কলকাতা, 9 জুন: দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরে (Bhowanipore) গুজরাতি ব্যবসায়ী দম্পতির খুনের (Gujarati Couple Murder) কিনারা করল কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police) ৷ বৃহস্পতিবার এ নিয়ে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে তারা ৷ লালবাজারে আয়োজিত ওই সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুলিশের নগরপাল বিনীত গোয়েল (Vinit Goyal) ৷ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন যুগ্ম নগরপাল (এসটিএফ) ভি সলেমন নেশাকুমার, আইপিএস প্রবীণ কুমার ত্রিপাঠী-সহ পুলিশের অন্য উচ্চপদস্থ কর্তারাও ৷ এখনও পর্যন্ত এই জোড়া খুনের ঘটনায় মোট তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ পুলিশের দাবি, এক আত্মীয়ের ষড়যন্ত্রেই প্রাণ খোয়াতে হয় ওই দম্পতিকে ৷ রীতিমতো পরিকল্পনা করে খুন করা হয় তাঁদের ৷
পুলিশের তদন্তে জানা গিয়েছে, মাত্র 1 লক্ষ টাকার ঋণ নেওয়াকে কেন্দ্র করেই ঘটনার সূত্রপাত ৷ ব্যবসার কারণে 2019 সালে ওই টাকা ধার দিয়েছিলেন অশোক শাহ ৷ পুলিশের দাবি, অশোক তাঁর মেজো জামাইয়ের এক আত্মীয়কে এই টাকা ধার দিয়েছিলেন ৷ কিন্তু, এতদিনেও সেই টাকা পুরোপুরি শোধ করা হয়নি ৷ কারণ, যিনি ধার নিয়েছিলেন সেই ব্যক্তি ইতিমধ্যেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন ৷ পুলিশের বক্তব্য, ওই ব্যক্তির অবর্তমানে সেই টাকা শোধ করার কথা ছিল তাঁর দাদার ৷ মৃতের এই দাদাই অশোক শাহের মেজো জামাইয়ের আত্মীয় এবং জোড়া খুনে মূল অভিযুক্ত ৷ আপাতত তিনি বেপাত্তা ৷
টাকার এই লেনদেন নিয়েই ওই আত্মীয়ের সঙ্গে মনোমালিন্য শুরু হয় শাহ পরিবারের ৷ প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, ধার নেওয়া টাকার খুব সামান্য অংশই ফেরত দিয়েছিলেন অশোক ৷ কিন্তু, বাকি টাকার সবটুকু তাঁর পক্ষে ফেরত দেওয়া সম্ভব ছিল না ৷ তাঁর অপারগতার কথা ওই আত্মীয়কে জানিয়েও ছিলেন অশোক ৷ তাতে দুই পক্ষের মধ্যে তিক্ততা আরও বাড়ে ৷
আরও পড়ুন: Bhowanipore Murder Case: লুটের উদ্দেশ্যেই গুজরাতি দম্পতি খুন ?
পুলিশের দাবি, টাকা ফেরত দিতে পারবেন না, এটা বুঝেই অশোককে খুনের ছক কষেন ওই আত্মীয় ৷ খুব সম্ভবত, ঘটনার দিন তিনি নিজেই শাহ দম্পতির বাড়িতে গিয়েছিলেন ৷ সঙ্গে ছিলেন আরও বেশ কয়েকজন ৷ ওই আত্মীয়কে দেখেই শাহ দম্পতি বাড়ির সদর দরজা খুলে দেন ৷ এরপর অশোকের স্ত্রী রেশমি 'অতিথি'দের গ্লাসে করে জলও খেতে দেন ৷ সেই সময় আবারও ঋণের টাকা ফেরত নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয় ৷ আর তারপরই হামলা করে আততায়ীরা ৷ আক্রান্তদের ধারাল অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপ মারা হয় ৷
ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ৷ ধৃতরা হলেন রত্নাকর নাথ, যতীন মেহতা এবং সুবোধ কুমার সিং ৷ এঁদের মধ্যে সুবোধের নাম আগেও পুলিশের খাতায় উঠেছে ৷ তাঁর সঙ্গে অপরাধ জগতের পুরোন সম্পর্ক রয়েছে ৷ তাই তাঁর সম্পর্কে আরও ভালো করে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে ৷ ধৃতরা সকলেই হাওড়ার লিলুয়ার বাসিন্দা ৷ তবে, যিনি এই ঘটনার মূলচক্রী, অর্থাৎ নিহত অশোক শাহের মেজো জামাইয়ের সেই বেপাত্তা আত্মীয়র খোঁজে সন্ধান চালাচ্ছে কলকাতা পুলিশ ৷ তাদের প্রতিনিধিরা ভিনরাজ্যেও অভিযুক্ত কয়েকজনের খোঁজ শুরু করেছে ৷
পুলিশের বক্তব্য, পরিকল্পনা করেই শাহ দম্পতিকে খুন করা হয়েছে ৷ দুপুরবেলা শাহ দম্পতির মেয়ে যে বাড়িতে থাকেন না, তা জানতেন অভিযুক্তরা ৷ সেই কারণেই ওই সময়টাকে বেছে নেওয়া হয় 'অপারেশন' চালানোর জন্য ৷ ঘটনার দিন দুপুরে শাহ দম্পতির বাড়িতে আসার আগে রীতিমতো রেইকি করে আততায়ীরা ৷ তবে, এই খুনের ঘটনায় ধারাল অস্ত্রের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্রও ব্যবহার করা হয়েছে ৷ সেটি কোথা থেকে জোগাড় করা হল এবং ঘটনার দিন কে গুলি চালিয়েছিলেন, সেটা এখনও স্পষ্ট নয় ৷ সেই বিষয়ে খোঁজখবর চলছে ৷ পুলিশ দুটি মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে ৷ সেগুলির কললিস্ট ও টাওয়ার লোকেশন খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷