কলকাতা, 25 সেপ্টেম্বর : তৃণমূলই এখন আসল কংগ্রেস (Congress) ৷ মানে কংগ্রেসি রাজনীতির যে ঘরানা-ঐতিহ্য, সেটা এখন তৃণমূলের (Trinamool Congress) হাতে ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের (Mamata Banerjee) দল অন্তত তেমনটাই মনে করে ৷ আজ, শনিবার দলের মুখপত্র ‘জাগোবাংলা’র সম্পাদকীয়তে সেটাই স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে ৷
যা তৈরি করেছে নতুন রাজনৈতিক বিতর্কের ৷ বঙ্গের সীমানা ছাড়িয়ে যা ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে ৷ পালটা প্রতিবাদও করেছেন লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury) ৷ তিনি বরং তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপির (BJP) হাত শক্ত করার অভিযোগ তুলেছেন ৷ ফলে সপ্তাহের শেষে সরগরম রাজ্য রাজনীতি ৷
আরও পড়ুন : Kanhaiya Kumar : আগামী সপ্তাহে কংগ্রেসে যোগ দিতে পারেন কানহাইয়া-জিগনেশ
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, গত বৃহস্পতিবার সামশেরগঞ্জে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে এই বিতর্কের সূত্রপাত করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) ৷ সরাসরি জানান, কংগ্রেস বিজেপিকে হারাতে পারবে না ৷ তৃণমূলই এই ক্ষেত্রে একমাত্র বিকল্প ৷ পরে ভবানীপুরে প্রচার চালানোর সময় কংগ্রেসকে কটাক্ষ করেন স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ও ৷
তার পর শনিবার ‘জাগোবাংলা’য় স্পষ্ট করা হল তৃণমূলের অবস্থান ৷ এদিন যে সম্পাদকীয়টি প্রকাশিত হয়েছে, তার শিরোনাম ‘আসল কংগ্রেস’ ৷ সেখানে স্পষ্ট করে বোঝানো হয়েছে যে 2014 ও 2019-এ কংগ্রেস বিজেপিকে হারাতে ব্যর্থ ৷ তাই কংগ্রেসের উচিত ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে 2024-এর লোকসভার নির্বাচনে মমতার দলের পাশে দাঁড়ানো ৷ যাতে বিজেপিকে হারানো সম্ভব হয় ৷
আরও পড়ুন : Adhir Ranjan Chowdhury : বিরোধী-ঐক্য ভাঙতে বিজেপির হয়ে কাজ করছে তৃণমূল, অভিযোগ অধীরের
একই সঙ্গে তৃণমূলের দাবি, তারাই বঙ্গ রাজনীতিতে ক্রমশ কংগ্রেসের ঐতিহ্যকে বহন করে চলেছে ৷ সেই কারণেই মানুষ কংগ্রেসের ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে আরও বেশি তৃণমূলকেই আঁকড়ে ধরছে ৷ এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস ‘পচা ডোবা’ হয়ে গিয়েছে বলেও কটাক্ষ করা হয়েছে তৃণমূলের মুখপত্রে (TMC Mouthpiece) ৷ যদিও সেখানে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, কংগ্রেসকে তৃণমূল কোনওভাবেই অসম্মান করে না ৷
প্রসঙ্গত, বঙ্গের সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে সমস্ত আসনের প্রার্থীরা ঘাসফুল ও পদ্মফুল প্রতীকে লড়েছিলেন বটে ! কিন্তু আসল লড়াই হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Prime Minister Narendra Modi) মধ্যে ৷ নির্বাচনী প্রচারে মমতা বিজেপির সমালোচনা যত করেছেন, তার থেকেও বেশি সরব হয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ৷ আবার মোদিও বারবার সভা করতে এসে বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তৃণমূল নেত্রীকে কটাক্ষ করেছেন অনবরত ৷
আরও পড়ুন : Bhabanipur Bye Election : মমতার 'পচাগলা কুকুরের ডেডবডি' মন্তব্যের কড়া সমালোচনা মালব্যের
তাই বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল আসন জয়ের নিরিখে ডাবল সেঞ্চুরি করার পর জাতীয়স্তরে মোদি বিরোধী মুখ হয়ে উঠেছেন মমতা ৷ তাঁকে ঘিরে নতুন করে দানা বাঁধতে শুরু করেছে মোদি বিরোধিতার জাতীয় রাজনীতি ৷ আঞ্চলিক হেভিওয়েট নেতারাও তাঁকে মধ্যমণি করে বিরোধী জোট গড়ার প্রচেষ্টা শুরু করেছেন ৷ তৃণমূলও জাতীয়স্তরে নিজেদের শক্তি বাড়াতে বিভিন্ন রাজ্যে সংগঠন তৈরিতে মন দিয়েছে ৷
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, জাতীয়স্তরে বিজেপির বিরোধী কোনও মঞ্চ তৈরি করতে কংগ্রেসকে অবশ্যই লাগবে ৷ কারণ, দেশের প্রায় 200 লোকসভা আসনে সরাসরি লড়াই হয় কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে ৷ কিন্তু মমতার নেতৃত্ব কি কংগ্রেস মেনে নেবে ? এই প্রশ্নই গত কয়েকমাসে বারবার উঠে এসেছে জাতীয় রাজনীতির আঙিনায় ৷
আরও পড়ুন : Mamata Banerjee: প্রকৃতি তো আমার হাতে নেই, জলযন্ত্রণা মোকাবিলায় কাজের ফিরিস্তি মমতার
রাজনৈতিক মহলের মতে, সেই প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর যে তৃণমূল এখনই চাইছে, সেটা এই সম্পাদকীয়তে স্পষ্ট ৷ তাছাড়া কংগ্রেসের ব্যর্থতাকে মনে করিয়ে দিয়ে তারা জাতীয়স্তরে নিজেদের পালে হাওয়াও টানতে চাইছে ৷ কিন্তু তৃণমূল না হয় নিজেদের আসল কংগ্রেস বলে দাবি করতে পারে ৷ তা বলে কংগ্রসকে ‘পচা ডোবা’ বলে কটাক্ষ করলে কি জাতীয়স্তরে মোদি-বিরোধী মঞ্চে রাহুল-সোনিয়া-প্রিয়াঙ্কাদের পাওয়া যাবে ? এই প্রশ্নও তুলছেন অনেকে ৷
প্রশ্ন তুলছেন স্বয়ং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীও ৷ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘তবে কেন এই পচা ডোবার কাছে আসতে হচ্ছে তাঁকে ? তিনি তো দিল্লি গিয়ে সোনিয়া গান্ধির সঙ্গে দেখা করেছিলেন ।’’ এই প্রশ্ন তোলার আগে অবশ্য অধীর বলেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের কথা বলছেন ৷ অন্যদিকে, তিনি এবং তাঁর দলের নেতারা কংগ্রেসকে দুর্বল করার খেলায় নেমেছেন । প্রশ্ন তুলছেন, কেন কংগ্রেস নেতাদের ইডি ও সিবিআই ধরে না ? আবার ওঁর দলের মুখপত্র বলছে কংগ্রেস পচা ডোবা ।’’
আরও পড়ুন : Mamata Banerjee: আমায় শারীরিক আঘাত করার পরিকল্পনা ছিল বিজেপির: মমতা
অধীরের মতে, ‘‘আসলে এসব করে তিনি বিজেপির হাতকেই শক্ত করছেন । মুখ্যমন্ত্রী বলছেন কেন কংগ্রেস নেতাদের ইডি সিবিআই ডাকে না । কিন্তু সমস্যা হল কংগ্রেস নেতাদের ডাকতে গেলে তাদের তো গরু চুরি, কয়লা চুরি, বালি চুরির সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে । আমাদের নেতারা সৎ । তাই বিজেপি কংগ্রেস মুক্ত ভারত গড়ার কথা বলার পরেও আমাদের নেতাদের ইডি-সিবিআই ডাকতে পারে না ৷’’