কলকাতা, 31 মে: 3 জুন 'বিশ্ব বাইসাইকেল দিবস' (World Bicycle Day)। তার প্রাক্কালে দুই নজির বহনকারী যুবককে সম্মান প্রদান করল এক স্বনামধন্য সিঁদুর ও আলতা প্রস্তুতকারী সংস্থা । চন্দন বিশ্বাস এবং নীলাঞ্জন সাহা (Kolkata youths felicitated)। একজন পাহাড়ে-পাহাড়ে ঘুরে বেড়ান, আরেকজন স্ট্রিট মিউজিক করেন শহরের রাস্তা থেকে সুন্দরবনের গ্রামে । ভাবছেন, এঁদের নিয়ে হঠাৎ লেখালিখি কেন ? এঁদের মিল কোথায় ? মিল একটাই, সাইকেলে । এঁদের দুজনেরই বাহন একটি করে সাইকেল ।
সাইকেল নিয়ে চন্দন বেরিয়ে পড়েন নানা পাহাড়ের চড়াই-উতরাইয়ে । ঘুরে ফেরেন এমন সব রাস্তায় যেখানে খুব কম লোকই পাড়ি দেন । শুধু ঘুরে বেড়িয়েই সাধপূরণ নয়, তিনি বানিয়ে ফেলেছেন ডকুমেন্টরি ছবি 'চরৈবেতি'। এটি দেখানো হয়েছে চলতি বছরের 'কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব'-এ ।
এ বার আসি নীলাঞ্জন সাহার কথায় । তিনি কলকাতার রাজপথে স্ট্রিট মিউজিক নিয়ে কাজ করবেন বলে ঠিক করেন । আর তাই বানিয়ে ফেলেন 'মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচ' নামে একটি মিউজিক ব্র্যান্ড । এখন অনেকেই তাঁকে 'মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচ' নামেই চেনে । নীলাঞ্জন পারফর্ম করেছেন কলকাতার স্ট্রিট মিউজিক ফেস্টিভ্যাল, মাউন্টেইন মিউজিক ফেস্টিভ্যালের মতো অনুষ্ঠানে । নিজের উদ্যোগে আয়োজন করেছেন 'কলকাতা ইনস্ট্রুমেন্টাল জ্যামিং ফেস্টিভ্যাল'।
গোলপার্কের মোড়ে বাইসাইকেলকে সঙ্গী করে স্যান্ডউইচ বিক্রির পাশাপাশি পথচলতি শ্রোতাকে গান উপহার দিয়ে চলেছেন তিনি ৷ এই স্ট্রিট মিউজিক উপভোগ করতে এসেছেন তিমির বিশ্বাস, সমীধ-ঊর্ভির মতো পরিচিত শিল্পীরা এবং তাঁরা গলা মিলিয়েছেন নীলাঞ্জজের সঙ্গে । এখানেই শেষ নয়, নীলাঞ্জন সাইকেলে চেপে কলকাতা থেকে পাড়ি দেন সুন্দরবনে, এক স্থানীয় স্কুলে কচিকাঁচাদের গান শেখাতে ।
আরও পড়ুন: Malda Girl meets Mamata : কালীঘাটে মমতার সাক্ষাৎ পেয়ে স্বপ্নপূরণ সায়ন্তিকার
চন্দন এবং নীলাঞ্জন বাংলার সংস্কৃতিজগতের দুটি নাম । এঁদের বাহন একটি সাইকেল । এ হেন দুই বিরল নজির বহনকারী ব্যক্তিত্বকে এ বার সম্মানিত করল দুটি স্বনামধন্য সিঁদুর ও আলতা প্রস্তুতকারী সংস্থা ।
চন্দনের কথায়, "2018 সালের 17 ফেব্রুয়ারি সাইকেল নিয়ে ‘ট্রান্স হিমালয়ান’ সফর শুরু করি ৷ কলকাতা, বাংলাদেশ, ত্রিপুরা হয়ে গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চল ঘুরে সেখান থেকে ভুটান পৌঁছই । তারপর সিকিম ঘুরে শিলিগুড়িতে আসি । তারপর গন্তব্য ছিল নেপাল । 2-3 মে সাইকেল নিয়ে রওনা দিই নেপালে । ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি সেই জায়গার ছবি-ভিডিয়ো তোলা আর সেখানকার নানা তথ্য সংগ্রহের অমোঘ নেশা আমার এই সব জার্নির পিছনের মূল লক্ষ্য । সম্প্রতি একটা তথ্যচিত্র বানিয়েছি 'চরৈবেতি', যেটা কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছে ।"
নীলাঞ্জন সাহা বলেন, "গানকে সঙ্গী করে আগামী দিনে পথ চলার ইচ্ছা রয়েছে । 'মিউজিক্যাল স্যান্ডউইচ' করার উদ্দেশ্যই ছিল স্ট্রিট মিউজিককে একটা জায়গা করে দেওয়া, স্ট্রিট মিউজিক নিয়ে চর্চা হওয়া । সব কিছুর জন্য একটা অর্থ লাগে, তাই স্যান্ডউইচ বিক্রির কনসেপ্টটা মাথায় আসে । কিছুটা হাতখরচ তো আসে । আর সঙ্গে রইল তো গান । সঙ্গী বাইসাইকেল ।"
এই বাইসাইকেল কেন, তা জানতে চাওয়ায় দুজনেরই বক্তব্য, দূষণহীন এই যান প্রকৃতির পক্ষে ভালো, সাইকেলিং করলে শরীর ভালো থাকে, ভিড় এড়িয়ে নিজের মতো করে চলা যায় ।
সিঁদুর ও আলতা প্রস্তুতকারী সংস্থার ডিরেক্টর অরিত্র রায়চৌধুরী বলেন, "যাঁরা এই ধরনের কাজের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন, তাঁদের আমরা আমাদের সংস্থার পক্ষ থেকে কুর্নিশ জানাই । এই প্রকার উদ্যোগ আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জোগাবে । জীবনে একটু অন্য রকম ভাবেও যে ভাবা যায় আর সেই মাধ্যমের প্রতি ভালোবাসা, নিষ্ঠা দিয়ে যে নিজের পরিচয় গড়ে তোলা যায়, এই দুই যুবক তার নজির সৃষ্টি করেছেন । বাইসাইকেলকে সঙ্গী করে ওঁদের এই যাত্রাপথ আরও সুগম হোক এই কামনা করি ।"