কলকাতা 2 জুন: নারদ মামলা ভিন রাজ্য সরানো হোক ৷ যেহেতু অভিযুক্তরা প্রভাবশালী ৷ গতকাল শুনানিতে প্রায় ঘণ্টা তিনেক ধরে এই প্রসঙ্গ তুলে ধরেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা । আজও দিনভর 17 মে গ্রেফতারের পর মুখ্যমন্ত্রীর ধর্না, নিম্ন আদালতে আইনমন্ত্রীর উপস্থিতি, প্রভাবশালী প্রসঙ্গ উল্লেখ করলেন সলিসিটর জেনারেল ।
আজকের শুনানিতে সলিসিটর জেনারেল বলেন, "17 মে চার হেভিওয়েটের গ্রেফতারির পরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তাতে সাধারণ মানুষের মনে হতেই পারে যে সেদিন ওই অবস্থায় নিম্ন আদালতে বিচারকের পক্ষে সুবিচার করা সম্ভব হয়নি ।" সলিসিটর জেনারেলের এই কথার পর বিচারপতি সৌমেন সেন বলেন, "মানুষের মনে কী ধারণা তৈরি হয়েছে তার জন্য কি আইন-কানুন ভুলে যেতে হবে ?" বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় সলিসিটর জেনারেলের উদ্দেশে বলেন, "আপনার সব অভিযোগ যদি সত্যি বলে ধরে নিই তাহলে প্রশ্ন ওঠে, এই সাধারণ মানুষ কে ? তার সংজ্ঞা কী ? তিনি কি শিক্ষিত ? তিনি কি রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ ? তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের সমর্থক ?"
বেঞ্চের আরেক বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন বলেন , "মনে করুন আদালতে একটি জামিনের মামলা চলছে । প্রচুর মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন । জামিন চাইছে । বিচারক কী করবেন ? জামিন না দিলে বিক্ষোভ বাড়তে পারে আবার জামিন দিলে আরও বেশি ক্ষতি হতে পারে । কী করা উচিত ? "
এরপর সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা বলেন, "বাংলায় এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটতে দেখা গেছে ৷" উত্তরে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "যা কিছু খারাপ তা শুধু বাংলাতেই ঘটে ! "
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একথা বলার পর বারের সদস্যরা বলাবলি করেন, সলিসিটর জেনারেল আবারও বাংলা বিরোধী মনোভাব ব্যক্ত করলেন । শুনানির দ্বিতীয়ার্ধে তুষার মেহেতা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের বিরোধিতা করেন । বলেন, "বাংলা হচ্ছে দেশের সংস্কৃতির পীঠস্থান । আমরা প্রত্যেকেই স্মরণ করি বাঙালিদের । স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো চিন্তাবিদরা এই বাংলারই ।" তিনি বলেন, "আমি যখন বলেছি, এই ধরনের ঘটনা বাংলাতেই ঘটছে বারবার, তার মানে এটা বাংলার জনগণ, বাংলার ভৌগোলিক সীমানার উদ্দেশ্যে বলা নয় ।" এরপর কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের বক্তব্য পেশ করার জন্য আদালতের অনুমতি চান ৷ জবাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সাফ জানান, এটা কোনও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম নয় ৷ তিনি তাঁর বক্তব্য অন্য কোথাও গিয়ে বলুন ।
আরও পড়ুন: ভিন রাজ্যে সরুক নারদা মামলা, হাইকোর্টে জোর সওয়াল সিবিআইয়ের
সলিসিটর জেনারেল আবারও বলেন, "17 মে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, অভব্য আচরণ করা হয়েছিল সিবিআই অফিসের সামনে । একজন যুক্তি বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের মনে হতেই পারে যে নিম্ন আদালতের বিচারপতির রায় প্রভাবিত হয়েছে !" এবার বিচারপতি সৌমেন সেন জানতে চান, "সিবিআই স্পেশাল আদালত এই চার অভিযুক্তের জামিন দিয়েছিল, না অন্তর্বর্তী জামিন দিয়েছিল ?" সলিসিটর জেনারেল বলেন, "অন্তর্বর্তী জামিন ।" বিচারপতি সৌমেন সেন বলেন, "তার মানে জামিনের আবেদনের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি নিম্ন আদালতের বিচারপতি করেননি ৷ তাঁর কাছে মামলার পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা ছিল ৷" বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন বলেন, "হলফনামায় আপনারা জানিয়েছেন যে আপনারা জামিনের তীব্র বিরোধিতা করেছেন । কিন্তু এখানে বলছেন যে আপনারা ভাল করে নিজেদের বক্তব্য পেশ করতে পারেননি । এই স্ববিরোধী অবস্থান কেন ?"
এরপরই আজকের মতো শুনানি শেষ হয় । আগামীকাল সকালে ফের শুনানি হবে ।