কলকাতা, 20 অগস্ট: 12 নম্বর ওয়েলিংটন স্কোয়্যার ৷ কলকাতার এই ঠিকানাতেই রয়েছে রাজা সুবোধ মল্লিকের (Raja Subodh Mallik) প্রাসাদ ! স্থাপত্যের বয়স 150 ছুঁই ছুঁই ৷ বয়সের ভার এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তার এখন বেহাল দশা ৷ যেকোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে বিশাল এই ইমারত ৷ সত্যি বলতে কী, মুষলধারে বৃষ্টি বা প্রবল ঝড় শুরু হলে মনে হয়, এই বুঝি খসে পড়ল পলেস্তারাবিহীন লাল ইটের শরীর ! রাজার বাড়ি হলেও এটির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ৷ কলকাতা পৌরনিগমের (Kolkata Municipal Corporation) দাবি, প্রাচীন এই মহল সংস্কারের আবেদন জানিয়ে বহুবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সচেতন করা হয়েছে ৷ পাঠানো হয়েছে নোটিশ ৷ কিন্তু, আজ পর্যন্ত তার কোনও জবাব আসেনি ৷ আর এই প্রশাসনিক দড়ি টানাটানির মাঝে পড়ে প্রতিদিন আরও একটু করে ক্ষত বাড়ছে রাজবাড়ির ৷
তথ্য বলছে, 1883 থেকে 1884 সাল নাগাদ তৈরি হয় এই প্রাসাদ ৷ তখন সে ছিল নববধূর মতোই সুসজ্জিতা ! উপরন্তু, স্বাধীনতা আন্দোলনেও এই বাড়ির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম ৷ 1998 সালে কলকাতা পৌরনিগম এই রাজপ্রাসাদকে 'হেরিটেজ' (Heritage Building) তালিকাভুক্ত করে ৷ তবে বাড়ির মালিকানা কলকাতা বিশ্ববিদ্য়ালয়ের হাতে থাকায় সংস্কারের কাজ শুরু করা যায়নি ৷ এমনটাই জানিয়েছেন মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার ৷ অন্য একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, এই বিষয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও অপারগ ৷ কিছু আইনি জটিলতার কারণে তারাও এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করতে পারছে না ৷
আরও পড়ুন: বিশ্ব বিখ্যাত শিল্পী রামকিঙ্কর বেইজের বসতবাড়ি পেতে চলেছে 'হেরিটেজ তকমা'
আজ বেহাল দশা হলেও একটা সময় এই বাড়িই সাক্ষী থেকেছে বহু ইতিহাসের ৷ 1906 থেকে 1908 সাল পর্যন্ত রাজা সুবোধ মল্লিকের এই বাড়িতেই অতিথি হিসাবে থেকেছেন অরবিন্দ ঘোষ ৷ পরে এখানেই 'ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশন' গঠিত হয় ৷ প্রসঙ্গত, পরাধীন ভারতে 'বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ'-এর প্রথম অধ্যক্ষ হন অরবিন্দ ঘোষ ৷ সেই কলেজ গড়ে তুলতে রাজা সুবোধ মল্লিক একাই 1 লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছিলেন ৷ এই বাড়িতে মাঝেমধ্যেই আসতেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৷ শিক্ষানীতি-সহ নানা বিষয় নিয়ে অরবিন্দর সঙ্গে আলোচনা করতেন তিনি ৷
বিপিনচন্দ্র পাল, বালগঙ্গাধর তিলক, সখারাম গণেশ দেউস্কর-সহ বহু বিপ্লবীর আনাগোনা ছিল এই বাড়িতে ৷ সেই ইতিহাসই আজ পড়ে রয়েছে অনাদরে ৷ একদিকে বাড়ির বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়ছে, অন্যদিকে দখল হয়ে যাচ্ছে আশপাশ ৷ কলকাতা পৌরনিগমের ইঞ্জিনিয়ারদের আশঙ্কা, যেকোনও মুহূর্তে এই প্রাসাদ হুড়মুড় করে ভেঙে পড়তে পারে ৷ বস্তুত, বেশ কয়েক বছর আগে বাড়িটির একটি বিশাল অংশ ক্রিক রোয়ের উপর ভেঙে পড়ে ৷ দিনকয়েক আগেও কার্নিশের একটি অংশ ভেঙে পড়ে বাড়ির সামনের দিকে ৷
পরিস্থিতির কথা অজানা নয় কলকাতা পৌরনিগমের (KMC) হেরিটেজ বিভাগের মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দারের ৷ তিনি জানিয়েছেন, তাঁরাও দ্রুত বাড়িটির সংস্কার করাতে চান ৷ প্রয়োজনে আবারও এনিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে ৷ তারা কী জবাব দেয়, তার উপরেই নির্ভর করছে পৌরনিগমের পরবর্তী পদক্ষেপ ৷