কলকাতা, 30 জুন : কসবা ভুয়ো ভ্যাকসিন-কাণ্ডে তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই যেন কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটে বেরিয়ে আসছে । এবার ধৃত দেবাঞ্জন দেবের ল্যাপটপ ঘেটে লালবাজারের গোয়েন্দারা কলকাতা পৌরনিগমের অর্থ বিভাগ, পূর্ত (সিভিল) এবং বিজ্ঞাপন বিভাগের তিনটি অভন্তরীন নথির স্ক্যান কপি উদ্ধার করেছে । কীভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ নথি পৌঁছাল দেবাঞ্জনের হাতে ? তাহলে কি পৌরনিগমের কোনও ব্যক্তি যুক্ত রয়েছে এর সঙ্গে ? এই নথিই কি দেবাঞ্জন ব্যবহার করেছিল পৌরনিগমের ভুয়ো টেন্ডার ডাকার কাজে? এমন একাধিক প্রশ্ন তদন্তকারীদের ভাবাচ্ছে ।
পাশাপাশি কলকাতা পৌরনিগমের আইন সম্পর্কে ভালই জ্ঞান ছিল কসবায় ভ্যাকসিন-কাণ্ডে ধৃত ভুয়ো আইএএস দেবাঞ্জন দেবের । পৌর আইন সম্পর্কে এই জ্ঞান পৌরনিগমের কোনও আধিকার বা প্রভাবশালী ব্যক্তির থেকে দেবাঞ্জন পেয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা ৷ তদন্তে এমনই এক আধিকারিক সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে পরেছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ । জানা গিয়েছে, দেবাঞ্জন দেবকে কলকাতা পৌরনিগমের একাধিক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বিভিন্ন সময়ে সাহায্য করত ।
গোয়েন্দারা মনে করছেন, কলকাতা পৌরনিগমের একাধিক উচ্চপদস্থ আধিকারিক থেকে শুরু করে, আমলা পদমর্যাদার আধিকারিকদের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল দেবাঞ্জন দেবের । যদিও এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, পৌরনিগমের আধিকারিকদের সঙ্গে একজন ভুয়ো আইএএস এর কীভাবে যোগাযোগ হতে পারে ? এমনকি দিনের-পর-দিন কলকাতা পৌরনিগমের একাধিক আধিকারিকের ঘরে যাতায়াত ছিল তার ৷ নিয়মিত তাঁদের দফতরে যাতায়াত করত দেবাঞ্জন ৷ তা সত্ত্বেও ওই আধিকারিকরা দেবাঞ্জন সম্পর্কে কেন কিছু বুঝতে পারলেন না ? সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে ৷
আরও পড়ুন : Fake IAS : ভুয়ো নথি তৈরির খুঁটিনাটি জানতে ইন্টারনেটে পড়াশুনা করত দেবাঞ্জন
লালবাজার সূত্রের খবর, দেবাঞ্জন দেব একাধিকবার পৌরনিগমের বিভিন্ন আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করত ৷ ফলে পৌরনিগমের সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশের সাইবার সেলের আধিকারিকরা খতিয়ে দেখছেন । সিসিটিভি ফুটেজ থেকেই স্পষ্ট হবে, কোন কোন দফতরে দেবাঞ্জনের যাতায়াত ছিল ৷
আরও পড়ুন : Fake Vaccination Case : 48 ঘণ্টার মধ্য়ে রাজ্যের রিপোর্ট তলব কেন্দ্রের
এক্ষেত্রে অপর একটি বিষয়ে সামনে এসেছে ৷ সেটা হল, কসবার রাজডাঙা এলাকার যে বিল্ডিং এর চারতলায় দেবাঞ্জন অফিস করেছিল, সেই বিল্ডিংয়ে মোট ছ’টি বেসরকারি সংস্থার অফিস রয়েছে এবং প্রত্যেকটিতেই ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে বলে জানা গিয়েছে ।
আরও পড়ুন : ভুয়ো আইএএস দেবাঞ্জন মামলায় লালবাজারের কাছে তথ্য তলব ইডির
কিন্তু দেবাঞ্জনের চারতলার অফিসের কোনও বৈধ কাগজপত্র ছিল না । এক্ষেত্রে গোয়েন্দাদের অনুমান পৌর আইন সম্পর্কে রীতিমতো পড়াশোনা করেছিল দেবাঞ্জন । কারণ পৌর আইনের 1980 সালের 199 নম্বর ধারা অনুযায়ী পুর দফতর ব্যবসায়িক কারণে ট্রেড লাইসেন্স দেয় । কিন্তু, কোনও সরকারি দফতরের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্সের প্রয়োজন হয় না ৷ গোয়েন্দাদের প্রাথমিক অনুমান, এই সকল খুঁটিনাটি বিষয়ে দেবাঞ্জনকে কলকাতা পৌরনিগমের কোনও আধিকারিক সাহায্য করেছে ৷