কলকাতা, 15 জুলাই: পেনচাক সিলাট একটি ইন্দোনেশিয়ার মার্শাল আর্ট (Indonesian Martial Arts Pencak Silat) ৷ আগামী 26-31 জুলাই মালয়েশিয়ায় আয়োজিত পেনচাক সিলাট ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের হয়ে অনেক প্রতিযোগী অংশ নেবেন মালেশিয়ায় ৷ তবে, সেখানে বাংলার কোনও প্রতিনিধি থাকছেন না (No One from Bengal in Indian team at Pencak Silat World Championship) ৷ কিন্তু, কেন থাকছেন না বাংলার প্রতিনিধিরা ? এর পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে ৷ যার মধ্যে অন্যতম, আর্থিক ও পরিকাঠামোগত সমস্যা ৷ যা বাংলার প্রতিযোগীদের কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যা ৷
‘পেনচাক সিলাট’ এই খেলার বিষয়ে বাংলার বহু ক্রীড়াপ্রেমী অজ্ঞ ৷ অথচ, পেনচাক সিলাট আন্তর্জাতিক অলিম্পিক্স ও জাতীয় স্তরের ক্রীড়া তালিকাভুক্ত ৷ যদিও, বেঙ্গল অলিম্পিক্সের তালিকাভুক্ত এখনও হয়নি ইন্দিনেশিয়ান এই মার্শাল আর্ট ৷ তবুও, বাংলার প্রায় এক হাজার ছেলে মেয়ে এই মার্শাল আর্ট নিয়মিত প্র্যাকটিস করছে ৷ তাঁদের অধিকাংশই সমাজের আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের থেকে উঠে আসা ৷ কিন্তু, করোনার কারণে তুলনামূলক ভালো খেলোয়াড়রা বসে গিয়েছেন আর্থিক এবং পারিবারিক কারণে ৷
একাধিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, গত মার্চে পঞ্জাবের লুধিয়ানায় জাতীয় স্তরের পেনচাক সিলাট প্রতিযোগিতায় বাংলা থেকে 16 জন প্রতিযোগী অংশ নেন ৷ কিন্তু, খেলার কৌশলগত দিক থেকে তাঁরা অভিজ্ঞ হলেও, প্রতিপক্ষের শারীরিক শক্তির কাছে পেরে ওঠেননি বাংলার প্রতিযোগীরা ৷ মাত্র একটি পদক জিতেই ফিরে আসেন তাঁরা ৷ আর এখানেই আক্ষেপ পেনচাক সিলাট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের ৷
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, গ্ল্যামারহীন এই খেলায় বস্তিবাসী, আর্থিক পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছেলেরা-মেয়েরা চেষ্টা করেও নানা কারণে পারছে না ৷ করোনার কারণে, অনেকেই ঘর থেকে বের হতে পারেননি ৷ করোনাকালে সংসার টানতে গিয়ে বাড়িতেও প্র্যাকটিস করতে পারেননি ৷ ছাদ বা খেলার মাঠও নেই অধিকাংশের ৷ অনেকে আবার খেলা ছেড়ে দিয়েছেন ৷ তার পরেও হাল ছাড়তে নারাজ পেনচাক সিলাট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল ৷ কলকাতা ছাড়াও দার্জিলিং, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, উত্তর 24 পরগনা, দক্ষিণ 24 পরগনা, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া ও বাঁকুড়াতে পেনচাক সিলাট মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ ও প্রসারের চেষ্টা করা হচ্ছে ৷ কলকাতায় প্রায় আড়াইশো জন ছেলেমেয়েকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে ৷
আরও পড়ুন: দেশ-বিদেশের স্পেশাল ফোর্সের মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষক বাংলার ঋদ্ধি
পেনচাক সিলাট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের সভাপতি তপন ঘোষ বলেন, ‘‘এই খেলার বিষয়ে বাংলার অধিকাংশ লোক জানেন না ৷ অথচ, কেন্দ্রীয় সরকারের স্পোর্টস কোটায় চাকরির সুযোগের তালিকায় পেনচাক সিলাট অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ৷ বেঙ্গল অলিম্পিক্সে এই খেলার অন্তর্ভুক্তির জন্য ইতিমধ্যে আবেদন করা হয়েছে ৷ স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা সাই এর স্বীকৃতি আমরা পেয়েছি ৷ এ বার প্রতিটি জেলায় ছেলে-মেয়েদের এর সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে ৷’’ তপনবাবু আক্ষেপের সঙ্গে জানান, ছেলেমেয়েরা জৌলুশহীন এই খেলার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখলেও, আর্থিক কারণে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে ৷ তাই পেনচাক সিলাট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল স্পনসরশিপের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানান সংস্থার সভাপতি ৷
মালেশিয়ায় আয়োজিত পেনচাক সিলাট প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করতে জম্মু-কাশ্মীর, হরিয়ানা, পঞ্জাব, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ থেকে খেলোয়াড়রা আগামী 22 জুলাই রওনা দেবেন ৷