কলকাতা, 26 জুন : লকডাউন আশীর্বাদ না অভিশাপ, তা নিয়ে ভবিষ্যতে বিতর্ক হতে পারে । কিন্তু, লকডাউন যে মাঠে-ময়দানের রাজনীতিকে ডিজিটাল রাজনীতি করে ছেড়েছে, ইনক্লাব জিন্দাবাদ মিছিলকে ঘরের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়েছে, তা বলাই যায় এখন ৷ রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলি বলছে, নতুন শিক্ষা হয়েছে । কোরোনার জেরে শাসকদলকে যেমন, তেমনই গৃহবন্দী থাকতে হয়েছে বিরোধী দলের নেতাদেরও । যারা এতদিন যুগের হাওয়ায় কান দেয়নি, তারাও এবার ঘষে-মেজে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিজেদের অভ্যস্ত করে তুলছে । শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা, বৈঠক সারছে অনলাইনে । সম্প্রতি রাজ্যের অন্যতম বিরোধী দল CP(I)M-এর পলিটব্যুরো বৈঠকও হয়েছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ।
দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এতদিন অভিযোগ তুলেছে, কোটি টাকা খরচ করে BJP নিজেদের IT সেলকে সমৃদ্ধ করেছে । বাস্তবিক প্রযুক্তির ব্যবহারে দেশের শাসকদল অনেকটাই এগিয়ে । সদ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ভার্চুয়াল দলীয় সভা করেছেন । তা নিয়েও কটাক্ষ করেছিল বিরোধীরা । কিন্তু, পরিস্থিতি বিচার করে বাধ্য হয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভরসা রাখছে বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্বও । ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহারে জনংযোগে পিছিয়ে নেই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলও । রাজনৈতিক পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোরের তত্ত্বাবধানে ডিজিটাল প্রচারকে হাতিয়ার করে তুলছে দলটি ।
এই বিষয়ে বিধানসভায় শাসক দলের উপমুখ্যসচেতক তাপস রায় বলেন, "কালের নিয়মে চাহিদা বদলায় । ডিজিটাল পদ্ধতির উপর মানুষ এখন নির্ভরশীল । তৃণমূলও এই পদ্ধতিতেই মানুষের কাছে পৌঁছতে চায় ।"
CP(I)M-এর পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমও ডিজিটাল মাধ্যমের পক্ষে সওয়াল করলেন ৷ কোরোনা যুদ্ধে কেরলের প্রযুক্তি ব্যবহারের উদাহরণ টানলেন ৷
তাঁর কথায়, "কেরল দেখিয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে কীভাবে স্বাস্থ্যকর্মীদের সাহায্য করা যায় ।"
বাম নেতা দাবি করেন, দেশে বামেরাই কেবল অনলাইন চিকিৎসা পরিষেবা চালু করেছে ৷ এরাজ্যেও যার সুবিধা মিলবে ৷ ইতিমধ্যে যে মাধ্যমে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছে বহু মানুষ ।
মহম্মদ সেলিম আরও জানান, "নিচুতলার শাখা সংগঠন থেকে পলিটব্যুরোর বৈঠক-লকডাউনে সবটাই হয়েছে ডিজিটাল মাধ্যমে । আমাদের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ররা ফ্রি সফটঅয়্যার ডেভলপ করেছে । বিভিন্ন ধরনের অ্যাপস তৈরি করেছে । এসবের মাধ্যমেই আপাতত বৈঠক হচ্ছে ।"
CP(I)M পলিটব্যুরো সদস্যের আরও দাবি, "তৃণমূল ও BJP ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার চালালেও মানুষের উপকারে আসেনি । বামপন্থীরাই একমাত্র রাজ্যের মানুষের কল্যাণে এই পদ্ধতিকে ব্যবহার করেছে ।"
শেষ পর্যন্ত যুগের দাবি মেনেছেন বহুদিনের রাজনৈতিক যোদ্ধা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রও ৷ অকপটে জানান, লকডাউনের মাস তিনেকে ডিজিটাল কমিউনিকেশন শিখেছেন । সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগও রেখেছেন এই পদ্ধতিতেই ।
সোমেন মিত্রর কথায়, "AICC-র সঙ্গে ডিজিটাল কনফারেন্স করেছি । উচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে অনলাইনেই । জেলা সভাপতিদের সঙ্গে জুমে কনফারেন্স করেছি । এছাড়াও ভিডিয়ো-মাধ্যমে প্রচার চলছে দলের । ভবিষ্যতে ডিজিটাল কমিউনিকেশনের উপর নির্ভরশীল হতেই হবে । দলের ছেলেরাও ডিজিটাল কমিউনিকেশনে দক্ষ হয়ে উঠেছে ।" শুধু রাজ্যস্তরের নেতারাই নয়, জেলার প্রত্যন্ত এলাকার নেতারাও বলছেন, আগামী দিনে অনলাইনই ভরসা ৷
আমতার কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র বলেন, "অমিত শাহ ভার্চুয়াল সমাবেশ করেছেন । CP(I)M পলিটব্যুরো ডিজিটাল পদ্ধতিতে বৈঠক করেছে । তৃণমূল আগে থেকেই ডিজিটাল মিডিয়াকে কাজে লাগাচ্ছে । বাম-কংগ্রেস জোটের প্রচারও এবার ডিজিটাল পদ্ধতিতেই হবে । "