কলকাতা, 5 জুলাই: তরুণ মজুমদার একসময় কলকাতা ছাড়তে চেয়েছিলেন। কিংবদন্তিকে সে সময় আটকেছিলেন রাজ্যর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পরিচালক তরুণ মজুমদারের স্মৃতিচারণে ইটিভি ভারতকে এমনটাই জানালেন সিপিআইএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। যাঁর অনুরোধেই শেষ যাত্রায় মরদেহে লালঝান্ডা রাখতে রাজি হয়েছিলেন চারবারের জাতীয় পুরস্কার জয়ী পরিচালক (Kanti Ganguly tells unknown fact about Tarun Majumdar after his demise) ৷
পরিচালক তরুণ মজুমদারের স্মৃতিচারণা প্রসঙ্গে কান্তি গঙ্গোপাধ্য়ায় বলেন, "তরুণবাবুর বয়স প্রায় 92 বছর। আমার প্রায় 79। বয়সের পার্থ্যক্যটা 11-12 বছরের। উনি প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে গ্রাম বাংলার ছবি করতেন। আর আমি গ্রাম বাংলার গরীব খেটে খাওয়া মানুষকে নিয়ে কাজ করতাম। আলাপ বহুদিনের। কিন্তু ঘনিষ্ঠতা বাড়ে গত দশ এগারো বছরে। সেটা গভীর থেকে গভীরতর হয়। প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার নানা বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসতাম আমরা। সেদিনটা খুব মনে পড়ে। আমার রাজনৈতক জীবন নিয়ে একটা বই লিখি। সেই বইটা আমি তরুণবাবুকে পড়তে দিই। পড়ে বইটার নামকরণও উনিই করেন। নাম রাখেন "রক্ত পরশের আকাঙ্খায়"। তারপর উনি ঠিক করেন বইটার একটা কাহিনী নিয়ে একটা ছবি করবেন। শেষ বয়সে আমি নিষেধ করেছিলাম। উনি শুনলেন না। বললেন, না! ছবিটা করতেই হবে।"
রাজ্যের প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়ণ মন্ত্রী জানান, মাস ছয়েক আগে তরুণবাবু মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এককথায় বললে উনি মৃদুভাষী, অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন ৷ সকলেই ভাবেন সিনেমা জগতের মানুষেরা প্রচণ্ড ধনী। কিন্ত না, তাঁর একটা ভাঙাচোরা গাড়ি ছিল। আর ছিল 500-550 স্কোয়্যার ফিটের একটা সরকারি ঘর। কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "তিনি এক সময় তো কলকাতা ছেড়ে চলে যাবেন বলে ঠিক করেছিলেন। কিন্তু, সে কথা বুদ্ধবাবু জানতে পারেন। সঙ্গে সঙ্গে কলকাতাতেই 600 স্কোয়ার ফিটের একটা সরকারি আবাসনের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু, সোমবার বামপন্থী আন্দোলন ও বাংলা সিনেমা জগতের (পরিচালক) শেষ নক্ষত্রের অবসান ঘটল। ওঁর পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানানোর ভাষা নেই।"
আরও পড়ুন: তালাবন্ধ ঘর, এনটি ওয়ান স্টুডিয়োতে পৌঁছল তরুণ মজুমদারের নিথর দেহ, কী বলছে শিল্পীমহল?
কান্তিবাবু আরও বলেন, "তিনি বরাবরই মেরুদণ্ড সোজা রেখে স্পষ্ট ভাষায় সত্যিটা বলতেন। কলা মন্দিরের এক অনুষ্ঠানে এক মিনিটের বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, 'আমি সিনেমায় কখনও মিথ্যা বলি না।" এখানেই শেষ নয়। কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "তরুণবাবু 'শেষ আকাঙ্ক্ষা'-য় বলেছিলেন, আমি মারা গেলে আমি যেন নীরবে, নিঃশব্দে যেতে পারি। গান স্যালুট নয়। রবীন্দ্র সদন নয়। আমার দেহ যেন দান করা হয়। শুধু আমার বুকে একটা গীতাঞ্জলি থাকে। সেই দায়িত্বটা রাখতে আমাকে নিতে বলেছিল। আমি তখনই অনুরোধ করি যে, আপনার সব কথা আমি মেনে চলব। আপনি বামপন্থায় বিশ্বাসী। মৃত্যুর পরে কিন্তু লাল ঝান্ডাটা আপনার বুকে রাখতে হবে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে উনি বলেছিলেন, 'আপনার কাছে আমার হার মানতেই হবে।' তাই, শাসক-বিরোধী উভয় রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে, মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে গান স্যালুট ছাড়া লাল ঝাণ্ডায় তাকে শেষ বিদায় জানানো হল তাঁকে।"