হরিদেবপুর, 28 জুন : হরিদেবপুরকাণ্ডে দায় কার ? কারণ খুঁজতে এবার রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের আধিকারিক ও যাদবপুরের অধ্যাপককে পাঠানো হল ঘটনাস্থলে ৷ সোমবার দিনভর দফায়-দফায় কলকাতা পৌরনিগমে বৈঠক হয় । এক দফতর আরেক দফতরের দিকে দায় ঠেলার পালা শেষে তৃতীয় পক্ষকে মাঠে নামানো হল ৷ পাশাপাশি কাউন্সিলর রত্না শূর ও মেয়র পারিষদ তারক সিংয়ের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য উঠে আসে সামনে (KMC investigates over Haridevpur Electrocution Incident) ।
কলকাতা পৌরনিগম সূত্রে খবর, এই ঘটনায় বিদ্যুৎ বিভাগের বক্তব্য, তাদের ওই এলাকায় আলো জ্বালাতে লাইনে বিদ্যুৎ আসে সন্ধে ৬ টার পরে । ঘটনা তার আগে ঘটেছে । সেখানে সিইএসসি মাটিতে কাজ করেছিল । কোনও ত্রুটি থাকলেও থাকতে পারে । ওদিকে সিইএসসি আধিকারিকরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তাদের লাইন মাটির তলা থেকে গিয়েছে ৷ ফলে পোস্টে বিদ্যুৎ আসার দায় তাদের নয় । ওই পোস্ট বিএসএনএল-এর ৷ তারাও পোস্টে বিদ্যুত সংযোগের বিষয়টির দায় এড়িয়ে গিয়েছেন ।
আরও পড়ুন : হরিদেবপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বালকের মৃত্যুতে দায় কার ?
তাহলে কীভাবে ঘটল এই মর্মান্তিক ঘটনা ? উঠে আসছে হুকিংয়ের চাঞ্চল্যকর তত্ত্ব । ওখানেই একটি প্রোমোটিং হচ্ছে । তার সামনেই মাটি খোঁড়া হয়েছিল । সেখানে লাইটপোস্টটির নিচ থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে তা নির্মাণ কাজে লাগানো হয়ে থাকতে পারে । ফলে বৃষ্টির জেরে বাতিস্তম্ভে বিদ্যুৎ ছড়িয়ে পড়ে, এতেই বিপত্তি বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে । এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম । তদন্তে যাদবপুরকেও যুক্ত করা হয়েছে । ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবেন ডিরেক্টর অফ ইলেকট্রিসিটি এ কে গঙ্গোপাধ্যায়, যাদবপুর ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের অধ্যাপক নীলাদ্রি গঙ্গোপাধ্যায় ।
স্থানীয় 115 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রত্না শূর মৃত্যুর কারণ হিসেবে জমা জলের তত্ত্ব খাঁড়া করেছিলেন । স্থানীয়দেরও অভিযোগ, একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় জল থৈ-থৈ করে । কাউন্সিলরের কথায়, ওখানে খুব জল জমে । রাস্তাও অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল । তাই স্থানীয়দের দাবি মেনে ওই পোস্টে আলো লাগানো হয়েছিল । এই দাবিকে খারিজ করেছেন নিকাশি বিভাগের মেয়র পারিষদ তারক সিং । তিনি জানান, বাতিস্তম্ভে হাত দিয়েই কিশোরের মৃত্যু হয় । জলে বিদ্যুৎ থাকলে আগেই দুর্ঘটনা ঘটত । ওই পোস্টের সামনে যেখানে খোঁড়াখুঁড়ি হয়েছে, সেখানকার জল তুলনামূলক গরম ছিল বলেই রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে ।
যদিও এদিন মেয়রের জরুরি বৈঠকে ছিলেন না মেয়র পারিষদ (আলো) সন্দীপরঞ্জন বক্সি ।তিনি এপ্রসঙ্গে বলেন, "ঘটনার সময় আলোক সংযোগ থাকার কথা নয়। তাই কীভাবে বাতিস্তম্ভে কারেন্ট ছড়িয়ে পড়ল তা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে ।"
বিকেলে ফের পৌরকমিশনার বিনোদ কুমার ও তারক সিং-সহ আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন মেয়র । রাজ্য সরকারের ডিরেক্টর অব ইলেকট্রিসিটি ও যাদবপুরের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের অধ্যাপক নীলাদ্রি গঙ্গোপাধ্যায়কে পৃথক তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ।
ফিরহাদ হাকিম এই ঘটনাকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে উল্লেখ করেছে । তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, "আমরা পরিবারের পাশে আছি । সমস্ত রকমের সহযোগিতা করা হচ্ছে । টেলিফোনের পোস্টে কারেন্ট এল কী করে ? সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে । পোস্টের নীচে সিইএসসি-র তার লিক হয়ে থাকতে পারে । পাশেই নির্মাণকাজ হচ্ছে । তাদেরও কোনও গাফিলতি থাকতে পারে । পুলিশকে বলা হয়েছে, ওখানে আপাতত কোনও কাজ হবে না। রিপোর্ট দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।"