কলকাতা, 28 জুন: 'একটা অদ্ভুত শব্দ। /নদীর জল মচকাফুলের পাপড়ির মতো লাল। / আগুন জ্বললো আবার— উষ্ণ লাল হরিণের মাংস তৈরি হ’য়ে এলো। / নক্ষত্রের নিচে ঘাসের বিছানায় ব’সে অনেক পুরানো শিশিরভেজা গল্প; / সিগারেটের ধোঁয়া;/ টেরিকাটা কয়েকটা মহিষের মাথা;/ এলোমেলো কয়েকটা বন্দুক— হিম– নিঃস্পন্দ নিরপরাধ ঘুম...'
জীবনানন্দ দাসের এই কবিতা এখানে এলে যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় । ভয়ংকর সুন্দরের টানে দীর্ঘদিন বর্ধমান এবং তার আশপাশের মানুষ এই ওড়গ্রামে আসত । পিকনিকের জন্য তা ছিল পরিচিত নাম । এ বার সেই জনপ্রিয় ক্ষেত্রটি উঠে আসছে বাংলার পর্যটন মানচিত্রে । সৌজন্য অবশ্যই পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর । পূর্ব বর্ধমানের ভাতারে গ্রামীণ ইকো সার্কিট টুরিজম তৈরি করছে রাজ্য । মূল উদ্দেশ্য অবশ্যই উন্নয়ন মানচিত্রে এই এলাকাকে সামনের সারিতে তুলে আনা । একই সঙ্গে গ্রামীণ মানুষদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করা ।
পঞ্চায়েত মন্ত্রী পুলক রায় জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এটি । গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এমনিতেই হোম স্টে-সহ পর্যটনের পরিকাঠামো গড়ে তোলার উপর জোর দিচ্ছে রাজ্য সরকার । এতে একদিকে যেমন নতুন নতুন পর্যটন ক্ষেত্র উন্মোচিত হবে, একইসঙ্গে গ্রামীণ মানুষদের একটা অংশকে এই শিল্পে যুক্ত করে কর্মসংস্থানের দিশা দেওয়া যাবে (Mamata Banerjee in Durgapur)।
এমনিতেই ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য শান্তিনিকেতন খুবই পছন্দের জায়গা । সেই শান্তিনিকেতনে যাওয়ার পথে প্রকৃতির সৌন্দর্য দিয়ে সাজানো এই ওড়গ্রাম । এখানে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে থাকার জন্য কটেজ তৈরি করা হয়েছে । এখানে রাত্রিবাস করলে পর্যটকরা একদিকে যেমন জঙ্গলের রোমাঞ্চ উপভোগ করতে পারবেন, তেমনই স্বাদ নিতে পারবেন বন্য জীবনের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার । মন্ত্রীর কথায়, এখানে তিনটি কটেজ তৈরি করা হয়েছে । এছাড়া আরও তিনটি কটেজ তৈরির কাজ চলছে । মূলত এখানে একটি বিশাল জলাশয় রয়েছে সেই জলাশয়কে কেন্দ্র করে একটি ইকো পার্ক তৈরি করেছে পঞ্চায়েত দফতর । পঞ্চায়েত দফতরের আওতায় থাকা ওয়েস্ট বেঙ্গল কম্প্রিহেনসিভ এরিয়া ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন সামগ্রিক ভাবে এই কাজ করেছে । আগামিকাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গাপুর থেকে এই ইকো সার্কিট ট্যুরিজম প্রকল্পটির উদ্বোধন করবেন (Mamata Banerjee to inaugurate Orgram Eco Circuit Tourism)।
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: তিনদিনের সফরে সোমবার বর্ধমানে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী, প্রস্তুতি পরিদর্শনে জেলাশাসক
ওয়েস্ট বেঙ্গল কম্প্রিহেনসিভ এরিয়া ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন 2016 সাল থেকে এই প্রকল্পের উপরে কাজ করছে । সামগ্রিক ভাবে একানব্বই একরের উপর সিএডিসির তরফ থেকে এখানে বন্যজীবন ও বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য গাছের সংরক্ষণ করা হয়েছে । এই ফার্মে যেমন রয়েছে কড়কনাথ মুরগি, টার্কি মুরগি, ব্ল্যাক বেঙ্গল গোট । একই ভাবে সেখানে আছে আলফানসো আমের বাগান । এখানে যাওয়া পর্যটকদের জন্য রান্নাবান্না-সহ অন্যান্য যাবতীয় পরিষেবা দিতে প্রস্তুত থাকবেন ওরগ্রাম সমন্বয় প্রকল্পে সংযুক্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা । একইসঙ্গে পাওয়া যাবে এখানে থাকা জৈব সবজি, মাছ ও মাংসের স্বাদ ।
মূলত এই প্রকল্প প্রয়াত পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত । শান্তিনিকেতন যাওয়ার পথে এই বনাঞ্চলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন প্রাক্তন পঞ্চায়েত মন্ত্রী । তাঁর নির্দেশেই 2016 সাল থেকে এই ইকো সার্কিট ট্যুরিজম প্রকল্প শুরু হয় । যা এই মুহূর্তে উদ্বোধনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে । দফতরের এক কর্তার কথায়, যেহেতু এটি শান্তিনিকেতনের যাত্রাপথেই রয়েছে । তাই এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা চাইলে একইসঙ্গে ভালকিমাচান, রানডিহা ব্যারেজ ও 108 শিব মন্দির দর্শনের আনন্দলাভ করতে পারেন । এর সঙ্গে শান্তিনিকেতন তো রয়েছেই । এছাড়া এই অঞ্চলের একটা দীর্ঘ দিনের ইতিহাস রয়েছে । এখানে ব্রিটিশ আমলের একটি এরোড্রোমের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে । এখানে এলে সেটিরও স্বাদ নিতে পারবেন পর্যটকেরা ।