কলকাতা, 5 জুলাই : চব্বিশের ভোটে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে (Mamata Banerjee) ঠেকাতেই কি তাঁকে নাস্তানাবুদ করার চেষ্টা করছে বিজেপি ? একের পর এক ইস্য়ুতে তাঁকে ব্য়স্ত রাখছে গেরুয়া শিবির ? যাতে রাজ্য় সামলে পরবর্তী লোকসভা ভোটের জন্য আর সময় বের করতে না পারেন তৃণমূল নেত্রী ? নন্দীগ্রামে ভোটে হারলেও গোটা রাজ্য়ে 200-রও বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ তৃতীয়বারের জন্য রাজ্য়ের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন তিনি ৷ আর তারপর থেকেই একের পর এক ইস্যুতে কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাত বেড়েছে রাজ্য়ের ৷
ইদানীংকালে সবথেকে যে বিষয়গুলি নিয়ে বেশি চর্চা হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম নারদ-কাণ্ড ৷ রাজ্য়ে লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যেই সম্প্রতি চার হেভিওয়েটকে গ্রেফতার করে সিবিআই ৷ সেই ঘটনা ঘিরে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে সরব হয় বিজেপি ৷ একইসঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়েও চলছে লাগাতার প্রচার ও প্রতিবাদ ৷ রুজু হয়েছে মামলা ৷ আর এই বিষয়টিকে হাতিয়ার করেই রাজ্য়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি, এমনকী আলাদা রাজ্য গঠনেরও জিগির তুলছেন বিজেপি নেতাদের একাংশ ৷
আরও পড়ুন : Post Poll Violence : রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি নিয়ে কেন্দ্রের মত জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট
ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, পুরোটাই আসলে গেরুয়া বাহিনীর কৌশল ৷ রাষ্ট্রপতি শাসন জারি বা আলাদা রাজ্য গঠন অত সোজা নয় ৷ কিন্তু এই ইস্য়ুগুলিকে জিইয়ে রাখলে মমতাকে রাজ্য়ের পরিস্থিতি নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হবে ৷ প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র যেমন মনে করেন, রাষ্ট্রপতি শাসন জারি বা আলাদা রাজ্য গঠনের মতো হঠকারী পদক্ষেপ বিজেপি করবে না ৷ কারণ, তাতে তাদের লাভের থেকে লোকসানটাই বেশি হবে ৷ নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে আসা একটা সরকারকে ফেলে দেওয়া হলে জনমানসে বিজেপির প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরি ৷ শুভাশিসবাবু মনে করছেন, এর পিছনে অন্য সমীকরণ রয়েছে ৷ আসলে একুশের নির্বাচনে যে পালাবদলের স্বপ্ন বিজেপি দেখেছিল, তা ভাঙতেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলের যোগদানের হিড়িক বেড়েছে ৷ সেই রক্তক্ষরণ রুখতেই তৃণমূলকে চাপে রাখছে গেরুয়া বাহিনী ৷
বিজেপির চাপের রাজনীতির অন্য একটি ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. অমল মুখোপাধ্য়ায় ৷ তাঁর মতে, বিরোধী হিসেবে বিজেপির একক উত্থানই কোনও কোনও ক্ষেত্রে তাদের আরও আক্রমণাত্মক করে তুলেছে ৷ এই মুহূর্তে বিজেপি ছাড়া রাজ্য়ে আর কোনও বিরোধী শক্তির অস্তিত্ব নেই বললেই চলে ৷ তাই তারা যে নিজেদের পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে শাসককে চাপে রাখবে, সেটাই স্বাভাবিক ৷ তাছাড়া, তারা কোনও জোটেও নেই ৷ ফলে শরিকের সঙ্গে মানিয়ে চলার বাধ্যবাধকতাও নেই তাদের ৷ এই কারণেই রাষ্ট্রপতি শাসনের জুজু দেখাতে পারছে তারা ৷
আরও পড়ুন : রাষ্ট্রপতি শাসন ছাড়া রাজ্যে শান্তি আসবে না, মালদায় দাবি দিলীপের
রাজ্য়ে সরকার ফেলে দেওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তীও ৷ তাঁর মতে, একুশের ভোটের ফল বেরোনোর পর থেকেই রাজ্য়ে শক্তি হারাচ্ছে বিজেপি ৷ কিন্তু কেন্দ্রে আবার তাদেরই সরকার রয়েছে ৷ আর সেই যোগাযোগকে কাজে লাগিয়েই রাজ্য সরকারকে চাপে রাখতে চাইছে তারা ৷
একুশের ভোটে বাংলা জয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন মোদি-শাহরা ৷ সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে ৷ উপরন্তু, বাংলায় তাঁর হ্য়াট্রিক মমতাকে জাতীয় স্তরেও বিজেপি বিরোধী প্রধান মুখ হিসাবে সামনের সারিতে তুলে এনেছে ৷ জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্ব বেড়েছে তাঁর ৷ একথা ঠিক যে, শুধুমাত্র মমতার সঙ্গে হাত মিলিয়ে জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী একক শক্তি গড়ে তোলা সহজ নয় ৷ সেক্ষেত্রে জাতীয় দল কংগ্রেসের সহযোগিতা দরকার ৷ কিন্তু, তা সত্ত্বেও যে মমতা বাংলায় বিজেপির বিজয় রথ আটকে দিয়েছেন, তাঁকে বাড়তি কোনও সুযোগ দিতে রাজি নয় গেরুয়া শিবির ৷ মমতা নিজেও আগামী দিনে দিল্লি জয়ের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ৷ কিন্তু তিনি যদি বাংলার নিয়েই ব্য়স্ত থাকেন, তাহলে তাঁর পক্ষেও সেই পরিকল্পনা নিয়ে এগোনো কঠিন ৷ আর সেই কারণেই ভোটে পরাজয়ের পরও মমতাকে নিস্তার দিতে নারাজ গেরুয়া শিবির ৷ তবে তাতে রাজ্য়ে সরকার বদলের কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই মত রাজনৈতিক মহলের ৷