কলকাতা, 19 অগস্ট: রাজ্যে গরুপাচার (Cattle Smuggling Case) তদন্তে নেমে সিবিআই-এর হাতে এবার এল পুরো কর্মকাণ্ডের ব্লু প্রিন্ট ৷ বীরভূমের একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রাথমিকভাবে সিবিআই এর গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, মূলত পঞ্জাব, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড থেকে চোরাপথে শয়ে শয়ে গরু আনা হতো বাংলায় ৷ পরে সেই গরুগুলিকে মুর্শিদাবাদের একাধিক নির্জন জায়গায় অস্থায়ী খামারে রাখার বন্দোবস্ত করা হতো ৷ সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদের এই সকল নির্জন অস্থায়ী খামারগুলিতে নজরদারি চালাতেন সংশ্লিষ্ট জেলার বেশ কয়েকজন পুলিশ আধিকারিক ৷ তাঁদের নামও ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে বলে সিবিআই সূত্র খবর ৷
একাধিক গরু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, মূলত ভিনরাজ্য থেকে প্রজনন ক্ষমতা (Infertile Cows) নেই এমন গরু চিহ্নিত করে নিয়ে আসা হত ৷ সিবিআই জানাচ্ছে প্রজনন ক্ষমতা নেই এমন গরুর চাহিদা পাচারকারীদের কাছে অত্যন্ত বেশি ৷ এই সব গরুতে লভ্যাংশ থাকে অনেক ৷ মুর্শিদাবাদের সেইসব নির্জন খামার থেকে গরুগুলিকে ট্রাকে করে রাতের অন্ধকারে নিয়ে যাওয়া হত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে (India Bangladesh Border) ৷ সিবিআই সূত্রে খবর, এর পরে সেই গরুগুলিকে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একাংশের সাহায্যে সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে পাচার করা হত ৷
আরও পড়ুন: বোলপুরে অনুব্রত কন্যার নামে থাকা রাইস মিলে সিবিআই হানা
জানা গিয়েছে, এর সঙ্গে জড়িত জওয়ানদের গরু পিছু হাজার টাকা করে দিতে হত ৷ বাদ যেতেন না শুল্ক বিভাগের আধিকারিকরাও ৷ গরু পিছু শুল্ক বিভাগের আধিকারিকদের দিতে হত 500 টাকা ৷ সীমান্তরক্ষী বাহিনী, শুল্ক বিভাগ, রাজ্য পুলিশ এবং প্রশাসনিক আধিকারিকদের টাকা দেওয়ার পরেও একটা বিপুল অংকের লভ্যাংশ ঢুকত গরু পাচারকারীদের অ্যাকাউন্টে ৷ সিবিআই সূত্রের খবর, ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রজনন ক্ষমতাহীন গরুগুলি প্রায় 10 গুণ বেশি দামে বিক্রি হয়ে যেত ৷
আরও পড়ুন: বিতর্কের জেরেই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের গাড়ির ঠাঁই চাল কলে, দাবি চেয়ারম্য়ানের
সিবিআই সূত্রে খবর, গরুপাচারের নেপথ্যে যে কেবল সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং শুল্ক বিভাগের আধিকারিকরা যুক্ত রয়েছেন তেমনটা নয় ৷ রাজ্য পুলিশের একাংশ প্রবলভাবে যুক্ত এই চক্রে ৷ সিবিআই এর প্রশ্ন, রাতের অন্ধকারে ট্রাকের চাপিয়ে গরুগুলিকে রাজ্য ও জাতীয় সড়ক দিয়ে সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হত ৷ এক্ষেত্রে গোটা ব্যাপারটি রাজ্য পুলিশের কর্তাদের চোখে পড়ল না কেন ? এমনকি গরু ভর্তি একাধিক ট্রাক রাতের অন্ধকারে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে, অথচ তার কোনও নাগাল পেল না রাজ্য পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ! সেই সূত্রেই সিবিআই এর সন্দেহ, সীমান্তরক্ষী বাহিনী, শুল্ক দফতর এবং রাজ্য পুলিশ থেকে শুরু করে প্রশাসনের একাধিক কর্তা-ব্যক্তি এই গরুপাচার চক্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত রয়েছেন ৷