কলকাতা, 14 জুন : গত কয়েকমাসে শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ নিয়ে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তভার সিবিআইকে দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Ganguly) ৷ কিন্তু সেই নির্দেশ দিয়ে আদৌ কি কোনও লাভ হয়েছে ? মঙ্গলবার এজলাসে বসে সেই প্রশ্নই তুললেন স্বয়ং বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ এই পরিস্থিতিতে তিনি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছেন, ‘‘এতগুলো সিবিআই তদন্ত দিয়ে আমি ভুল করলাম নাকি ?’’
মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলার শুনানিতে হাজির ছিলেন রাজ্যের শাসক দলের সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় । তাঁর সঙ্গে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথোপকথন হয় ৷ সেখানেই ওই বিচারপতি সিবিআইকে দেওয়া তদন্তের নির্দেশ নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন ৷
যদিও তিনি বলেছেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্নের উত্তরে ৷ কল্যাণ বিচারপতিকে বলেন, ‘‘সিবিআই মিডিয়ার সামনে চার পাঁচ দিনের জন্য, খুব বেশি হলে 10 দিনের জন্য হই হই করবে । সারদা-নারদা সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়ে কি লাভ হয়েছে ? কিছুই হয়নি । প্রথম দু-চারদিন হই হই তারপর সব যেমনকে তেমন ।’’
তার প্রেক্ষিতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গতকাল আমি ভাবছিলাম এতগুলো সিবিআই তদন্ত দিয়ে আমি ভুল করলাম নাকি ? বরং সিটকে দিলে ভালো হত । সিবিআইয়ের ম্যান পাওয়ার নেই ।’’ এর সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘আমি নভেম্বর 2021-এ প্রথম সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলাম । কিছুই হল না । কোনও মেটিরিয়াল উদ্ধার করতে পারেনি তারা এখনও । আমি খুবই টায়ার্ড ।’’
যা শুনে কল্যাণের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি আগে অনেক এনার্জেটিক ছিলাম । এখন হতাশ হয়ে গিয়েছি এসব দেখতে দেখতে । আমি কোনও মন্তব্য করব না ।’’
তাঁদের আলোচনায় আসে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ ৷ বিচারপতি বলেন, ‘‘আমি হয়তো পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছি । কিন্তু পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে আমার কোনও রাগ ক্ষোভের ব্যাপার নেই । তিনি একজন বিজ্ঞ ব্যাক্তি ।’’
একই সঙ্গে বিচারপতি বক্তব্য, ‘‘এই রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে খুব খারাপ সময় যাচ্ছে । বেকারদের চাকরিই মূল ইস্যু । এতগুলো সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলাম, জানি না মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কোনও বার্তা পৌঁছেছে কি না । আমার গতকাল থেকে মনে সন্দেহ হচ্ছে সিবিআই আদৌ কিছু করতে পারবে কি না ! দেখি আগামিকাল থেকে রিপোর্ট পাব ।’’
তখন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাপসী মালিকের মামলার কথা তোলেন ৷ তিনি বলেন, ‘‘তাপসী মালিক মামলায় সিবিআই কি তদন্ত করেছে ? কোনও তথ্য প্রমাণ জোগাড় করতে পারেনি ।’’ বিচারপতি তখন বলেন, ‘‘সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পর গত সাত মাসে কিছুই হল না ? এই দেশে কিচ্ছু পাল্টাবে না । আমি সত্যি বেশ উদ্বিগ্ন ।’’
তখন কল্যাণ বলেন, ‘‘ওই যে বললাম সিবিআই মানে তিন চারদিন ক্যামেরার সামনে খুব ফ্লাস । বাকি কিচ্ছুই হয় না । বেশিরভাগ মামলায় তাঁরা তদন্তই সম্পূর্ণ করতে পারে না ।’’
এর পর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি জানি না পরে কী করব ? পরে এই ধরনের বিষয় আসলে তদন্তের দায়িত্ব কাকে দেব ! আমার ইচ্ছে নেই মিডিয়ায় রোজ আমার ছবি আসুক । কিন্তু এ রাজ্যের বেকার ছেলে মেয়েদের কী হবে ? আমি ভাবছিলাম সব বিষয় নিয়ে অন্য কাউকে তদন্ত করার দায়িত্ব দেব কি না !’’
আরও পড়ুন : 2014 Primary Recruitment Case: 2014 প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের