ETV Bharat / city

মমতাকে চাপে রাখলেও রাষ্ট্রপতি শাসন জারি সহজ নয়, মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের

চব্বিশের ভোটে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় যাতে খুব বেশি সক্রিয় না হতে পারেন, সেই কারণেই তাঁকে তাঁর রাজ্যে ব্যস্ত রাখতে চাইছে বিজেপি ৷ আর এই জন্যই রাষ্ট্রপতি শাসন জারি বা রাজ্যভাগের মতো বিষয়গুলি নিয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে ৷ তবে বাস্তবে এমনটা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ৷ বরং মমতা সরকারকে চাপে রাখার পিছনে একাধিক অন্যান্য় কারণ খুঁজে পাচ্ছে তাঁরা ৷

experts opinion on presidential rule in West Bengal
চব্বিশের ভোটের আগে মমতাকে চাপে রাখলেও রাষ্ট্রপতি শাসন জারি সহজ নয়, মত ওয়াকিবহাল মহলের
author img

By

Published : Jul 5, 2021, 8:35 PM IST

কলকাতা, 5 জুলাই : চব্বিশের ভোটে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে (Mamata Banerjee) ঠেকাতেই কি তাঁকে নাস্তানাবুদ করার চেষ্টা করছে বিজেপি ? একের পর এক ইস্য়ুতে তাঁকে ব্য়স্ত রাখছে গেরুয়া শিবির ? যাতে রাজ্য় সামলে পরবর্তী লোকসভা ভোটের জন্য আর সময় বের করতে না পারেন তৃণমূল নেত্রী ? নন্দীগ্রামে ভোটে হারলেও গোটা রাজ্য়ে 200-রও বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ তৃতীয়বারের জন্য রাজ্য়ের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন তিনি ৷ আর তারপর থেকেই একের পর এক ইস্যুতে কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাত বেড়েছে রাজ্য়ের ৷

ইদানীংকালে সবথেকে যে বিষয়গুলি নিয়ে বেশি চর্চা হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম নারদ-কাণ্ড ৷ রাজ্য়ে লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যেই সম্প্রতি চার হেভিওয়েটকে গ্রেফতার করে সিবিআই ৷ সেই ঘটনা ঘিরে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে সরব হয় বিজেপি ৷ একইসঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়েও চলছে লাগাতার প্রচার ও প্রতিবাদ ৷ রুজু হয়েছে মামলা ৷ আর এই বিষয়টিকে হাতিয়ার করেই রাজ্য়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি, এমনকী আলাদা রাজ্য গঠনেরও জিগির তুলছেন বিজেপি নেতাদের একাংশ ৷

আরও পড়ুন : Post Poll Violence : রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি নিয়ে কেন্দ্রের মত জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট

ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, পুরোটাই আসলে গেরুয়া বাহিনীর কৌশল ৷ রাষ্ট্রপতি শাসন জারি বা আলাদা রাজ্য গঠন অত সোজা নয় ৷ কিন্তু এই ইস্য়ুগুলিকে জিইয়ে রাখলে মমতাকে রাজ্য়ের পরিস্থিতি নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হবে ৷ প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র যেমন মনে করেন, রাষ্ট্রপতি শাসন জারি বা আলাদা রাজ্য গঠনের মতো হঠকারী পদক্ষেপ বিজেপি করবে না ৷ কারণ, তাতে তাদের লাভের থেকে লোকসানটাই বেশি হবে ৷ নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে আসা একটা সরকারকে ফেলে দেওয়া হলে জনমানসে বিজেপির প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরি ৷ শুভাশিসবাবু মনে করছেন, এর পিছনে অন্য সমীকরণ রয়েছে ৷ আসলে একুশের নির্বাচনে যে পালাবদলের স্বপ্ন বিজেপি দেখেছিল, তা ভাঙতেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলের যোগদানের হিড়িক বেড়েছে ৷ সেই রক্তক্ষরণ রুখতেই তৃণমূলকে চাপে রাখছে গেরুয়া বাহিনী ৷

বিজেপির চাপের রাজনীতির অন্য একটি ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. অমল মুখোপাধ্য়ায় ৷ তাঁর মতে, বিরোধী হিসেবে বিজেপির একক উত্থানই কোনও কোনও ক্ষেত্রে তাদের আরও আক্রমণাত্মক করে তুলেছে ৷ এই মুহূর্তে বিজেপি ছাড়া রাজ্য়ে আর কোনও বিরোধী শক্তির অস্তিত্ব নেই বললেই চলে ৷ তাই তারা যে নিজেদের পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে শাসককে চাপে রাখবে, সেটাই স্বাভাবিক ৷ তাছাড়া, তারা কোনও জোটেও নেই ৷ ফলে শরিকের সঙ্গে মানিয়ে চলার বাধ্যবাধকতাও নেই তাদের ৷ এই কারণেই রাষ্ট্রপতি শাসনের জুজু দেখাতে পারছে তারা ৷

আরও পড়ুন : রাষ্ট্রপতি শাসন ছাড়া রাজ্যে শান্তি আসবে না, মালদায় দাবি দিলীপের

রাজ্য়ে সরকার ফেলে দেওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তীও ৷ তাঁর মতে, একুশের ভোটের ফল বেরোনোর পর থেকেই রাজ্য়ে শক্তি হারাচ্ছে বিজেপি ৷ কিন্তু কেন্দ্রে আবার তাদেরই সরকার রয়েছে ৷ আর সেই যোগাযোগকে কাজে লাগিয়েই রাজ্য সরকারকে চাপে রাখতে চাইছে তারা ৷

একুশের ভোটে বাংলা জয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন মোদি-শাহরা ৷ সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে ৷ উপরন্তু, বাংলায় তাঁর হ্য়াট্রিক মমতাকে জাতীয় স্তরেও বিজেপি বিরোধী প্রধান মুখ হিসাবে সামনের সারিতে তুলে এনেছে ৷ জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্ব বেড়েছে তাঁর ৷ একথা ঠিক যে, শুধুমাত্র মমতার সঙ্গে হাত মিলিয়ে জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী একক শক্তি গড়ে তোলা সহজ নয় ৷ সেক্ষেত্রে জাতীয় দল কংগ্রেসের সহযোগিতা দরকার ৷ কিন্তু, তা সত্ত্বেও যে মমতা বাংলায় বিজেপির বিজয় রথ আটকে দিয়েছেন, তাঁকে বাড়তি কোনও সুযোগ দিতে রাজি নয় গেরুয়া শিবির ৷ মমতা নিজেও আগামী দিনে দিল্লি জয়ের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ৷ কিন্তু তিনি যদি বাংলার নিয়েই ব্য়স্ত থাকেন, তাহলে তাঁর পক্ষেও সেই পরিকল্পনা নিয়ে এগোনো কঠিন ৷ আর সেই কারণেই ভোটে পরাজয়ের পরও মমতাকে নিস্তার দিতে নারাজ গেরুয়া শিবির ৷ তবে তাতে রাজ্য়ে সরকার বদলের কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই মত রাজনৈতিক মহলের ৷

কলকাতা, 5 জুলাই : চব্বিশের ভোটে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে (Mamata Banerjee) ঠেকাতেই কি তাঁকে নাস্তানাবুদ করার চেষ্টা করছে বিজেপি ? একের পর এক ইস্য়ুতে তাঁকে ব্য়স্ত রাখছে গেরুয়া শিবির ? যাতে রাজ্য় সামলে পরবর্তী লোকসভা ভোটের জন্য আর সময় বের করতে না পারেন তৃণমূল নেত্রী ? নন্দীগ্রামে ভোটে হারলেও গোটা রাজ্য়ে 200-রও বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ তৃতীয়বারের জন্য রাজ্য়ের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন তিনি ৷ আর তারপর থেকেই একের পর এক ইস্যুতে কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাত বেড়েছে রাজ্য়ের ৷

ইদানীংকালে সবথেকে যে বিষয়গুলি নিয়ে বেশি চর্চা হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম নারদ-কাণ্ড ৷ রাজ্য়ে লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যেই সম্প্রতি চার হেভিওয়েটকে গ্রেফতার করে সিবিআই ৷ সেই ঘটনা ঘিরে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে সরব হয় বিজেপি ৷ একইসঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়েও চলছে লাগাতার প্রচার ও প্রতিবাদ ৷ রুজু হয়েছে মামলা ৷ আর এই বিষয়টিকে হাতিয়ার করেই রাজ্য়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি, এমনকী আলাদা রাজ্য গঠনেরও জিগির তুলছেন বিজেপি নেতাদের একাংশ ৷

আরও পড়ুন : Post Poll Violence : রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি নিয়ে কেন্দ্রের মত জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট

ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, পুরোটাই আসলে গেরুয়া বাহিনীর কৌশল ৷ রাষ্ট্রপতি শাসন জারি বা আলাদা রাজ্য গঠন অত সোজা নয় ৷ কিন্তু এই ইস্য়ুগুলিকে জিইয়ে রাখলে মমতাকে রাজ্য়ের পরিস্থিতি নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হবে ৷ প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র যেমন মনে করেন, রাষ্ট্রপতি শাসন জারি বা আলাদা রাজ্য গঠনের মতো হঠকারী পদক্ষেপ বিজেপি করবে না ৷ কারণ, তাতে তাদের লাভের থেকে লোকসানটাই বেশি হবে ৷ নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে আসা একটা সরকারকে ফেলে দেওয়া হলে জনমানসে বিজেপির প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরি ৷ শুভাশিসবাবু মনে করছেন, এর পিছনে অন্য সমীকরণ রয়েছে ৷ আসলে একুশের নির্বাচনে যে পালাবদলের স্বপ্ন বিজেপি দেখেছিল, তা ভাঙতেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলের যোগদানের হিড়িক বেড়েছে ৷ সেই রক্তক্ষরণ রুখতেই তৃণমূলকে চাপে রাখছে গেরুয়া বাহিনী ৷

বিজেপির চাপের রাজনীতির অন্য একটি ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. অমল মুখোপাধ্য়ায় ৷ তাঁর মতে, বিরোধী হিসেবে বিজেপির একক উত্থানই কোনও কোনও ক্ষেত্রে তাদের আরও আক্রমণাত্মক করে তুলেছে ৷ এই মুহূর্তে বিজেপি ছাড়া রাজ্য়ে আর কোনও বিরোধী শক্তির অস্তিত্ব নেই বললেই চলে ৷ তাই তারা যে নিজেদের পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে শাসককে চাপে রাখবে, সেটাই স্বাভাবিক ৷ তাছাড়া, তারা কোনও জোটেও নেই ৷ ফলে শরিকের সঙ্গে মানিয়ে চলার বাধ্যবাধকতাও নেই তাদের ৷ এই কারণেই রাষ্ট্রপতি শাসনের জুজু দেখাতে পারছে তারা ৷

আরও পড়ুন : রাষ্ট্রপতি শাসন ছাড়া রাজ্যে শান্তি আসবে না, মালদায় দাবি দিলীপের

রাজ্য়ে সরকার ফেলে দেওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তীও ৷ তাঁর মতে, একুশের ভোটের ফল বেরোনোর পর থেকেই রাজ্য়ে শক্তি হারাচ্ছে বিজেপি ৷ কিন্তু কেন্দ্রে আবার তাদেরই সরকার রয়েছে ৷ আর সেই যোগাযোগকে কাজে লাগিয়েই রাজ্য সরকারকে চাপে রাখতে চাইছে তারা ৷

একুশের ভোটে বাংলা জয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন মোদি-শাহরা ৷ সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে ৷ উপরন্তু, বাংলায় তাঁর হ্য়াট্রিক মমতাকে জাতীয় স্তরেও বিজেপি বিরোধী প্রধান মুখ হিসাবে সামনের সারিতে তুলে এনেছে ৷ জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্ব বেড়েছে তাঁর ৷ একথা ঠিক যে, শুধুমাত্র মমতার সঙ্গে হাত মিলিয়ে জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী একক শক্তি গড়ে তোলা সহজ নয় ৷ সেক্ষেত্রে জাতীয় দল কংগ্রেসের সহযোগিতা দরকার ৷ কিন্তু, তা সত্ত্বেও যে মমতা বাংলায় বিজেপির বিজয় রথ আটকে দিয়েছেন, তাঁকে বাড়তি কোনও সুযোগ দিতে রাজি নয় গেরুয়া শিবির ৷ মমতা নিজেও আগামী দিনে দিল্লি জয়ের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ৷ কিন্তু তিনি যদি বাংলার নিয়েই ব্য়স্ত থাকেন, তাহলে তাঁর পক্ষেও সেই পরিকল্পনা নিয়ে এগোনো কঠিন ৷ আর সেই কারণেই ভোটে পরাজয়ের পরও মমতাকে নিস্তার দিতে নারাজ গেরুয়া শিবির ৷ তবে তাতে রাজ্য়ে সরকার বদলের কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই মত রাজনৈতিক মহলের ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.