কলকাতা, 4 ফেব্রুয়ারি : গ্রেপ্তারের পর সংশোধনাগারে একাধিকবার কারারক্ষীর উপর হামলা চালিয়েছে সে ৷ এবার শুনানি চলাকালীন আদালত কক্ষে জুতো ছুড়ল IS জঙ্গি মহম্মদ মসিউদ্দিন ওরফে মুসা ৷ তার লক্ষ্য আইনজীবীরা ছিলেন না কি বিচারক, তা বোঝা যায়নি । তবে জুতো ছোড়ার আগে তাকে বলতে শোনা যায়, “আমার বিচার করার ক্ষমতা বিচারকের নেই । এই বিচার আমি মানি না ।"
বিচারক প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের এজলাসে আজ মামলার শুনানি শুরু হয় । প্রত্যক্ষদর্শী উপস্থিত আইনজীবীরা জানান, দুপুর সাড়ে বারোটায় মুসা কোর্ট লক আপ থেকে বলে, সে বিচারককে কিছু বলতে চায় । বিচারক অনুমতি দেন ৷ ভরা এজলাসে অন্য মামলার আইনজীবীরা সেসময়ে উপস্থিত ছিলেন । এরপরই নিজের বক্তব্য শেষ করে জুতো ছুড়ে মুসা ৷ ঘটনার পর বিচারক এজলাস ছেড়ে নেমে যান ৷
2016 সালের জুলাইয়ে CID-র হাতে গ্রেপ্তার হয় মুসা । প্রথমে তাকে রাখা হয়েছিল আলিপুর জেলে । 2017 সালের ডিসেম্বরে সে ঘটায় প্রথম বড় ঘটনা । চামচ ঘষে ছুরি বানিয়ে বন্দী গণনার সময় আচমকা ওয়ার্ডেন গোবিন্দকুমার দে'কে গলায় আঘাত করে । তার আগে সে পাথর দিয়ে মেরে ওই ওয়ার্ডেনের মাথা ফাটিয়ে দেয় । পরে চামচ ছুরি দিয়ে গোবিন্দবাবুর গলার নলি কাটার চেষ্টা করে । ঘটনায় গুরুতর আহত হন ওই ওয়ার্ডেন । সঠিক সময়ে অন্য কারারক্ষীরা এসে না পড়লে প্রাণহানি হতে পারত তাঁর ।
পরের ঘটনা গতমাসের । 4 জানুয়ারি জেলের কুঠুরি থেকে বের করে খোলা চত্বরে হাঁটাচলার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তাকে । হঠাৎই পাশে থাকা একটি কলের পাইপ ভেঙে নিয়ে কারারক্ষীর মাথায় আঘাত করে মুসা । ঘটনা প্রেসিডেন্সি জেলের । আপাতত সেখানেই রাখা হয়েছে ওই জঙ্গিকে । ঘটনায় কমল কর্মকার নামে ওই কারাকর্মী গুরুতর জখম হন । তাঁর মাথা ফেটে যায় ।
খাগড়াগড়কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করেছে CID । এমনিতেই জামাতুল মুজাহিদিন ইন্ডিয়া বা জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ আলকায়দাপন্থী । খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সময় জামাতুল মুজাহিদিনের সঙ্গেই জঙ্গি কাজকর্ম চালাত সে । পরে তাদের একটি দল তৈরি করে নব্য জামাত । তারা IS পন্থী । এই দলটি বিশ্বাস করে সংগঠন গড়ে ধীরে সুস্থে কোনও কাজ হবে না । যা করতে হবে এখনই করতে হবে । বাংলাদেশ নব্য জামাতের নাশকতা অনেকটাই বেশি । হলি আর্টিজান মামলায় দায়ি ছিল এই জঙ্গি সংগঠন । এই সংগঠনে যেমন নাম লিখেছিল হাত কাটা নাসিরুল্লাহ, তেমনভাবেই তাদের সঙ্গে ছিল মুসা । বাংলাদেশ পুলিশের অ্যান্টি ক্রাইম এবং অ্যান্টি টেরোরিজ়ম ইউনিট RAB (ব়্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন) মনে করে, মুসা কোনওকালেই জামাতুল মুজাহিদিনের লোক ছিল না । আগাগোড়াই সে কাজ করত ভারতের মাটিতে বসে । সেই সূত্রে মনে করা হয় নব্য জামাত তৈরির মূল মাথাদের অন্যতম এই মুসা । এহেন মুসাকে গ্রেপ্তারের পর প্রচুর তথ্য পান গোয়েন্দারা । জানা যায়, দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বীরভূমের কীর্ণাহারের বাড়ির কাছে এক বিত্তশালী পরিবারকে সপরিবারে হত্যার ছক কষেছিল সে ।
মুসাকে আজ তোলা হয় ব্যাঙ্কশাল আদালতে । আদালত কক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী শ্যামল ঘোষ । তিনি বলেন, “হঠাৎই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মুসা । চিৎকার করে বিচার ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থার কথা জানাতে থাকে । বলে বিচার মানি না । মানি শুধু আল্লাহর পথ । শরিয়ত আইন । আমার বিচার করার ক্ষমতা শুধু আল্লাহর আছে । তারপরই জুতো ছুড়ে মারে।" এই ঘটনার পর বাড়ানো হয়েছে ব্যাঙ্কশাল আদালতের নিরাপত্তা ।