কলকাতা, 7 জুলাই: স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড পেতে হলে আর বাবা-মাকে আয়ের শংসাপত্র দাখিল করতে হবে না (Student credit card)। এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার । বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ছাত্রছাত্রীদের স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড বিতরণের অনুষ্ঠানে এ কথা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata on Student credit card)।
এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় 8000 ছাত্রছাত্রীর হাতে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড তুলে দিলেন (No need to show income certificate of parents)। এই অনুষ্ঠানেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "কিছু কিছু জায়গায় ভ্রান্ত প্রচার চলছিল যে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড পেতে হলে দাখিল করতে হবে বাবা-মায়ের ইনকাম সার্টিফিকেট । আমরা গোটা বিষয়টি পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নিয়েছি । এখন থেকে আর স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের জন্য বাবা-মায়ের আয়কর শংসাপত্রের প্রয়োজন নেই ।"
জানা গিয়েছে, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের জন্য যে সব ব্যাঙ্ক ঋণ দিচ্ছে তারা রাজ্য সরকারকে জানিয়েছে, এমন বেশ কিছু আবেদন তাদের কাছে আসছে যাদের আয় সংক্রান্ত কোনও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না (Mamata Banerjee news)। আর সেখানেই ঋণ দেওয়ার বিষয়টি আটকে যাচ্ছে । কেননা ওই ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ওই সব ব্যাঙ্কের নিজস্ব নিয়ম সেক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে । কিছু কিছু ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার নিয়মাবলীও সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে । তাই এ বার থেকে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ঋণের জন্য আবেদন করতে হলে আয়ের নথি দেখানো বাধ্যতামূলক বলা হচ্ছিল । এ বার থেকে এই ঋণের জন্য আবেদনের সঙ্গে আবেদনকারীর অভিভাবকের আয়কর রিটার্ন নয়, সম্পত্তির তথ্য, পড়ুয়ার বয়সের নথি এবং শেষ পরীক্ষার মার্কশিট জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে ।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 13 হাজার ছাত্রছাত্রীকে প্রভেশনাল অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, 1 হাজার 293 কোটি টাকা ইতিমধ্যেই ঋণের জন্য খরচ হয়েছে । মমতার কথায়, পড়ুয়াদের ঋণ নেওয়ার জন্য অনেক ক্ষেত্রে অনেকে বলছেন -- বাবা-মায়ের শংসাপত্র দিতে বলা হচ্ছে । এটা সম্পূর্ণ বাজে কথা । এমন কোনও ধারা রাখা হয়নি । তুলে দেওয়া হয়েছে । তিনি বলেন, এখানে ভুল বোঝাবুঝির কোনও ব্যাপার নেই ।
আরও পড়ুন: মমতার প্রতি কুরুচিকর মন্তব্য দিলীপের ! রাজভবনে তৃণমূল
প্রসঙ্গত, পড়ুয়াদের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলি রাজি না হওয়ায় সমস্যা হচ্ছিল বলে একাধিক বার অভিযোগ ওঠে । এরপর মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী গোটা বিষয়টি নিজের হাতে নেন এবং ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন । এর ফলে বর্তমানে সমস্যা অনেকটাই মিটেছে বলে মনে করছে রাজ্য সরকার ।
এই মঞ্চ থেকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধের অভিযোগ তোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "100 দিনের কাজের টাকা 6 মাস ধরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । ইউজিসি-র টাকা বন্ধ করে দিয়েছে । 'বাংলার বাড়ি'-র টাকা বন্ধ করে দিয়েছে । আমি হঠাত্ করে দেখছি রাজনৈতিক কারণে আমাদের আর্থিকভাবে ব্লক করা হচ্ছে । তবুও আমরা বুদ্ধি করে 10 লক্ষ কাজ সৃষ্টি করেছি । 'জব ফেয়ার' করছি আমরা । 30 হাজার চাকরি হয়ে গিয়েছে । যে কোনওদিন আনুষ্ঠানিক ভাবে আমরা ওই চাকরিগুলি বণ্টন করে দেব ।"
একইসঙ্গে রাজ্যের নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, "বাংলার মেধা সবচেয়ে গর্বের মেধা । আগে বাংলার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সিবিএসই, আইসিএসই বোর্ডের নম্বরের তফাত্ থাকত । উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেত না । এখন 80-90 শতাংশ নম্বর পান । স্ট্যান্ডার্ড এক হয়ে গিয়েছে । বাংলার প্রাথমিক শিক্ষা সর্বশ্রেষ্ঠ । যাদবপুর ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষায় এক নম্বরে । বাংলার মেধা সবচেয়ে গর্বের । স্নাতক হলেই আমাদের ছেলেমেয়েরা বিদেশে পড়ার সুযোগ পান ।"
একই সঙ্গে পড়ুয়াদের উদ্দেশে মমতার অনুরোধ, "সবাই যদি তোমরা বিদেশে চলে যাও তাহলে দেশটা কে চালাবে ? রাজ্যটা কে চালাবে ? তোমরা যাও, কিন্তু বিদেশে পড়ে দেশে ফিরে এসো ।"