কলকাতা, 8 ফেব্রুয়ারি: দেখতে দেখতে ন’দিন পার করে সোমবার 10 দিনে পড়ল তাঁদের অবস্থান৷ এর মধ্যে প্রথম আটদিন মাথার উপর ছাউনিটা পর্যন্ত ছিল না। তবু চাকরির দাবিতে ফুটপাতে বসে লড়াই করে চলেছেন নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের ওয়েটিং লিস্টে থাকা চাকরিপ্রার্থীরা। চাকরির দাবি তো রয়েইছে। একইসঙ্গে দুর্নীতির অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা।
হাইকোর্টের অনুমতি নিয়ে গত 30 জানুয়ারি থেকে সল্টলেকে সেন্ট্রাল পার্কের 5 নম্বর গেটে অবস্থান করছেন স্কুল সার্ভিস কমিশন পরিচালিত 1st SLST, 2016-র ওয়েটিং লিস্টে থাকা নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক পদপ্রার্থীরা। সোমবার সেই অবস্থানের দশম দিন।
আন্দোলনরত এক চাকরিপ্রার্থী মহম্মদ আরশাদ আলি বলেন, ‘‘আমরা গত 10 দিন ধরে অবস্থান করছি। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী 2019 সালে প্রেস ক্লাবের কাছে আমাদের অবস্থান-অনশন মঞ্চে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবিতে দরজায় দরজায় ঘুরেছি আমরা৷ আজ আমরা অসহায়৷ তাই বাধ্য় হয়েই ফুটপাথে খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাচ্ছি৷ রাজ্যবাসীর কাছে একটা স্লোগান খুব ফেমাস, ‘খেলা হবে, খেলা হবে’। রাজ্যবাসী হয়তো জানেন না খেলাটা আসলে কাদের সঙ্গে হচ্ছে। আসল খেলাটা আমাদের সঙ্গে হচ্ছে৷ যাঁরা শিক্ষিত, মেধাসম্পন্ন তাঁদের সঙ্গে হচ্ছে। মাননীয়াকে আমরা বলতে চাই, আমরা হবু শিক্ষক। আমাদের স্থানটা এখানে নয়। আমরা সমাজ গড়ার কারিগর। আমাদের যোগ্য স্থানটা আপনি ফিরিয়ে দিন।’’
কী কী দাবি ও অভিযোগে চলছে এই আন্দোলন? বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, প্রথমত, 2016 সালে হয় শিক্ষক নিয়োগের 1st SLST। তারপর দীর্ঘ টালবাহানার পর আপডেটেড ভ্যাকেন্সি ছাড়াই মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। যা স্কুল সার্ভিস কমিশনের গেজেট বিরুদ্ধ। আবার মেধাতালিকায় পরীক্ষার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর কত? অ্যাকাডেমিক স্কোর কত? ইন্টারভিউয়ে প্রাপ্ত নম্বর কত? মোট প্রাপ্ত নম্বর কতো? তা আজও অজানা।
দ্বিতীয়ত, নিয়োগের পরীক্ষার সময় কমিশনের তরফে অফিশিয়াল বিজ্ঞপ্তিতে যে শূন্যপদ দেখানো হয়েছিল, কোনও এক অজ্ঞাত কারণে মেধাতালিকা প্রকাশের পর সেই শূন্যপদ কমে যায়। পাশাপাশি, গেজেটের 1:1:4 রেশিও-ও মানা হয়নি মেধাতালিকা ও ওয়েটিং লিস্টে। এরইসঙ্গে, প্রথম পর্যায়ে ইন্টারভিউয়ে ডাক পাওয়া চাকরিপ্রার্থীদের কম নম্বর দিয়ে পিছনে ঠেলে দেওয়া অভিযোগও তুলছেন আন্দোলনকারীরা।
আরও পড়ুন: শিশুসুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে কর্মশালা
এই সকল দুর্নীতি ও ওয়েটিং লিস্টে থাকা চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি সুনিশ্চিত করার দাবিতে 2019 সালের মার্চ মাসে প্রেস ক্লাবের কাছে দীর্ঘ 29 দিন অনশন করেছিলেন ওয়েটিং লিস্টে থাকা চাকরিপ্রার্থীরা। পরে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিতে সেই আন্দোলন প্রত্যাহার করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু, 2019 সালের সেই আন্দোলনকে কেন্দ্র করেও রয়েছে অভিযোগ।
বর্তমানে 10 দিন ধরে অবস্থানরত চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, অনশন মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর কথা মতো পাঁচ সদস্যের কমিটি তৈরি হয়েছিল৷ তারপর দু’বছর অতিক্রান্ত হলেও সেই কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি। বরং আন্দোলনকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য গোপন সমঝোতার মাধ্যমে কমিটির সেই পাঁচ সদস্যকে অবৈধভাবে নিয়োগপত্র প্রদান করা হয়েছে বহু যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করে।
এই সকল অভিযোগকে সামনে রেখে ও চাকরির দাবিতেই সল্টলেকে চলবে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের ওয়েটিং লিস্টে থাকা চাকরিপ্রার্থীদের অবস্থান। এখনও পর্য়ন্ত প্রশাসনের তরফে এই প্রসঙ্গে কোনও বক্তব্য মেলেনি৷ আন্দোলনকারীদের তরফে সোমদত্তা বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাদের এই আন্দোলন চলছে, চলবে। যতক্ষণ না মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছেন, আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। প্রতিশ্রুতি নয়, আমরা চাকরি চাই৷’’