কলকাতা, 25 জুন : প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলিতে চলছে দেদার ব্যবসা ৷ টেস্টের নামে রোগীর পরিবারের থেকে গলাকাটা মূল্য নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে । একই পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক এক রকম মূল্য ধার্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ৷ ওষুধের দাম থেকে শুরু করে, প্যাথলজিক্যাল টেস্টের দাম নিয়ে চলছে বিস্তর অরাজকতা । এর ফলে রোগী ও তাঁদের পরিবারকে আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে ।
অথচ এই পরীক্ষাগুলি না করলেই নয় । রিপোর্ট না পেলে চিকিৎসা হবে না । এইসব পরীক্ষা আর চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে রোগীকে । অসুখ যত জটিল তত বেশি খরচ এই সব পরীক্ষার । একাধিক পরীক্ষা না করালে ওষুধ দিতে চান না চিকিৎসকরা ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগীর পরিবারের সদস্য বলেন যে, ‘‘আমি হাওড়ায় থাকি । সেখানে আগে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ছিল ৷ যেটি আজ থেকে দু’বছর আগে রাতারাতি একটি নার্সিংহোমে রূপান্তরিত হয় । আমার বাবার যখন করোনা হয় তখন অন্য কোথাও বেড না পেয়ে বাবাকে ওখানেই ভর্তি করানো হয়েছিল । সেটা নামেই একটি নার্সিংহোম ছিল । কারণ সেখানে চিকিৎসার কোনও সরঞ্জামই উপলব্ধ ছিল না । সব কিছুই আমাদের বাইরের থেকে কিনে আনতে বলা হত । এমনকি করোনার যে প্রধান ওষুধ রেমেডিসিভির, সেই ওষুধটিও হাসপাতালে ছিল না । কতৃপক্ষ স্পষ্টই জানিয়ে দেয় যে, তাদের পক্ষে তা জোগাড় করাও সম্ভব নয় । তাই যেভাবেই হোক আমাদেরই নিয়ে আসতে হবে সেই ওষুধ ৷’’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘‘আমার বাবার যখন অক্সিজেনের মাত্রা ভীষণভাবে কমতে থাকে, নার্সিংহোম কতৃপক্ষ তাঁকে অক্সিজেনও ঠিক মতো দেয়নি । ভর্তির পাঁচ দিন পর ওই নার্সিংহোমের গাফিলতিতে আমার বাবার মৃত্যু হয় ৷’’
পিপল ফর বেটার ট্রিটমেন্টের প্রেসিডেন্ট চিকিৎসক কুণাল সাহা বলেন, ‘‘কোভিড অতিমারীর জেরে রাজ্য জুড়ে যে অপচিকিৎসার পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ৷ তার শিকার হয়ে বহু মানুষ আমাদের সঙ্গে প্রতিদিন যোগাযোগ করেছে । কেউ অক্সিজেনের অভাবে নিজের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন ৷ আবার কেউ বা ওষুধের অভাবে বা চিকিৎসার গাফিলতিতে মারা গেছেন । আরও দুঃখের বিষয় হল মানুষের দুর্দশার সুযোগ নিয়ে বহু ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি ও হাসপাতাল রোগীদের থেকে মুনাফা লুটছে । রোগীর পরিবার অর্থনৈতিকভাবে সর্বশান্ত হয়ে পড়ছে । ডায়াগনস্টিক ল্যাবগুলি পরীক্ষার জন্য যে ধরনের চার্জ করছে তার কোনও হিসেব নেই । রোগীদের থেকে পরীক্ষা ও চিকিৎসার নামে লাখ টাকার বিল ধরাচ্ছে । বিষয়টি আমরা স্বাস্থ্য ভবনে জানিয়েছি । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠিও দিয়েছে’’ ৷ তিনি আরও বলেন যে, ‘‘এই ধরনের অন্যায় দমন করতে স্বাস্থ্য ভবনকে কঠোর হতে হবে । যাঁরা এই ধরনের অনৈতিক কাজ করছে তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে’’ ৷