ETV Bharat / city

বাংলার সরোবরে ফুটে ওঠার আগেই কি শুকিয়ে যাবে পদ্মের পাপড়ি ? - বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে

মুকুল রায়ের হাত ধরেই কি তৃণমূলে ঘর ওয়াপসি শুরু হবে দল বদলুদের ৷ লাগাতার রক্তক্ষরণ বাড়বে বিজেপির ? তবে কি বাংলার সরোবরে ফুটে ওঠার আগেই শুকিয়ে যাবে পদ্মের পাপড়ি ? আলোচনায় দীপঙ্কর বসু ৷

Is the Lotus wilting before blooming in Bengal?
বাংলার সরোবরে ফুটে ওঠার আগেই কি শুকিয়ে যাবে পদ্মের পাপড়ি ?
author img

By

Published : Jul 7, 2021, 8:14 PM IST

Updated : Jul 7, 2021, 10:24 PM IST

কলকাতা, 7 জুলাই : গেরুয়া বসন ছেড়ে তৃণমূলে ফিরেছেন মুকুল রায় (Mukul Roy) ৷ ফিরছে তাঁর কর্তৃত্ব ৷ আর তারপর থেকেই শুধু একটা প্রশ্নই পাক খাচ্ছে বাংলার ক্ষমতার অলিন্দে ৷ প্রশ্নটা হল, আর কতজন এবং কবে ? অর্থাৎ, মুকুলের পিছু পিছু আর কতজন নাম লেখাবেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের (Mamata Banerjee) দলে ? কে, কবে করবেন সেই ভোলবদল (রাজনৈতিক রংবদল) ?

67 বছরের মুকুল রায় হাই ব্লাড সুগারের রোগী ৷ রোজ নিয়ম করে ইনসুলিন নিতে হয় তাঁকে ৷ এমন একজন মানুষের তৃণমূলে ঘর ওয়াপসি কি সত্যিই বিরাট ক্ষতি করে দেবে গেরুয়া ব্রিগেডের ? মানতে নারাজ বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) ৷ তাঁর সাফ কথা, দলে থাকাকালীন মুকুলের তেমন কোনও অবদান ছিল না ৷ তাই তিনি দল ছেড়ে যাওয়াতেও বিজেপির বিশেষ কোনও ক্ষতি হয়নি ৷

আরও পড়ুন : নিলর্জ্জের মতো মুকুল বিজেপির বেঞ্চে বসেছিলেন, তোপ দিলীপের

ইদানীংকালে রাজনীতিতে রংবদল বিচিত্র কিছু নয় ৷ এমন ঘটনা আখছারই ঘটে ৷ কিন্তু একুশের ভোটপর্বের ঠিক আগে যেভাবে পাইকারি হারে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বিজেপি যোগ দিয়েছেন এবং বিজেপিও তাঁদের যেভাবে দু’হাত বাড়িতে স্বাগত জানিয়েছে, তা কিছুটা উদ্ভটই বটে ৷ এমনকি, বাংলার রাজনীতিতে এমন ঘটনাক্রম খানিক আনকোরাও ৷

ঝাড়াই-বাছাই না করেই এভাবে অন্যের সংসার ভাঙিয়ে নিজের ঘর ভরানোর কারণ কী ? এর পিছনে বিজেপির তরফে দু’টি যুক্তি থাকতে পারে ৷ প্রথমত, একুশের ভোটের আগে যতটা বেশি করে সম্ভব তৃণমূলের সংগঠন ভেঙে দেওয়ার পণ করেছিল বিজেপি ৷ দ্বিতীয়ত, দলে যোগ্য প্রার্থী না থাকায় তৃণমূলের দক্ষ নেতাদের পদ্ম প্রতীকে দাঁড় করানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল ৷

এবার আবার মুকুল রায়ের প্রসঙ্গে ফেরা যাক ৷ দিলীপ ঘোষ যাই বলুন না কেন, মুকুলের বিজেপিতে যোগদান কিংবা তৃণমূলে ফেরাকে আর পাঁচজন দল বদলু নেতার সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে চলবে না ৷ মুকুল যখন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি যোগদান করেছিলেন, তখনও পর্যন্ত রাজ্যে বিজেপি হাওয়া এত প্রবল ছিল না ৷ সেটা ছিল 2017 সাল ৷ লোকসভা নির্বাচন তখনও দু’বছর বাকি ৷ আর বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে সবে মাত্র একবছর ৷ এই অবস্থায় মুকুল বিজেপিতে গিয়েছিলেন, কারণ বিজেপিরও তাঁকে দরকার ছিল ৷ মুকুল ছিলেন তৃণমূলের চাণক্য ৷ বঙ্গ বিজেপির হাতে তেমন কোনও নেতা তখন ছিলেন না ৷ মুকুল সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছিলেন ৷

এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় হল, মুকুলের যোগদানের পরই উনিশের লোকসভা নির্বাচনে অভাবনীয় সাফল্য পায় বিজেপি ৷ এতদিন যাদের বঙ্গ রাজনীতিতে খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর ছিল, তারাই 18 টি আসনে জয়লাভ করে ৷ বস্তুত, মুকুল এবং তাঁর রণকৌশল ছাড়া বিজেপির পক্ষে উত্তরবঙ্গ এবং মতুয়া অধ্যুষিত উত্তর 24 পরগনা কিংবা নদিয়ায় বিজেপির পক্ষে মাথা তুলে দাঁড়ানোই সম্ভব হত না ৷

আরও পড়ুন : কৃষ্ণনগরে পা দিয়েই বিজেপির ঘর ভাঙালেন মুকুল

অন্যদিকে, তৃণমূল ছেড়ে মুকুল কিন্তু খুব একটা শান্তিতে ছিলেন না ৷ নতুন শিবিরে মানিয়ে নিতে সমস্য়া হচ্ছিল তাঁর ৷ বিজেপিতে গিয়ে বড় কোনও পদ বা মন্ত্রিত্বও পাননি তিনি ৷ এর কারণ, তাঁর পাস্ট রেকর্ড ৷ সারদা ও নারদ কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত মুকুল রায় ৷ সেই কারণেই দেশের শাসকদলে নাম লিখিয়েও বিশেষ কিছু লাভ হয়নি তাঁর ৷ 2017 সালে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর 2020-র সেপ্টেম্বরে এসে অবশেষে তাঁকে জাতীয় সহ-সভাপতির পদ দেওয়া হয় ৷ যা নিয়ে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিজেপি নেতা তথা রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি রাহুল সিনহা ৷ তাতে অস্বস্তি বাড়ে গেরুয়া শিবিরের ৷ এরপর একুশের ভোটের ঠিক আগেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) ৷ বরাবর যিনি মুকুল রায়ের বিরোধী পক্ষ হিসাবেই সুবিদিত ৷

তৃণমূল কংগ্রেসে মমতার ভাইপো অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের (Abhishek Banerjee) উত্থান যদি শুভেন্দুর দল বদলের প্রধান কারণ হয়, তাহলে বিজেপিতে শুভেন্দুর যোগদান এবং গুরুত্ব বৃদ্ধি মুকুলের ঘর ওয়াপসিরও মুখ্য কারণ ৷ শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দিতেই তাঁকে কার্যত বঙ্গ বিজেপির নতুন পোস্টার বয় করে দেওয়া হয় ৷ নির্বাচনী প্রচারেও অগ্রণী ভূমিকায় দেখা যায় তাঁকে ৷ অন্যদিকে, সংগঠনে অভ্যস্থ মুকুলকে নামানো হয় ভোটের লড়াইয়ে ৷ অনিচ্ছা সত্ত্বেও কৃষ্ণনগর উত্তর আসন থেকে বিজেপির টিকিটে ভোটে লড়েন তিনি ৷

এরপরও অবশ্য বিজেপির হাত ছাড়েননি মুকুল ৷ প্রথমবার বিধায়ক হয়ে রাজ্য বিধানসভায় পৌঁছে যান তিনি ৷ অন্যদিকে, নন্দীগ্রাম আসনে মমতাকে হারিয়ে বিধায়ক হন শুভেন্দুও ৷ কিন্তু অভিজ্ঞতা বেশি হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে পাশ কাটিয়ে শুভেন্দুকে বিরোধী দলনেতা করে বিজেপি ৷ আর এতেই মুকুল বুঝে যান, তিনি নন, এই মুহূর্তে গেরুয়া নেতৃত্বের প্রথম পছন্দ শুভেন্দুই ৷ এই ঘটনার পর মুকুলের তৃণমূলের প্রত্যাবর্তন ছিল সময়ের অপেক্ষা ৷

আরও পড়ুন : যাওয়া-আসার পথে ...

কিন্তু, প্রশ্ন হল, তৃণমূলে ফিরেই বা মুকুলের অতিরিক্ত কী দেওয়ার আছে ? কারণ, মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় নিজ গুণেই তৃতীয়বারের জন্য বাংলার ক্ষমতায় ফিরেছেন ৷ তাঁর ঝুলিতে রয়েছে 213 টি আসন ৷ পাশপাশি, দলে এখন দু’নম্বর মানুষটি হলেন মমতার ভাইপো অভিষেক ৷ তাহলে কি মুকুলের কাজের পরিসর কমেছে ?

এর উত্তর কিন্তু ইতিমধ্যেই দিয়ে দিয়েছেন মুকুল ৷ সূত্রের খবর, তাঁর হাত ধরেই তৃণমূলে ফিরতে চলেছেন বিজেপির একাধিক নেতা, বিধায়ক ৷ যাঁদের মধ্যে অন্যতম উত্তর 24 পরগনার বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস ৷ এর আগে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে দু’দফায় বিধায়ক হয়েছিলেন তিনি ৷ বস্তুত, মুকুলের পরামর্শেই গেরুয়া পতাকা হাতে তুলে নেন বিশ্বজিৎ ৷ এরপর মতুয়া অধ্যুষিত এলাকা থেকে ভোটে জেতেনও ৷ শোনা যাচ্ছে, সেই তিনিই নাকি বিজেপির বর্তমান নেতা ও বিধায়কদের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের পালা শুরু করবেন ৷

এই জল্পনা সত্যি প্রমাণ হলে দু’টো প্রশ্ন উঠবেই ৷ প্রথমত, নেতাদের ঘরে ফেরা কি তৃণমূলস্তরেও বিজেপি কর্মীদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে ? দ্বিতীয়ত, তা যদি হয়, তাহলে কি মুকুলকে হারিয়ে শেষমেশ বড় খেসারত দিতে হবে মোদি-শাহের দলকে ?

আরও পড়ুন : মুকুল রায়ের সঙ্গে দেখা করলেন তৃণমূল-বিজেপির নেতারা

ইতিমধ্যে শোনা যাচ্ছে, বিশ্বজিতের পথে হেঁটেই তৃণমূলের যোগ দিতে পারেন পুরুলিয়ার বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্য়ায় এবং রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের বিধায়ক পার্থসারথী চট্টোপাধ্য়ায় ৷ এদিকে, বুধবারই মোদি মন্ত্রিসভার রদবদল হল ৷ সেখানে বাংলার চার প্রতিনিধি ঠাঁই পেলেও বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-র (Soumitra Khan) ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি ৷ ছবিটা স্পষ্ট হতেই বিজেপি যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি ৷ যদিও দুপুরে ইস্তফা দিয়ে, শুভেন্দু অধিকারী- দিলীপ ঘোষকে কটাক্ষ করা সৌমিত্র সন্ধ্যাতেই পদত্যাগ প্রত্যাহার করে নিজেকে হাসির খোরাক করে তোলেন ৷

সব মিলিয়ে যে প্রশ্নগুলো এখন গুরুত্বপূর্ণ, তা হল, মুকুল রায়ের হাত ধরেই কি দল বদলের উলটপুরাণ শুরু হবে বাংলায় ? তবে কি বাংলার সরোবরে ফুটে ওঠার আগেই শুকিয়ে যাবে পদ্মের পাপড়ি ? এর উত্তর পেতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে হয় না ৷

কলকাতা, 7 জুলাই : গেরুয়া বসন ছেড়ে তৃণমূলে ফিরেছেন মুকুল রায় (Mukul Roy) ৷ ফিরছে তাঁর কর্তৃত্ব ৷ আর তারপর থেকেই শুধু একটা প্রশ্নই পাক খাচ্ছে বাংলার ক্ষমতার অলিন্দে ৷ প্রশ্নটা হল, আর কতজন এবং কবে ? অর্থাৎ, মুকুলের পিছু পিছু আর কতজন নাম লেখাবেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের (Mamata Banerjee) দলে ? কে, কবে করবেন সেই ভোলবদল (রাজনৈতিক রংবদল) ?

67 বছরের মুকুল রায় হাই ব্লাড সুগারের রোগী ৷ রোজ নিয়ম করে ইনসুলিন নিতে হয় তাঁকে ৷ এমন একজন মানুষের তৃণমূলে ঘর ওয়াপসি কি সত্যিই বিরাট ক্ষতি করে দেবে গেরুয়া ব্রিগেডের ? মানতে নারাজ বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) ৷ তাঁর সাফ কথা, দলে থাকাকালীন মুকুলের তেমন কোনও অবদান ছিল না ৷ তাই তিনি দল ছেড়ে যাওয়াতেও বিজেপির বিশেষ কোনও ক্ষতি হয়নি ৷

আরও পড়ুন : নিলর্জ্জের মতো মুকুল বিজেপির বেঞ্চে বসেছিলেন, তোপ দিলীপের

ইদানীংকালে রাজনীতিতে রংবদল বিচিত্র কিছু নয় ৷ এমন ঘটনা আখছারই ঘটে ৷ কিন্তু একুশের ভোটপর্বের ঠিক আগে যেভাবে পাইকারি হারে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বিজেপি যোগ দিয়েছেন এবং বিজেপিও তাঁদের যেভাবে দু’হাত বাড়িতে স্বাগত জানিয়েছে, তা কিছুটা উদ্ভটই বটে ৷ এমনকি, বাংলার রাজনীতিতে এমন ঘটনাক্রম খানিক আনকোরাও ৷

ঝাড়াই-বাছাই না করেই এভাবে অন্যের সংসার ভাঙিয়ে নিজের ঘর ভরানোর কারণ কী ? এর পিছনে বিজেপির তরফে দু’টি যুক্তি থাকতে পারে ৷ প্রথমত, একুশের ভোটের আগে যতটা বেশি করে সম্ভব তৃণমূলের সংগঠন ভেঙে দেওয়ার পণ করেছিল বিজেপি ৷ দ্বিতীয়ত, দলে যোগ্য প্রার্থী না থাকায় তৃণমূলের দক্ষ নেতাদের পদ্ম প্রতীকে দাঁড় করানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল ৷

এবার আবার মুকুল রায়ের প্রসঙ্গে ফেরা যাক ৷ দিলীপ ঘোষ যাই বলুন না কেন, মুকুলের বিজেপিতে যোগদান কিংবা তৃণমূলে ফেরাকে আর পাঁচজন দল বদলু নেতার সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে চলবে না ৷ মুকুল যখন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি যোগদান করেছিলেন, তখনও পর্যন্ত রাজ্যে বিজেপি হাওয়া এত প্রবল ছিল না ৷ সেটা ছিল 2017 সাল ৷ লোকসভা নির্বাচন তখনও দু’বছর বাকি ৷ আর বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে সবে মাত্র একবছর ৷ এই অবস্থায় মুকুল বিজেপিতে গিয়েছিলেন, কারণ বিজেপিরও তাঁকে দরকার ছিল ৷ মুকুল ছিলেন তৃণমূলের চাণক্য ৷ বঙ্গ বিজেপির হাতে তেমন কোনও নেতা তখন ছিলেন না ৷ মুকুল সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছিলেন ৷

এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় হল, মুকুলের যোগদানের পরই উনিশের লোকসভা নির্বাচনে অভাবনীয় সাফল্য পায় বিজেপি ৷ এতদিন যাদের বঙ্গ রাজনীতিতে খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর ছিল, তারাই 18 টি আসনে জয়লাভ করে ৷ বস্তুত, মুকুল এবং তাঁর রণকৌশল ছাড়া বিজেপির পক্ষে উত্তরবঙ্গ এবং মতুয়া অধ্যুষিত উত্তর 24 পরগনা কিংবা নদিয়ায় বিজেপির পক্ষে মাথা তুলে দাঁড়ানোই সম্ভব হত না ৷

আরও পড়ুন : কৃষ্ণনগরে পা দিয়েই বিজেপির ঘর ভাঙালেন মুকুল

অন্যদিকে, তৃণমূল ছেড়ে মুকুল কিন্তু খুব একটা শান্তিতে ছিলেন না ৷ নতুন শিবিরে মানিয়ে নিতে সমস্য়া হচ্ছিল তাঁর ৷ বিজেপিতে গিয়ে বড় কোনও পদ বা মন্ত্রিত্বও পাননি তিনি ৷ এর কারণ, তাঁর পাস্ট রেকর্ড ৷ সারদা ও নারদ কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত মুকুল রায় ৷ সেই কারণেই দেশের শাসকদলে নাম লিখিয়েও বিশেষ কিছু লাভ হয়নি তাঁর ৷ 2017 সালে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর 2020-র সেপ্টেম্বরে এসে অবশেষে তাঁকে জাতীয় সহ-সভাপতির পদ দেওয়া হয় ৷ যা নিয়ে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিজেপি নেতা তথা রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি রাহুল সিনহা ৷ তাতে অস্বস্তি বাড়ে গেরুয়া শিবিরের ৷ এরপর একুশের ভোটের ঠিক আগেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) ৷ বরাবর যিনি মুকুল রায়ের বিরোধী পক্ষ হিসাবেই সুবিদিত ৷

তৃণমূল কংগ্রেসে মমতার ভাইপো অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের (Abhishek Banerjee) উত্থান যদি শুভেন্দুর দল বদলের প্রধান কারণ হয়, তাহলে বিজেপিতে শুভেন্দুর যোগদান এবং গুরুত্ব বৃদ্ধি মুকুলের ঘর ওয়াপসিরও মুখ্য কারণ ৷ শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দিতেই তাঁকে কার্যত বঙ্গ বিজেপির নতুন পোস্টার বয় করে দেওয়া হয় ৷ নির্বাচনী প্রচারেও অগ্রণী ভূমিকায় দেখা যায় তাঁকে ৷ অন্যদিকে, সংগঠনে অভ্যস্থ মুকুলকে নামানো হয় ভোটের লড়াইয়ে ৷ অনিচ্ছা সত্ত্বেও কৃষ্ণনগর উত্তর আসন থেকে বিজেপির টিকিটে ভোটে লড়েন তিনি ৷

এরপরও অবশ্য বিজেপির হাত ছাড়েননি মুকুল ৷ প্রথমবার বিধায়ক হয়ে রাজ্য বিধানসভায় পৌঁছে যান তিনি ৷ অন্যদিকে, নন্দীগ্রাম আসনে মমতাকে হারিয়ে বিধায়ক হন শুভেন্দুও ৷ কিন্তু অভিজ্ঞতা বেশি হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে পাশ কাটিয়ে শুভেন্দুকে বিরোধী দলনেতা করে বিজেপি ৷ আর এতেই মুকুল বুঝে যান, তিনি নন, এই মুহূর্তে গেরুয়া নেতৃত্বের প্রথম পছন্দ শুভেন্দুই ৷ এই ঘটনার পর মুকুলের তৃণমূলের প্রত্যাবর্তন ছিল সময়ের অপেক্ষা ৷

আরও পড়ুন : যাওয়া-আসার পথে ...

কিন্তু, প্রশ্ন হল, তৃণমূলে ফিরেই বা মুকুলের অতিরিক্ত কী দেওয়ার আছে ? কারণ, মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় নিজ গুণেই তৃতীয়বারের জন্য বাংলার ক্ষমতায় ফিরেছেন ৷ তাঁর ঝুলিতে রয়েছে 213 টি আসন ৷ পাশপাশি, দলে এখন দু’নম্বর মানুষটি হলেন মমতার ভাইপো অভিষেক ৷ তাহলে কি মুকুলের কাজের পরিসর কমেছে ?

এর উত্তর কিন্তু ইতিমধ্যেই দিয়ে দিয়েছেন মুকুল ৷ সূত্রের খবর, তাঁর হাত ধরেই তৃণমূলে ফিরতে চলেছেন বিজেপির একাধিক নেতা, বিধায়ক ৷ যাঁদের মধ্যে অন্যতম উত্তর 24 পরগনার বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস ৷ এর আগে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে দু’দফায় বিধায়ক হয়েছিলেন তিনি ৷ বস্তুত, মুকুলের পরামর্শেই গেরুয়া পতাকা হাতে তুলে নেন বিশ্বজিৎ ৷ এরপর মতুয়া অধ্যুষিত এলাকা থেকে ভোটে জেতেনও ৷ শোনা যাচ্ছে, সেই তিনিই নাকি বিজেপির বর্তমান নেতা ও বিধায়কদের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের পালা শুরু করবেন ৷

এই জল্পনা সত্যি প্রমাণ হলে দু’টো প্রশ্ন উঠবেই ৷ প্রথমত, নেতাদের ঘরে ফেরা কি তৃণমূলস্তরেও বিজেপি কর্মীদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে ? দ্বিতীয়ত, তা যদি হয়, তাহলে কি মুকুলকে হারিয়ে শেষমেশ বড় খেসারত দিতে হবে মোদি-শাহের দলকে ?

আরও পড়ুন : মুকুল রায়ের সঙ্গে দেখা করলেন তৃণমূল-বিজেপির নেতারা

ইতিমধ্যে শোনা যাচ্ছে, বিশ্বজিতের পথে হেঁটেই তৃণমূলের যোগ দিতে পারেন পুরুলিয়ার বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্য়ায় এবং রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের বিধায়ক পার্থসারথী চট্টোপাধ্য়ায় ৷ এদিকে, বুধবারই মোদি মন্ত্রিসভার রদবদল হল ৷ সেখানে বাংলার চার প্রতিনিধি ঠাঁই পেলেও বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ-র (Soumitra Khan) ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি ৷ ছবিটা স্পষ্ট হতেই বিজেপি যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি ৷ যদিও দুপুরে ইস্তফা দিয়ে, শুভেন্দু অধিকারী- দিলীপ ঘোষকে কটাক্ষ করা সৌমিত্র সন্ধ্যাতেই পদত্যাগ প্রত্যাহার করে নিজেকে হাসির খোরাক করে তোলেন ৷

সব মিলিয়ে যে প্রশ্নগুলো এখন গুরুত্বপূর্ণ, তা হল, মুকুল রায়ের হাত ধরেই কি দল বদলের উলটপুরাণ শুরু হবে বাংলায় ? তবে কি বাংলার সরোবরে ফুটে ওঠার আগেই শুকিয়ে যাবে পদ্মের পাপড়ি ? এর উত্তর পেতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে হয় না ৷

Last Updated : Jul 7, 2021, 10:24 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.