কলকাতা, 17 অগস্ট : ভোটের আগে ‘খেলা হবে’ ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক স্লোগান ৷ ভোটের পর তা হয়ে গিয়েছে সরকারি কর্মসূচি ৷ বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে খেলা হবে দিবস নিয়ে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কিন্তু 16 অগস্ট দিনভর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের যে ছবি সামনে উঠে এসেছে, তাতে প্রশ্ন উঠছে যে এই কর্মসূচি কি আদৌ সরকারি ছিল ?
কারণ, মঙ্গলবার রাজ্যের প্রতিটি ব্লক, শহর, গ্রাম, মফঃস্বলে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের দেখা গেল উৎসবের মেজাজে দিনটিকে উদযাপন করতে । সেই সব অনুষ্ঠানে আবার শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের উপস্থিত হতে দেখা গিয়েছে ৷ কোথায় তৃণমূলের লোগো দেওয়া জার্সি পড়ে ফুটবল ম্যাচ হয়েছে ৷
আরও পড়ুন : Modi-Dibyendu : আফগান ইস্যুতে মোদির ভূমিকার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে চিঠি দিব্যেন্দুর
স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রশ্ন উঠছে, সরকারি কর্মসূচি কি হাইজ্যাক করে নিল শাসকদল ? সরকারি টাকাতেই কি দিনভর তৃণমূলের ‘খেলা হল’ ?
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর মতে, সাধারণ মানুষের করের টাকায় দলের কর্মসূচি পালিত হল ৷ এই কর্মসূচি তৃণমূলের ছিল বলেই অন্য রাজ্যে খেলা হবে দিবস পালন করেছে শাসকদল ৷ তিনি বলেন, ‘‘16 অগস্ট এই দিনটি উৎসবের নয়, শোকের দিন । তাই এভাবে উৎসব পালনের মাধ্যমে সেই শোক ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে ৷’’
আরও পড়ুন : Mukul Roy : কোন দলে আছেন ? অধ্য়ক্ষের প্রশ্নের জবাবে শিশিরের কৌশলকে হাতিয়ার মুকুলের
1980 সালে কলকাতা ময়দানে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ফুটবল ম্যাচে দু‘দলের সমর্থকদের মধ্যে অশান্তিতে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে ৷ 16 জন দর্শক মারা যান ৷ সুজন চক্রবর্তী সেই কারণেই এই দিনটিকে শোকের দিন বলেছেন ৷ তবে সেই ঘটনার স্মরণেই এই খেলা হবে দিবস বলে আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ কিন্তু দিনভর যা হয়েছে, তাতে ফুটবল মাঠে প্রাণ দেওয়া ওই মানুষগুলিকে অপমান করা হয়েছে বলে মনে করেন বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার ৷
বিজেপি 16 অগস্ট ক্যালকাটা কিলিংয়ের ঘটনা তুলে ধরে ওই দিন খেলা হবে দিবস পালন না করার দাবিতে সরব হয়েছে ৷ এদিন সেই প্রসঙ্গও তুলছেন জয়প্রকাশ ৷ বলেছেন, ‘‘গতকাল খেলা দিবসের নাম করে তৃণমূল কংগ্রেস যে মোচ্ছব পালন করল, তা 1946 সালের শহিদদের অপমান ।’’
আরও পড়ুন : Sushmita Dev : কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে সুস্মিতা দেব
পাশাপাশি তিনি রাজ্যের ক্রীড়া পরিকাঠামোর বেহাল দশা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ৷ তাঁর কথায়, ‘‘অলিম্পিকসে তিনজন বাঙালি প্লেয়ার এই রাজ্য থেকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন । তাঁরা এ রাজ্যে অনুশীলন করতে পারেননি পরিকাঠামোর অভাবে । তাঁদের অন্য রাজ্যে গিয়ে অনুশীলন করতে হয়েছে । যে কোটি কোটি টাকা খরচ করে খেলা হবে দিবসের দিন উৎসব করা হল, তার বদলে এই টাকায় যদি পরিকাঠামো তৈরির চেষ্টা করা হত, তাহলে তা বাংলার ক্রীড়ামোদী মানুষদের কাজে আসত ৷’’
খেলা হবে দিবস নিয়ে বিরোধীদের সব অভিযোগ অবশ্য নস্যাৎ করে দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ । তিনি বলেন, ‘‘সরকারি খরচে তৃণমূল কংগ্রেস নিজের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছে, এটা সর্বৈব মিথ্যা অভিযোগ । 16 অগস্ট খেলা দিবস পালন করার জন্য একটা আহ্বান করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সরকার কী দিয়েছে ? শুধু এক লক্ষ ফুটবল । মানুষ নিজের মতো করে খেলা হবে দিবস পালন করেছেন । তেমনই তৃণমূল কংগ্রেসও নিজেদের মতো করেই দিনটাকে পালন করেছে । এর মধ্যে সরকারি অর্থের অপব্যয়ের প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে । বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ তো গতকাল সকালে ফুটবল খেলেছেন । তো উনি বলুন যে উনি কি সরকারি সাহায্য পেয়েছেন ৷’’
আরও পড়ুন : Khela hobe dibas in Tripura : ত্রিপুরায় 'খেলা হবে' দিবসে ফুটবল নিয়ে মাতলেন প্রসূনরা