কলকাতা, 27 মে: রাজ্যে বাড়ছে কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা । এই মুহূর্তে মোট আক্রান্তের সংখ্যা 4009 । সক্রিয় রোগীর সংখ্যা 2240 জন । মৃত্যু হয়েছে 211 জনের । এর মাঝে আজ থেকে 206 টি শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে ফিরবেন পরিযায়ী শ্রমিকরা । রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পরিযায়ী শ্রমিকদের আক্রান্ত হওয়ার খবর আসছে । এই পরিস্থিতিতে কীভাবে পুরো বিষয়টি সামলানো হবে তা নিয়ে আজ ভিডিয়ো কনফারেন্স করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী । রাজ্যের বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার, জেলাশাসক, পুলিশ কমিশনার, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে এবিষয়ে বৈঠক করবেন তিনি । নবান্ন সূত্রে এমন খবরই পাওয়া গেছে।
আমফানের জেরে ভেঙে যায় গত প্রায় দু'মাস ধরে তৈরি করা সিস্টেম । পুলিশ-প্রশাসন লকডাউনের থেকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয় বিপর্যয় মোকাবিলায় । এরই মাঝে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিছু নিয়ম শিথিল করার । খোলা হচ্ছে সব ধরনের দোকান । শুধুমাত্র বন্ধ রাখা হয়েছে রেস্তরাঁ, বার, পাব । কিন্তু বাস্তব বলছে পরিস্থিতি খুব একটা সুখের নয় । কলকাতায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা 1753 জন। গতকাল নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন 58 জন । শুধুমাত্র কলকাতাতেই কোরোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে 134 জনের । এখন সক্রিয় রোগীর সংখ্যা 852 । বাঁকুড়ার মতো জেলায় ইতিমধ্যেই মোট 14 জন রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে । যার মধ্যে 13 জন সক্রিয় রোগী । অথচ এই জেলা কয়েকদিন আগে পর্যন্ত গ্রিন জেলা হিসেবে চিহ্নিত ছিল। গতকাল, রাজ্যে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন 193 জন রোগী । মাঝের সময়টাতে একদিনে মোট আক্রান্তের সংখ্যা 200 ছাড়িয়েছিল । এর মাঝে ঘরে ফিরছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা । রোজ অন্তত 10 থেকে 15 টি করে ট্রেন রাজ্যে আসবে । সঙ্গে সড়কপথেও আসছেন ভিনরাজ্যে আটকে পড়া মানুষ এবং শ্রমিকরা । অধিক সংক্রমিত রাজ্যগুলি থেকে প্রবাসীরাও ঘরে ফিরছেন । এই পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য নিয়ে রীতিমতো শংকিত রাজ্য সরকার ।
নবান্নের আশঙ্কা, এতে রাজ্যে সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে অনেকটাই । হিসেব বলছে, এক একটি ট্রেনে ফিরছেন প্রায় 1200 পরিযায়ী শ্রমিক। অর্থাৎ আগামী দিনে যে 206 টি ট্রেন আসতে চলেছে তাতে ঘরে ফিরতে চলেছেন প্রায় 2 লাখ 47 হাজার 200 শ্রমিক । সঙ্গে সড়কপথেও ফিরছেন প্রচুর মানুষ । নবান্নের হিসেব প্রায় 5 লাখ মানুষ রেল এবং সড়কপথে রাজ্যে ফিরছেন । এরপর 28 তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে ডোমেস্টিক বিমান চলাচল । সেই বিমানে প্রবাসী বাঙালি এবং ভিনরাজ্যে আটকে পড়া এই রাজ্যের বহু মানুষ ফিরবেন । এছাড়াও বিদেশ থেকেও ফিরবেন অনেক মানুষ ।
এত মানুষের জন্য সরকারি কোয়ারানটিনের ব্যবস্থা করা সম্ভব নয় । আর তাই রাজ্য সরকার ঠিক করেছে, ট্রেন এবং বাস বা অন্য যানবাহনে রাজ্যে প্রবেশ করার পর প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় যদি দেখা যায় কোনও উপসর্গ নেই তবে তাঁকে সরাসরি বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হবে । সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মানতে হবে হোম আইসোলেশন । যাঁদের অল্পস্বল্প উপসর্গ আছে তাঁদেরও হোম কোয়ারানটিনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে । একমাত্র যাঁদের উপসর্গ গুরুতর তাঁদের সোয়াব পরীক্ষা হবে । সেই পরীক্ষার রিপোর্ট যদি পজ়িটিভ আসে তবেই তাঁদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা ব্যবস্থা করা হবে । যাঁরা বিদেশ থেকে ফিরছেন তাঁদের 7 দিনের জন্য নিজের খরচায় হোটেলে কোয়ারানটিনে থাকতে হবে । তারপর তাঁদের শরীরে যদি লক্ষণ না দেখা যায় তখন 7 দিনের জন্য হোম আইসোলেশনে থাকতে হবে । ভিনরাজ্য কিংবা বিদেশ থেকে ফেরা মানুষদের হোম কোয়ারানটিনের সময় সামাজিক দূরত্বের বিধি কড়াভাবে মানতে হবে । এই পুরো বিষয়টি নিয়ে আজ ভিডিয়ো কনফারেন্সে কথা হতে পারে বলে নবান্ন সূত্রে খবর । এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী দিতে পারেন নতুন কোনও নির্দেশিকা ।