কলকাতা, 3 ডিসেম্বর : “এ তো রীতিমতো শিল্প ! একেবারে কর্পোরেট আদব-কায়দা ।" ব্যাঙ্ক প্রতারণার তদন্তে নেমে সম্প্রতি জামতারায় গিয়ে এমন কথাই বেরিয়ে আসে কলকাতা পুলিশের দুঁদে গোয়েন্দার মুখ থেকে ।
কী দেখেছেন গোয়েন্দারা ? জামতারায় শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রতারণার বিষয়টিকে । রীতিমতো কর্পোরেট কায়দায় খোলা হয়েছে অফিস । সেখানে তৈরি হয়েছে নানা ভাষার ডেস্ক । ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের যুবক-যুবতীদের রীতিমতো চাকরি দেওয়া হয়েছে সেখানে । কাজ আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে জামতারা গ্যাংয়ের পাল্লায় পড়তে বাধ্য করা ।
কী ভাবে কাজ চালায় এই প্রতারণা চক্র? কলকাতার গোয়েন্দা প্রধান মুরলীধর শর্মা জানাচ্ছেন, এদের আছে নানা ধরনের মোডাস অপারেন্ডি । যার মধ্যে সাম্প্রতিকতম হল, অনলাইনে রেস্টুরেন্টের টেবিল বুক করার বিষয়টি কাজে লাগিয়ে প্রতারণা । বিষয়টি বেশ অভিনব । নামী রেস্টুরেন্টের নাম লিখে গুগল ম্যাপকে কাজে লাগিয়ে সেখানেই দিয়ে দেওয়া হচ্ছে ফোন নম্বর । গ্রাহকরা আসল রেস্টুরেন্টের ফোন নম্বর ভেবে যোগাযোগ করছেন সেখানে । আর পাল্লায় পড়ছেন জামতারা গ্যাংয়ের ।
গত 16 নভেম্বর এক রেস্তরাঁ কর্তা দেবাশিস ঘোষ অভিযোগ দায়ের করেন লালবাজারের সাইবার ক্রাইম থানায় । জানান, তাঁর রেস্তরাঁর নামে কেউ বা কারা গুগলে বিজ্ঞাপন দিয়েছে । সেখানে দেওয়া হয়েছে একটি ফোন নম্বরও । তাঁরা অভিযোগ পেয়েছেন বহু কাস্টমার ওই বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে বহু টাকা খুইয়েছেন । তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, কাস্টমাররা যখন ওই মোবাইল নম্বরটিতে যোগাযোগ করতেন তখন তাঁদের বলা হত বুকিং চার্জ হিসেবে 10 টাকা দিতে হবে । কাস্টমারের মোবাইল নম্বরে পাঠিয়ে দেওয়া হত একটি লিঙ্ক । সেই লিঙ্কই বুকিং চার্জ দেওয়ার জন্য বলা হত । লিঙ্কে 10 টাকা ট্রান্সফার করলেই কাস্টমারের অ্যাকাউন্ট থেকে গায়েব হয়ে যাচ্ছিল হাজার হাজার টাকা । তদন্তে নেমে পুলিশ গুগলের বিজ্ঞাপনে দেওয়া মোবাইল নম্বরের কল ডিটেলস রেকর্ড খতিয়ে দেখে । খতিয়ে দেখা হয় অনলাইনে টাকা লেনদেনকারী একটি সংস্থার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরও । আর তখনই বোঝা যায় এটি 'জামতারা গ্যাং' -এর কাজ । কারণ ওই অনলাইনে টাকা লেনদেনকারী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত মোবাইল নম্বর এবং বিজ্ঞাপনে দেওয়া মোবাইল নম্বরের লোকেশন ঝাড়খণ্ডের জামতারাতেই দেখা যায় । অনলাইনে টাকা লেনদেনকারী একটি সংস্থায় লেনদেন খতিয়ে দেখে পুলিশ জানতে পারে বেশিরভাগ টাকা সরানো হয়েছে জামতারার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কারুয়া শাখায় । ওই অ্যাকাউন্ট রহিম আনসারি নামে একজনের । সহজেই পাওয়া যায় ওই ব্যক্তির ঠিকানা । আর তারপরই জামতারায় অভিযান চালায় কলকাতা পুলিশ । আজ জামতারা থেকে রহিম ছাড়াও গ্রেপ্তার করা হয়েছে নুরুল আনসারি এবং মহম্মদ আজহারউদ্দিনকে ।
যাদবপুরে ATM প্রতারণার যে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, সেক্ষেত্রেও ক্লোন কার্ড ব্যবহার করা হচ্ছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর । সেই সূত্রে সন্দেহ মাথাচাড়া দিচ্ছে ঘটনার পেছনে জামতারা গ্যাং নেই তো?