কলকাতা, 9 অক্টোবর: শরীর ভেঙেছে, তৃণমূল কংগ্রেসের চাণক্য মুকুল রায়কে (Mukul Roy) ভোগাচ্ছে বার্ধক্যজনিত সমস্যাও । তাই পুরনো দলে ফিরলেও ইদানিং স্বমহিমায় তাঁকে দেখা যাচ্ছে না । জল্পনা শুরু হয়েছিল, শুধুই কি শারীরিক অসুস্থতা ? নাকি গেরুয়া শিবির ঘুরে আসা রায় সাহেবের উপর দলের আগের মতো আস্থা নেই ! ঠিক তখনই এল টুইস্ট ।
দ্বাদশীতে কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) বিজয়ার প্রণাম করতে যাওয়ার পর থেকেই আবার ঘাসফুলের রাজনীতিতে অন্য মুকুলের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে । কথায় বলে পুরনো চাল ভাতে বাড়ে । এই প্রবাদকে সামনে রেখেই একদা মমতার আস্থাভাজন এই নেতাকে আবার সাংগঠনিক কাজে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিলেন তৃণমূল নেত্রী । যদিও মুকুল রায় বা কালীঘাট, কোনও পক্ষ থেকেই এই বিষয়ে প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি । তবে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরের তথ্য বলছে, দিদি চান পুরনো মেজাজেই আবার দলের মধ্যে বিচরণ করুক মুকুল ।
এদিন কালীঘাট থেকে বের হওয়ার পর মুকুল রায়ের সল্টলেকের বাড়িতে আসেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক । দেখা করে যান রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও । যদিও সকলেই এই সাক্ষাৎকে বিজয়ার সৌজন্য সাক্ষাৎ হিসেবেই উল্লেখ করছেন । কিন্তু সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেকটি অংশকে হাতের তালুর মতো চেনা মুকুল রায়কে আসন্ন পঞ্চায়েতের আগে সাংগঠনিক কাজে ব্যবহার করতে চাইছেন তৃণমূল সুপ্রিমো । মূলত সেই লক্ষ্যেই তিনি তাঁকে বেশ কিছু নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে ।
আরও পড়ুন: 'আমি এখনও মরে যাইনি !' তৃণমূল ভবনে 'ফিরে' বললেন মুকুল রায়
আপাতত দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় চিকিৎসার কারণে বিদেশে রয়েছেন । এই অবস্থায় দলের মধ্যে আবার মুকুলের সক্রিয় হওয়া যথেষ্টভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহালমহল । যারা তৃণমূল কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি জানেন, তাঁরা ভালোমতোই বোঝেন, মুকুল রায়ের ঘর ওয়াপসির পর যে পার্থ ভৌমিক, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকেরা এই প্রবীন রাজনীতিকের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন, কোন জাদুমন্ত্রে তাঁরা আজ আবার একত্রিত হলেন ।
আসলে সাংগঠনিকভাবে মুকুল রায় যেভাবে দলকে পরিচালনা করতেন, অনেকটা সময় গেলেও সেভাবে কেউই সংগঠন সামলানোয় সাফল্য পাননি । এই মুহূর্তে দল অনেকটাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সমীক্ষা নির্ভর । কিন্তু দলের উপর সাংগঠনিক দখলদারিতে আজও মুকুল রায়ের ধারেকাছে তৃণমূল কংগ্রেসের অনেক নেতাই নেই । সেখানেই মুকুল রায়ের গুরুত্ব । এখন পার্থ চট্টোপাধ্যায় বা অনুব্রত মণ্ডলের জেল যাত্রার পর যেভাবে তৃণমূল কংগ্রেস কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাতে প্রয়োজন মুকুল রায়ের মতো একজন দক্ষ সাংগঠনিক ব্যক্তির । এখন দেখার, দলনেত্রী আবার মুকুলকে তাঁর পুরনো ক্রাইসিস ম্যানেজারের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেন কি না । আর তা যদি ফিরিয়ে দেন তাহলে মুকুল তাঁর পুরনো সাফল্যের কাছে পৌঁছতে পারেন কি না সেটাও দেখার ।