কলকাতা, 21 সেপ্টেম্বর: শুধুমাত্র রাজনীতির স্বার্থে ভারতের ইতিহাস (History of India) বদলে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে ! তাই এই মুহূর্তে ইতিহাসকে সংরক্ষণ করা সবথেকে জরুরি ৷ আমরা সেটাই করছি ৷ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে দেশের প্রকৃত ইতিহাস, স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রকৃত ইতিহাস, জানতে না পারে, তার জন্যই ইতিহাস, ভূগোল সবকিছু বদলে দেওয়া হচ্ছে ৷ বুধবার আলিপুর সংশোধনাগারে (Alipore Central Correctional Home) সংশ্লিষ্ট সংগ্রহশালার (Alipore Museum) উদ্বোধন করতে এসে একথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Mamata Banerjee) ৷ ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, নাম না করে এখানে কেন্দ্রীয় সরকার তথা গেরুয়া শিবিরকেই নিশানা করেছেন তিনি ৷
এদিনের অনুষ্ঠানে মমতা সরাসরি বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কথা তুলে ধরে কোনও দল বা ব্যক্তিকে নিশানা করেননি ৷ বরং, নানাভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে অখণ্ড ভারতের আদর্শ গঠনে বাংলা তথা বাঙালির অবদান অনস্বীকার্য ৷ আর সেটা করতে গিয়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু থেকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সকলের কথাই উল্লেখ করেছেন মমতা ৷ প্রসঙ্গত, ইদানীং বিজেপি-এর মুখেই সবথেকে বেশি 'অখণ্ড ভারত' শব্দ দু'টি শোনা যায় !
আরও পড়ুন: স্থগিত মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফর, কটাক্ষ বিরোধীদের
এদিন ভাষণের শুরুতেই মমতা বলেন, বাংলা না থাকলে নবজাগরণ হত না ৷ বাংলা না থাকলে স্বাধীনতা আন্দোলন হত না ৷ ইতিহাস বলছে, বাঙালিই যে তাদের অন্যতম বড় বিপদ, তা ইংরেজও ভালোই বুঝেছিল ৷ সেই কারণেই বাংলার বিরুদ্ধে বিভাজনের নীতি অবলম্বন করা হয় ৷ বঙ্গভঙ্গের সেই জ্বালা আজও বাঙালি ভোলেনি ৷ মমতা সরাসরি সেই প্রসঙ্গে না ঢুকলেও আজও যে কিছু রাজনৈতিক শক্তি বিভাজনের খেলা খেলছে, তা স্পষ্ট করে দেন ৷ আর এখানেই আসে মহাত্মা গান্ধি এবং কবিগুরুর প্রসঙ্গ ৷
মমতা মনে করিয়ে দেন, গান্ধি বিভাজনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন ৷ উল্লেখ্য, বাংলা ও বাঙালিকে মনে-প্রাণে একজোট রাখতে রাখীবন্ধন পালন করেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ৷ তাঁর কথা বলতে গিয়ে মমতা বলেন, শুধুমাত্র গান লিখেই সমগ্র দেশে অখণ্ড ভারতের মহান আদর্শ প্রজ্জ্বলিত করেছিলেন বিশ্বকবি ৷ তিনি লিখেছিলেন, "পঞ্জাব সিন্ধু গুজরাত মারাঠা, দ্রাবিড় উৎকল বঙ্গ ৷" মমতা এদিন ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের এই অংশটুকু নিজের মুখে উল্লেখ করেন ৷ প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগেই বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশে স্কুলের পাঠ্য বইয়ে প্রকাশিত জাতীয় সঙ্গীত থেকে 'উৎকল বঙ্গ' শব্দ দু'টি স্রেফ উবে গিয়েছিল ! তা নিয়ে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট জলঘোলা হয়েছে ৷
এই প্রেক্ষাপটে মমতার ওই অংশটুকু উচ্চারণ করা এবং ভারতের ইতিহাসে বাংলার অবদান আরও একবার সকলকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার ঘটনা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে ৷ ব্রিটিশ শাসকের সামনে বাংলা, বাঙালি কোনও দিন মাথানত করেনি ৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের বক্তব্য, মমতা আদতে এই অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে কেন্দ্রকে নিজের অনড় মনোভাবের বার্তা দিতে চেয়েছেন ৷ বোঝাতে চেয়েছেন, যাঁরা দেশে ধর্মের নামে বিভাজনের রাজনীতি করছে, তাঁদের সামনে নীতি মাথানত করবে না ৷ একইসঙ্গে তাঁরা বার্তা, প্রকৃত নেতা তিনিই হতে পারেন, যিনি ধর্ম, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সারা দেশের সমস্ত মানুষকে নেতৃত্ব দিতে পারেন ৷