাছাকাছি । এমনই এক ট্যাক্সি মালিক সঞ্জীব রায় যাঁর 15 বছরের পুরনো ট্যাক্সি গত 29 জুনেই বাতিল হয়েছে তিনি বলেন, "আমার একটি ট্যাক্সি গত 29 জুন বাতিল হয়েছে । আমার এই গাড়িটি যে বাতিল হয়েছে শুধু তাই নয় এই গাড়ির সঙ্গে জড়িত ছিল যে মানুষগুলো তারাও আজ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন । দুজন চালক, একজন পরিষ্কার করার ব্যক্তি এবং যিনি আমার গাড়ির মেরামত করেন এঁরা সবাই কর্মহীন হয়ে পড়লেন । পাশাপাশি যাঁদের সুধু একটি গাড়ি তাঁদের তো রোজগারের পথই বন্ধ হয়ে যাবে । তাই সরকারের কাছে আমাদের আবেদন যে আমাদের সমস্যার প্রতি একটু সংবেদনশীল হয়ে একটি সুরাহার পথ বাৎলে দিক ।"