কলকাতা, 28 জুলাই : মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লি সফরের দিকে নজর রাখছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে ভ্যাকসিন নিয়ে দরবার করলেও, পটুয়াপাড়ার অগ্নিকন্যা যে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক মঞ্চ প্রস্তুত করতে গিয়েছেন তা রাজনীতির ব্যাপারিরা জানেন । 2024’র লোকসভা নির্বাচনের আগে পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, ত্রিপুরা-সহ একাধিক রাজ্যে বিধানসভা ভোট রয়েছে ৷ তার আগে বিজেপি বিরোধী জোট গঠনের সলতে পাকানো শুরু হয়েছে । যার অন্যতম কান্ডারী হয়ে ওঠার প্রস্তুতি শুরু করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো ।
আঞ্চলিক দল হিসেবে বিজেপিকে ঝটকা দেওয়া কঠিন ৷ তা বুঝতে পেরে কংগ্রেসের মত সর্বভারতীয় দলকে সঙ্গে নেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে । তৃণমূল নেত্রী নিজে পুরনো সম্পর্কে আস্থা রেখে আজ কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধির সঙ্গে বৈঠক করবেন । তার আগে মঙ্গলবার কমল নাথ, আনন্দ শর্মাদের মত কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । যা নিয়ে রাজনীতির কারবারিদের মত, কংগ্রেসের সঙ্গে ফের একবার সমঝতা গড়ে তোলার চেষ্টা করছে তৃণমূল ৷
অন্যদিকে, জাতীয় স্তরে দুই দলের এই নৈকট্য দেখে উচ্ছ্বসিত আলিমুদ্দিনের কট্টরপন্থীরা । বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে বামফ্রন্টের জোট বিরোধী শিবিরের ধারণা, এতে তাদেরই লাভ । এককভাবে দলকে যেমন শক্তিশালী করা যাবে, তেমনি জোট ভাঙার দায় বামেদের উপর পড়বে না ৷ বিশেষ করে দুই বর্ধমান এবং কলকাতা জেলা নেতৃত্বের একাংশ কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বেশি আগ্রহী । তাদের মতে, মতাদর্শগত ভাবে কংগ্রেসের মত দক্ষিণপন্থী দল কখনই স্থায়ী বন্ধু হতে পারে না । নিজেদের যুক্তিকে আরও পোক্ত করতে তাদের মত, কংগ্রেস ক্ষমতা পিপাসু দল । তাই দিল্লিতে ক্ষমতায় ফেরার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের হাত ধরার চেষ্টা করছে । যেখানে নীতি, আদর্শ, বিজেপি বিরোধীতার আড়ালে ক্ষমতা দখলই পাখির চোখ হাত শিবিরের ।
আরও পড়ুন : Mamata Banerjee : মোদির পর ছাতা হাতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি দিদি
বামেদের অন্য আরেকটি শিবিরের মতে, লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসের হাত ছাড়লে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তারা হয়তো আরও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়তে পারে । আসন্ন রাজ্য কমিটির বৈঠকে জাতীয় স্তরে কংগ্রেস ও তৃণমূলের এই নৈকট্যকে হাতিয়ার করে, কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের বিরোধীরা প্রশ্ন তুলতে পারে বলে মনে করছে বাম শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ । অক্টোবর মাস থেকে শুরু হবে থেকে শুরু হবে বামেদের দলীয় সম্মেলন । সেখানেই এই বিতর্ক মাথাচাড়া দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে ।
আরও পড়ুন : Mamata Banerjee : 2024-এ মোদির বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেবে দেশ, হেঁয়ালি জিইয়ে মন্তব্য মমতার
এদিকে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপি বিরোধী জোটে তৃণমূল কংগ্রেসের হাত ধরতে আপত্তি নেই সিপিএমের ৷ এই ইঙ্গিত দিয়েছেন খোদ বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু । তিনি জানিয়েছেন, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপি বিরোধী যে কোনও আন্দোলনে পা মেলাতে তাদের অন্তত আপত্তি নেই । সেই আন্দোলনের মঞ্চে বিজেপি বিরোধীতাই একমাত্র লক্ষ্য হতে হবে । কিন্তু, তৃণমূল যদি সেই মঞ্চে থাকে ? সেই প্রশ্নেও বিজেপি বিরোধী দলকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলেছেন বিমান বসু । কয়েকদিন আগে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপি বিরোধীতায় তৃণমূল কংগ্রেসের হাত ধরতে আপত্তি না থাকার কথা জানিয়েছিলেন ।
আরও পড়ুন : Sonia-Mamata : আগামিকাল সোনিয়ার সঙ্গে মমতার ‘চায়ে পে চর্চা’
এই অবস্থায় এক দিকে কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসের কাছাকাছি আসার প্রস্তুতি ৷ অন্যদিকে, আলিমুদ্দিনের সঙ্গে বিধান ভবনের বিচ্ছেদের সম্ভাবনা ৷ এই দুইয়ের জেরে জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি বিরোধী জোটের পরিবেশকে আরও অস্বস্তিকর করে তুলতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা । কারণ বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের গাঁটছড়ায় কংগ্রেস হাইকমান্ডের অনুমতি ছিল না ভাবা ভুল । আবার বিধান ভবন এবং আলিমুদ্দিনের ছাড়াছাড়ি হলে, সেটাও হবে সোনিয়া গান্ধির অনুমতিতে ।
আরও পড়ুন : Modi-Mamata : উপনির্বাচনের প্রসঙ্গ এড়িয়ে মোদির সঙ্গে কি শুধুই সৌজন্য সাক্ষাৎ মমতার ?
ইতিমধ্যে, রাজ্যের শাসক দলের প্রতি নরম মনোভাব দেখানোর ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছে কংগ্রেস । সংসদে বাদল অধিবেশনে পেগাসাস স্পাইওয়্যার ইস্যুতে তৃণমূলকে সঙ্গী করে সুর চড়ানোর ছবি তুলে ধরা হচ্ছে । দুই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমতি ছাড়া এই নৈকট্য অসম্ভব । আর আজকের মমতা-সোনিয়ার বৈঠক সেখানে বাড়তি প্রশয় যোগাবে । প্রশ্ন হল, রাজ্যে কংগ্রেস ও বামেদের জোট রয়েছে । কিন্তু আলিমুদ্দিনের সঙ্গে বিধান ভবন শীতলতা বাড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছে । বিমান বসু জানিয়েছেন, তারা আগ বাড়িয়ে কারও সঙ্গে বিচ্ছেদ করতে যাবে না । তবে, কেউ চলে গেলে তাদের থাকার জন্য অনুরোধও করবে না বামফ্রন্ট ৷
রাজ্য এবং দেশীয় রাজনীতির সমীকরণে বদলের পালা চলছে । এই অবস্থায় বামেদের নতুন অবস্থান নিয়ে আলিমুদ্দিনের অন্দরে কট্টরপন্থী এবং জোটপন্থীদের একটা মতবিরোধ ফল্গুধারার মত বইছে । আর তাই পরিস্থিতির বিচার করে এবার সাবধানে পা ফেলতে চান বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্ররা । কারণ তাঁরা দেখে এবং ঠেকে দু’ভাবেই শিখেছেন । ফলে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দিল্লি সফর এবং বাকি রাজনৈতিক দলগুলির সমীকরণ, সবদিকেই সিপিএম সতর্ক দৃষ্টি রাখছে বলেই খবর ।