কলকাতা, 8 জুন: রাজ্যজুড়ে ভাঙনে বেহাল কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি ৷ এমন একটা সময়েই বাংলায় এলেন দলের জাতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা (Jagat Prakash Nadda) ৷ বুধবার কলকাতার জাতীয় গ্রন্থাগারে (National Library) রাজ্য বিজেপি-র পক্ষ থেকে একটি কর্মসমিতির আয়োজন করা হয় ৷ সেখানেই দলীয় নেতা, কর্মীদের চাঙ্গা করতে ভাষণ দেন নাড্ডা ৷ তাঁর বিশ্বাস, আগামিদিনে এই রাজ্যে বিজেপি ভাল ফল করবেই ৷ একইসঙ্গে, পরিবারতন্ত্র কায়েম নিয়ে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করেন তিনি ৷ বলেন, বাংলার তৃণমূল কংগ্রেস আদতে 'পিসি ভাইপোর দল' !
এদিনের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে কার্যত 'ভোকাল টনিক' দেন নাড্ডা ৷ তিনি বলেন, "রাজনীতিতে কোনও কিছুই চিরস্থায়ী নয়। যা আজ আছে, তা কাল নেই। যা কাল আছে, তা পরশু নেই। আমাদের কাদের সঙ্গে লড়াই করে এগোতে হবে, সেটা আগে নিশ্চিত করতে হবে। তার জন্য আমাদের নিজেদের শক্তি সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল থাকা দরকার ৷ আমাদের ঘরে বা সংসারে কোনও গণ্ডগোল দেখলেই মনে হয় সারা পৃথিবী হয়তো সমস্যায় জর্জরিত। কিন্তু, আদতে সেটা সত্যি নয়। সংসার অনেক বড়। একইভাবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে যদি আপনারা বিচলিত হয়ে পড়েন, তাহলে আগামিদিনে লড়াই করতে পারবেন না। আপনার-আমার জানার বাইরে যে সমীকরণ রয়েছে, তাকেও আমাদের বুঝতে হবে। এই জন্যই আমি বলি, আপনারা ভারতীয় জনতা পার্টির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার যে সুযোগ পেয়েছেন, তাকে ভগবানের আশীর্বাদ মনে করবেন। এটা এমনি এমনি হয়ে যায়নি। রাজনীতিতে গত 40 বছর ধরে আছি। যখন আমি কলেজে ছিলাম তখন কমিউনিস্টরা বিড়ি অথবা সিগারেটের ধোঁয়া আমাদের মুখের সামনে ছেড়ে বলতেন, 'আপনি জানেন না রেভেলিউশন কী!' আমি তখন সেইসব কমরেডদের বলতাম, 'বন্ধুরা তোমরা জানো না ইভোলিউশন কী!' 40 বছর আগে কংগ্রেসের বন্ধুরা আমাকে বলতেন, আমি রাজনীতি বুঝি না! রাজনীতি সম্পর্কে তাঁরা বলতেন, 'এটা সুযোগের সদ্ব্যবহার করার জায়গা ৷ তুমি সঠিক ব্যক্তি, তবে ভুল জায়গায় রয়েছ।' আজকে আমি তাঁদের জিজ্ঞাসা করি, কে সঠিক ব্যক্তি হয়ে ভুল জায়গায় ছিল! এই জন্যই আপনাদের বলছি সেই সময় যদি ওই সমস্ত তাত্ত্বিক কথায় আমি প্রভাবিত হয়ে যেতাম, তাহলে আজকের এই সুদিন দেখতে পেতাম না।"
আরও পড়ুন: Nadda takes Dilip along: মানভঞ্জন করে বঙ্গে দিলীপকে সফরসঙ্গী করলেন নাড্ডা
এদিনের মঞ্চ থেকে সরাসরি তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করেন নাড্ডা ৷ নাম না করে সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ও তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের ৷ নাড্ডা বলেন, "তৃণমূল পিসি ভাইপোর দল ৷ এই দলের কোনও নীতি বা আদর্শ নেই। সমস্ত আঞ্চলিক দলই পরবর্তীতে পারিবারিক পার্টিতে রূপান্তরিত হয়। জম্মু-কাশ্মীরের কথা ভাবুন ৷ এক সময় শ্রীনগরের স্লোগান দেওয়া ন্যাশনাল কনফারেন্স আজকে বাবা-ছেলের পার্টিতে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে, পিডিপি উপত্যকার মানুষের কথা বলার স্লোগান নিয়ে জন্মালেও এখন বাবা নেই তাই মেয়ের পার্টিতে পরিণত হয়েছে। পঞ্জাবের শিরোমণি অকালি দল, অকালি দলের নামে যাত্রা শুরু করলেও পরবর্তীতে বাদল পরিবারের পার্টিতে রূপান্তরিত হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টিও আগে ছিল আঞ্চলিক দল, এখন হয়েছে পরিবারের পার্টি। বিহারে রাষ্ট্রীয় জনতা দলও বাবা-ছেলের দলে পরিণত হয়েছে ৷"
এই প্রেক্ষিতেই নাড্ডা দলীয় কর্মীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, তাঁরা কোনও আঞ্চলিক দলের সঙ্গে লড়াই করছে না ৷ লড়ছেন একটি পারিবারিক দলের সঙ্গে। কোনও কিছুই যেমন চিরস্থায়ী নয়, তেমনই এই পারিবারিক রাজনৈতিক দলগুলির ক্ষমতায় থাকাও চিরস্থায়ী নয়। নাড্ডার বিশ্বাস, মানুষকে পাশে নিয়ে লড়াই করলে বাংলায় একদিন না একদিন বিজেপি ক্ষমতায় আসবেই ৷ তিনি বলেন, মঙ্গলবার কলকাতায় আসার পর যেভাবে তাঁকে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে, তাতে বাংলায় নতুন কিছু হওয়ার সংকেত পাচ্ছেন তিনি!