কলকাতা, 31 অগস্ট: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee on Dirty politics) বারবারই বলেছেন, তাঁর কাছে রাজনীতি অর্থ উপার্জনের উপায় নয় । তাই তাঁর দলে বিত্তবান নয়, চান বিবেকবান কর্মী । কিন্তু বিগত কয়েকদিন যেভাবে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অনুব্রত মণ্ডলকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের সঙ্গে অর্থের যোগ প্রকাশ্যে এসেছে, যেভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের একের পর এক নেতা-মন্ত্রীর নাম দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে, তার জেরে বিরোধী আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও (Mamata Banerjee)। এই অবস্থায় গত 29 অগস্ট গান্ধি মূর্তির পাদদেশে ছাত্র সমাবেশ থেকে মমতা বলেছিলেন, সমাজসেবা করতেই রাজনীতিতে এসেছেন তিনি । বুধবার আরও একধাপ এগিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর আবেগঘন সংযোজন, "এইরকম নোংরা রাজনীতি হবে জানলে আগে রাজনীতিতে আসতাম না ।"
হঠাৎ কেন এই ধরনের কথা বলতে হচ্ছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে (Dirty politics)। কোন প্রেক্ষিত থেকে এ দিন তিনি এই কথাগুলো বললেন, তা একটু তলিয়ে দেখা যাক । প্রসঙ্গত নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পর থেকেই বিভিন্ন ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে । এই আক্রমণের হাত থেকে ছাড় পাননি মুখ্যমন্ত্রী নিজেও । কোনও তথ্য প্রমাণ ছাড়া যেভাবে একদিকে মিডিয়া ট্রায়াল চলছে, একইসঙ্গে সমান্তরাল ভাবে চলছে বিরোধীদের আক্রমণ । আর তাতেই ক্ষুব্ধ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী । যেভাবে বৃহৎ তৃণমূল পরিবারের সম্মানহানি করা হচ্ছে তাতে আহত তিনি । নবান্নের সাংবাদিক সম্মেলন থেকে এ দিন সে কথাই স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন মমতা ।
এ দিন মমতা বলেন, "রাজনীতি এত নিকৃষ্ট হয়ে যাবে জানলে আগেই রাজনীতি ছেড়ে দিতাম । এখন মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ তাই রাজনীতি ছাড়তে পারছি না । আমার সব কিছুই মানুষের জন্য । মানুষ যতদিন চাইবে ততদিন থাকব । মানুষ যেদিন চাইবে না, আমার এক মুহর্ত সময় লাগবে না ছেড়ে চলে যেতে । অতীতেও আমি মন্ত্রিত্ব পদ ছেড়ে দিয়েছি । এ বারও মানুষ চাইলে সব ছেড়ে দিতে সময় লাগবে না আমার । একটা ঝোলা ব্যাগ নিয়ে রেল মন্ত্রক ছেড়ে চলে এসেছিলাম । ক্রীড়া মন্ত্রক ছেড়ে দিয়েছিলাম ।"
কিছুটা অভিযোগের সুরেই এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আমাকে প্রতি পদে পদে অপমান করা হচ্ছে । আমার সৃষ্টিশীলতা নিয়ে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে । আবারও বলছি, সমাজ সেবার জন্য আমি রাজনীতিতে এসেছি । কুত্সার রাজনীতি পছন্দ করি না । এখন ব্ল্যাকমেলের রাজনীতি হচ্ছে । এরকম নোংরা রাজনীতি আগে দেখিনি । আর রাজনীতি এত নোংরা ছিল না । তা হলে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মতো মানুষেরা রাজনীতিতে আসতেন না ।"
আরও পড়ুন: আমি সেটিং করি না, আমাকে সেটিং করার জন্য লোক বসে আছে: মমতা
পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতারের পর যেভাবে তৃণমূলের অন্য নেতা-মন্ত্রীদের আক্রমণ করা হচ্ছে, তা নিয়েও মুখ খুলেছেন মমতা । এ ক্ষেত্রে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, "তৃণমূলকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা চলছে । তৃণমূল কংগ্রেস পরিবারটাকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করবেন না, তাহলে ছেড়ে কথা বলব না । অনেক অপমান করেছেন আপনারা । জেনেশুনে কোনও অন্যায় করিনি । একটা মশা মারতেও ভয় পাই । আর রক্ত তো দেখতে হোক চাইই না । দেখতে চাই না মৃতদেহ । তবু আমার বিরুদ্ধে আমার দলের বিরুদ্ধে নানা কুত্সা । এই অপমান মানুষ মেনে নেবে না । সময় এলে মানুষই এর জবাব দেবে ।"
এ দিনও মুখ্যমন্ত্রী তাঁর আয়ের প্রসঙ্গ তুলে আনেন । তিনি বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আমি কোনও বেতন নিই না । আমি সাতবারের সাংসদ । প্রায় 12 বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী আছি । সব মিলিয়ে আমার আয় প্রায় 5-6 কোটি সাদা টাকা তো হবেই । আমার চেয়ারের লোভ নেই । টাকারও লোভ নেই । তাও আমাকে প্রতি পদে পদে অপমান করা ।"
এ দিন কিছুটা অভিমানের সুর শোনা যায় তাঁর গলায় । মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বই লিখলে আপত্তি কোথায় ? বাচ্চাদের সঙ্গে মিশতে গেলে নিজেকে বাচ্চা মনে করতে হয় । তাও সোশাল মিডিয়ায় আমার লেখা নিয়ে হাসাহাসি হয় । দু'বার আঁকার প্রদর্শনী করেছিলাম । যা টাকা পেয়েছি দান করে দিয়েছি । আমি ছোট থেকেই লিখি । আমার সৃজনশীলতা আমাকে গান লিখতে, বই লিখতে অনুপ্রেরণা দিলে আমি লিখি । আপনারও লিখুন, কে না করেছে । আমার তো তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া কোনও পরিবার নেই । রান্না করতে হয় না, অভিষেকের মা আমাকে দেখে । তাই এ সব নিয়ে থাকি।"