কলকাতা, 3 ফেব্রুয়ারি: কলকাতা হাইকোর্টে খারিজ হয়ে গেল অনুপ মাঝি ওরফে লালার আবেদন। কয়লা পাচারকাণ্ডে সিবিআইয়ের দায়ের করা এফআইআর খারিজের জন্য হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন অনুপ মাঝি। তাঁর সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য। পাশাপাশি হাইকোর্টের নির্দেশ, রেলের জায়গায় নির্বিঘ্নে তদন্ত করতে পারবে সিবিআই। তবে যে জায়গা রেলের আওতাধীন নয়, সেখানে তদন্ত করতে গেলে রাজ্যের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। রাজ্যের আওতাধীন এলাকা থেকে কোনও ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে তাঁকে সমন পাঠাতে পারবে সিবিআই, তবে সে ক্ষেত্রে অভিযান চালাতে গেলে রাজ্যের অনুমতি নিয়ে রাজ্যের আধিকারিকদের সঙ্গে যুগ্মভাবে তা করতে হবে।
গতবছর 27 নভেম্বর ইসিএল অঞ্চলে বেআইনি কয়লা উত্তোলন এবং কয়লা পাচার সংক্রান্ত অভিযোগে তাঁর নামে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে নোটিসও পাঠিয়েছিল। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সিবিআই দপ্তরে হাজিরা এড়ালেও তারপর থেকেই বেপাত্তা কয়লা মাফিয়া লালা। এরপরই 14 ডিসেম্বর নিজের গ্রেপ্তারি এড়াতে কলকাতা হাইকোর্টে এফআইআর খারিজের আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন কয়লা মাফিয়া লালার
27 জানুয়ারি মামলাটির শুনানি শেষ হয়। অনুপ মাঝির তরফে আইনজীবী ফারুক রাজ্জাকের বক্তব্য ছিল, "কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তদন্ত করতেই পারে। কিন্তু আইনে কোথাও তার উল্লেখ নেই। পাশাপাশি রাজ্যের তরফে এজি কিশোর দত্ত বলেন, "তদন্ত হয় তখন যখন কোনও অপরাধ সংঘটিত হয়। কিন্তু এখানে এফআইআর-এ বলা হয়েছে যে, বিশ্বস্ত সূত্র খবর এসিএল এরিয়াতে কয়লা চোরাচালান ও পাচার সংক্রান্ত ব্যাপারে বড়সড় চক্র কাজ করছে। সেই ভিত্তিতে কারও বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত করা যায়?" তখন অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনেরাল বলেন," যদি ধরেই নেওয়া হয় দোষ কিছু নেই, তাহলে রাজ্য সরকার কেন এই তদন্ত আটকাতে চাইছে ? ছোটোখাট বিষয় হলে রেল নিজেই তদন্ত করতে পারত, কিন্তু এখানে বড় চক্র রয়েছে। পাশাপাশি রেলওয়ে এলাকাতে তদন্ত করতে গেলে রাজ্যের কোনও সম্মতি প্রয়োজন হয় না। সমস্ত পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি মামলাটির রায়দান স্থগিত রেখেছিলেন।
এ দিন বিচারপতি নির্দেশ দেন, রেলওয়ে আইন অনুযায়ী রেলের জমির মধ্যে তদন্ত করতে পারে সিবিআই। পাশাপাশি যে জায়গা রেলের আওতাধীন নয়, সেখানে তদন্ত করতে গেলে রাজ্যের অনুমতি বাধ্যতামূলক। রাজ্যের আওতাধীন এলাকা থেকে কোনও ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে তাঁকে সমন পাঠাতে পারবে সিবিআই। সে ক্ষেত্রে অভিযান চালাতে গেলে রাজ্যের অনুমতি নিয়ে রাজ্যের আধিকারিকদের সঙ্গে যুগ্মভাবে অভিযান চালাতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।
গত 13 নভেম্বর কয়লা পাচারকারী অনুপ মাঝি ঘনিষ্ট 6 কয়লা ব্যবসায়ীকে নোটিস পাঠিয়েছিল আয়কর দপ্তর। অনুপ মাঝির সঙ্গে এই ছয় কয়লা ব্যবসায়ীর ঘনিষ্ট সংযোগ সূত্র পাওয়ার পরই তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সমন পাঠিয়েছিল সিবিআই। কিন্তু তিনি দেখা করেননি। জানা গিয়েছে, গোরু পাচার কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত মুর্শিদাবাদের ব্যবসায়ী এনামুল সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর কয়লা ব্যবসায়ী অনুপ মাঝির সঙ্গে তাঁর যোগসাজশ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ইসিএল অঞ্চলে অবৈধ কয়লা খনন ও পাচারের মূল অভিযুক্ত সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে যোগসূত্র করে তিনি এই বেআইনি চক্র চালাচ্ছিলেন। পুরুলিয়ার নিতুড়িয়া ভামুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা অনুপ মাঝি ওরফে লালা বেআইনি কয়লা পাচার থেকে শুরু করে বিভিন্ন রিসোর্ট ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ।