কলকাতা, 27 মার্চ : লক ডাউনের মাঝেই রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ আজ নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রীর সাধারণ মানুষের উদ্দেশে বার্তা, ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন না ৷ নিজের মতো করে বিষয়টা দেখুন ৷ কোরোনার মতো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সুবিধা হবে ৷ যারা গুজব রটাচ্ছেন তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার কড়া পদক্ষেপ নেবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী ৷
দেশজুড়ে লকডাউন চলছে ৷ তারমধ্যেই নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ বৈঠকের শুরুতে আজ তিনি বলেন, ‘‘কোরোনা ভাইরাসকে আটকাতে যেমন পুলিশকে কড়া হতে হবে ৷ আবার অন্যদিকে মানবিক হতে হবে ৷ নিত্য প্রয়োজনীয় থেকে জরুরি পরিষেবার ক্ষেত্রে মানুষকে ছেড়ে দিতে হবে ৷ যারা স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের ক্ষেত্রে মানবিক হতে হবে ৷ ক্ষমতার অপব্যবহার যেন না হয় ৷’’ কোরোনা নিয়ে গুজব না রটানোর নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র ৷ অথচ সোশাল মিডিয়ায় এই সংক্রান্ত গুজবে ভরে গিয়েছে ৷ যারা গুজব রটাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী ৷ পাশাপাশি তিনি হাতজোড় করে অনুরোধ করেন, ‘‘আগুন নিয়ে খেলবেন না ৷ যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের নিয়ে মস্করা করার সময় এটা নয় ৷’’
লক ডাউনের জেরে তিনদিন বন্ধ ছিল পোস্তা বাজার ৷ গতকাল পোস্তা চেম্বার অফ কমার্সের সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা ৷ সেই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘বাজারে যারা কাজ করবেন, তাঁদের জন্য স্থানীয় ধর্মশালায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ পোস্তা চেম্বার অফ কমার্স তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করবে ৷’’ ফুটপাথবাসী থেকে ভবঘুরেদের জন্য ইতিমধ্যেই নাইট শেল্টারের ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার ৷ মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ করেন, ‘‘রাস্তায় কেউ থাকবেন না ৷ এতে রাস্তাও নোংরা হয় ৷ একশো দিনের কাজে কর্মীরা আসতে না পারায় পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখায় সমস্যা হচ্ছে ৷’’ যারা এই পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছায় সেবামূলক কাজ করতে চান, তাঁরা রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করতে পারবেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী ৷
স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে রাজ্যবাসীকে লক ডাউনের সময় ঘরেই থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ সেক্ষেত্রে রাজ্যবাসীর থেকে সহযোগিতা মিলেছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী ৷ পাশাপাশি কোরোনার মতো ভাইরাস মোকাবিলায় বিভিন্ন ধর্মীয় স্থান যেভাবে পদক্ষেপ করেছে, তার প্রশংসা করেন তিনি ৷ নভেল কোরোনা যেভাবে গতি বাড়াচ্ছে, তাতে স্বাস্থ্য পরিষেবা যে কোনও সময়ে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে ৷ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে স্বাস্থ্য পরিষেবাকে ৷ এর জন্য অর্থের প্রয়োজন ৷ তাই মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দানের জন্য আবেদন জানিয়েছেন মমতা ৷ তিনি বলেন, ‘‘কোনও জোরাজুরি নেই ৷ কেউ ভালোবেসে ত্রাণ তহবিলে দান করতে চাইলে করতে পারেন ৷ এটা আয়কর ছাড়ের বাইরে ৷’’ রাজ্যে কোরোনার সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনিক আধিকারিক ও পুলিশ আধিকারিকরা বৈঠক করছেন ঘন ঘন ৷ পাঁচ হাজার থার্মাল গান এসেছে রাজ্য সরকারের হাতে ৷ হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার তৈরি করছে রাজ্যের বিভিন্ন কারখানা ৷ সেখান থেকে স্যানিটাইজ়ার দ্রুত বাজারে এসে যাবে বলে আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী ৷
লকডাউনের জেরে পরিবহণ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায়, বিভিন্ন রাজ্যে আটকে পড়েছেন বাংলার বহু শ্রমিক ৷ সেইসব 18টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে গতকালই চিঠি পাঠিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ যাদের চিঠি পাঠানো হয়েছে, সেইসব রাজ্য ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করেছে এবং আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছে খাবার ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য পৌঁছে যাচ্ছে বলে তিনি জানান ৷
কেন্দ্রীয় সরকার 14 এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করেছে ৷ রাজ্য সরকার প্রথমে 31 মার্চ পর্যন্ত লকডাউনের ঘোষণা করেছিল ৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ বলেন, ‘‘30 মার্চ একটি রিভিউ মিটিং করবে রাজ্য সরকার ৷ তারপর লাকডাউনের সময়সীমা বাড়ানো নিয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে ৷’’