কলকাতা, 15 ডিসেম্বর : বুধবার থেকে কলকাতার পৌরভোটের প্রচারে নামলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এদিন উত্তর কলকাতার প্রচারে নেমে দলের প্রার্থীদের সতর্কবার্তা দিলেন তিনি (Mamata Banerjee sents a strong message to TMCs would be councilor) । তাঁর স্পষ্ট বার্তা, রাস্তাঘাট, জল, আলো-সাধারণ মানুষের এই সমস্যা দেখার দায়িত্ব কাউন্সিলরের । কারও বিপদ হলে কাউন্সিলরকে সবার আগে ছুটে যেতে হবে । যাঁরা দেখতে পারবেন না, তাঁদের কাউন্সিলর হওয়ার দরকার নেই ।
এদিন পৌরভোটের প্রচারে মমতার বক্তব্যের একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল দলীয় কাউন্সিলরদের জন্য শৃঙ্খলা নিয়ে বার্তা । বিভিন্ন নির্বাচনে বিজেপি থেকে শুরু করে বাম, তৃণমূলের তোলাবাজি সিন্ডিকেট রাজের অভিযোগ নিয়ে সরব হয়েছে । এদিন এর বিরুদ্ধে বার্তা দিলেন মমতা ।
নির্বাচনের আগেই দলের হবু কাউন্সিলরদের তৃণমূল সুপ্রিমোর বার্তা, ‘‘কেউ এলাকায় বাড়ি করলে জিনিসপত্র কাউন্সিলরের বলে দেওয়া জায়গা থেকে নিতে হবে, এমনটা চলবে না । বাড়ির প্ল্যান পাস করাতে গিয়ে আপনাকে টাকা দিতে হবে, তাও আর শুনব না । এবার থেকে প্ল্যানের ছাড়পত্র সবকিছুই অনলাইনে হবে । আবেদনের সাতদিনের মধ্যেই মিলবে ছাড়পত্র ।’’
এদিন মমতা বলেন, ‘‘এখন কলকাতায় এলে মানুষ বলে কী ছিল আর কলকাতায় এখন কী হয়েছে । প্রচুর উন্নয়নের কাজ করেছি আমরা । আরও কাজ করতে হবে । তবে আগামী দিনে আমার প্রায়োরিটি হল শিল্প আর কর্মসংস্থান । রাজ্যের শিল্প করে দেখিয়ে দেব আমরা ।’’
পৌরভোটের প্রচারে বিরোধীদের একটা বড় অস্ত্র পানীয় জল আর নিকাশি নিয়ে অভিযোগ । বিশেষ করে বৃষ্টির জলে শহরবাসীর ভোগান্তি নিয়ে সরব হয়েছে সব বিরোধী পক্ষই । এই অবস্থায় ভোট প্রচারে এই বিষয়গুলিকেও ছুঁয়ে গিয়েছেন মমতা । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘কলকাতার মানুষ বিনামূল্য জল পান । এখানকার নিকাশি ব্যবস্থা অনেক উন্নত । আলো দিয়ে গোটা কলকাতাকে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে । আগামী দিনে আরও কাজ করা হবে ।’’
এদিন শহর কলকাতার পৌর পরিষেবার প্রশংসা করতে গিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘‘আমরা কোনও কাজ ফেলে রাখি না । দুঃস্বপ্নের নয়, কলকাতা এখন স্বপ্নের শহর । যে বাইরে থেকে আসে সেই দরাজ সার্টিফিকেট দিয়ে যায় শহরকে ।’’ একই সঙ্গে তিনি যোগ করেছেন, ‘‘বেঙ্গালুরু-মুম্বই-দিল্লি-চেন্নাই যেখানেই যান না কেন, এত ভাল সাজানো শহর আর পাবেন না । 260 কোটি টাকা খরচ করে টালা ব্রিজ করা হচ্ছে । এছাড়া মেয়েদের জন্য সবথেকে নিরাপদ শহর কলকাতা ।’’
লক্ষ্যণীয়ভাবে ভোটের প্রচারে এদিন বিরোধীদের প্রসঙ্গ ছিল প্রায় উহ্য । বরং উন্নততর কলকাতার লক্ষ্যে এই সরকার কি করতে চাইছে সেকথাও তুলে ধরেছেন তিনি । একইসঙ্গে পুরভোটের আগে হবু কাউন্সিলরদের মানুষের কাজে কোনও আপস নয় এমন বার্তা দিতে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি ।
এবার পৌরভোটের অনেকেই টিকিট পাননি । সে প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এদিন মমতা 73 নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর রতন মালাকারের কথা টেনে আনেন । এদিন তাঁর প্রসঙ্গে নাম না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার 73 নম্বর ওয়ার্ড । কিছুদিন আগে যাচ্ছিলাম । হঠাত্ কয়েকজন লোক আমার গাড়ি দাঁড় করিয়ে জানান, কলের পাইপ খারাপ হয়ে গিয়েছে । কবে থেকে বলছি কাজ হচ্ছে না । আমি তখন কাউন্সিলরকে ফোন করলাম । বললাম, কী রে তোকে বলছে পাইপ সারিয়ে দিতে । পাইপটাও কি আমি সারিয়ে দেব ? তাহলে তুমি কাউন্সিলর থাকবে কেন ? এবার আর টিকিট দিইনি ।’’ এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, এই 73 নম্বর ওয়ার্ডে বিদায়ী কাউন্সিলর রতন মালাকার টিকিট না পেয়ে নির্দল হিসেবে প্রার্থী হয়েছিলেন ৷ পরে নাম প্রত্যাহার করেন ৷ এই কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন মমতার ভ্রাতৃবধূ কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
আরও পড়ুন : KMC Election 2021 : 5 বছর কাজ করেছেন, এবার ফলের আশায় 13নং ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী
এর পর মমতা বলেন, ‘‘সাংসদ, বিধায়করা স্থানীয় কাজ করতে পারেন না । সেই কাজগুলো করতে হবে কাউন্সিলরদের । আপনার এলাকায় জল নেই, রাস্তা নেই, আলো খারাপ । আমার পক্ষে দেখা সম্ভব নয় । এটা দেখার কাজ কাউন্সিলরদের । যে দেখতে পারবেন না, কাউন্সিলর হবেন না । এইটুকু কাজ কিন্তু করতে হবে । কাউন্সিলরদের যা দায়িত্ব থাকে, তা করতেই হবে ।’’