কলকাতা, 14 সেপ্টেম্বর: কাল পুলিশ অত্যন্ত ধৈর্যের কাজ করেছে (Abhishek Talks Tough)৷ আমি যদি পুলিশের জায়গায় থাকতাম, তাহলে আমি এখানে (কপালে) শ্যুট করতাম ৷ বিজেপির নবান্ন অভিযানে বিক্ষোভকারীদের হামলায় জখম পুলিশ আধিকারিক দেবজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে এসএসকেএম হাসপাতালে দেখতে গিয়ে এ কথা বললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)৷
মঙ্গলবার বিজেপির নবান্ন অভিযানে কলকাতা পুলিশের এসিপি দেবজিৎ চট্টোপাধ্যায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের হাতে বেধড়ক মার খান । তাঁকে রাস্তায় ফেলে নির্মমভাবে পেটানো হয় । তাঁর বাঁ হাতে গুরুতর আঘাত লেগেছে । হাত ভেঙে গিয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর । বুধবার বিকেলে সেই পুলিশ আধিকারিককে এসএসকেএম হাসপাতালে দেখতে যান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ ৷ পাশাপাশি গোটা পরিস্থিতি শক্ত হাতে, সংযম দেখিয়ে সামাল দেওয়ার জন্য কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য পুলিশকে ধন্যবাদ জানান তিনি । বলেন, "কাল যেভাবে বিজেপি তাণ্ডব চালিয়েছে এবং পুলিশ শান্তভাবে সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছে, তাতে পুলিশকে কুর্নিশ জানাই । একজন নিরস্ত্র পুলিশ অফিসারকে কীভাবে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়েছে, তা গোটা দেশের মানুষ দেখেছে ।" এরপরই অভিষেকের বিস্ফোরক মন্তব্য, "আমি দেবজিৎবাবুকে বলেছি, আমি গতকাল আপনার জায়গায় থাকলে সোজা কপালে শ্যুট করে দিতাম । কিন্তু আপনাদের মতো পুলিশ অফিসার এখনও আছে বলে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা আগের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে ।"
এ প্রসঙ্গে বাম আমলের কথা টেনে আনেন অভিষেক ৷ তিনি বলেন, "যাঁরা বড় বড় মুখ করে বলেন রাজ্যে কী পরিবর্তন হয়েছে, তাঁদের বলি, গতকালের ঘটনায় সেটাই স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে । এটাই বাংলার পরিবর্তন । গত 34 বছরে সিপিএমের হার্মাদ বাহিনী যেভাবে তাণ্ডব করেছিল, তারাই আজ বিজেপিতে গিয়ে শামিল হয়েছে । পুলিশকে দিয়ে কীভাবে অন্যায়, অত্যাচার, গুন্ডামি চালানো হত...একুশে জুলাই, নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর, নিতাই, মরিচঝাঁপির মতো ঘটনা আছে । কিন্তু কাল যেভাবে পুলিশের উপর নির্মমভাবে অত্যাচার হয়েছে, তাতে পুলিশ যথেষ্ট ধৈর্য দেখিয়েছে । পুলিশকে আমি কুর্নিশ জানাই । ধন্যবাদ জানাই ।"
আরও পড়ুন: পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ভিডিয়ো টুইট, বিজেপি প্রত্যাখ্যানের ডাক অভিষেকের
বিজেপির বিরুদ্ধে সুর আরও চড়িয়ে অভিষেক বলেন, "গতকাল যে জায়গায় পুলিশের গাড়িটি জ্বালানো হয়েছে, তার চারপাশে কোনও পেট্রল পাম্প ছিল না । তাহলে কীভাবে পেট্রল ও ডিজেল জলের বোতলে ভরে নিয়ে আসা হল ? তাহলে পরিকল্পনা মাফিক পুলিশের গাড়িতে আগুন জ্বালানো হয়েছে । পুলিশের উপর আক্রমণ করা হয়েছে । তাছাড়া যে ইস্যুতে বিজেপি কাল আন্দোলন করেছিল, তার একটা শব্দ কোনও নেতা উচ্চারণ করেননি । তাঁরা কাল যেভাবে অত্যাচার চালিয়েছে, তাতে পুলিশ পারত এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে সেই গুন্ডাবাহিনীকে, কুড়ি-বাইশ জনকে মেরে ফেলতে । কিন্তু কয়েকজন গুন্ডার জন্য আরও কয়েকজন সাধারণ মানুষের জীবন যাবে, তা আমরা হতে দিতে পারি না । পুলিশ ধৈর্য ধরে সমস্তটাই শান্তভাবে মেটানোর চেষ্টা করেছে । কিন্তু সিপিএম এর আগে এ রকম ভাবেই পুলিশ দিয়ে গুলি চালিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালে এমন ঘটনা হয়নি । হচ্ছে না ৷ এটাই পরিবর্তন ।
গতকাল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মহিলা পুলিশ কর্মীদের উদ্দেশ্যে যে বক্তব্য রেখেছিলেন, তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে । সে বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমি সাধারণ মানুষকে বলব বিশ্বাস করে যাঁরা বিজেপি নেতাদের ঘুষ দেন, তোলা দেন, তাঁদেরকে বলব, এ বার থেকে মহিলাকে দিয়ে বিজেপি নেতাদের কাছে ঘুষ পাঠান, তাহলে তাঁরা ঘুষ নেবেন না ।"
এখানেই শেষ নয় । অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, "কাল গোটা ঘটনার প্রেক্ষিতে যাঁরা সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করেছেন, পুলিশের উপর অত্যাচার করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা এবং আইনত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ।"
কলকাতা হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, "গতকাল 4 ঘণ্টা ধরে যে গুন্ডামি চলেছে, সেই গুন্ডাদের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্ট কী ব্যবস্থা নেবে, তা দেখতে 19 তারিখের শুনানিতে আমরা নজর রাখব । বিজেপি কর্মী মানে আমরা যা ইচ্ছা তাই করব এবং পার পেয়ে যাব, এমনটা বাংলায় চলবে না ।"