কলকাতা 16 জুলাই: আমাকে আর "মাই লর্ড" বলার দরকার নেই। শুধুমাত্র "স্যার " বললেই যথেষ্ট । রাজ্যের সমস্ত নিম্ন আদালতের কর্মী অফিসার থেকে শুরু করে হাইকোর্টের কর্মী অফিসারদের মাই লর্ড না বলে স্যার বলার নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিবি এন রাধাকৃষ্ণণ।
গতকাল কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনেরালের এক ই-মেইল বার্তা থেকে জানা যাচ্ছে, রাজ্যের সমস্ত নিম্ন আদালতের বিচারক ও আদালতের কর্মচারীদের মাই লর্ড বলার পরিবর্তে স্যার বলার নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং প্রধান বিচারপতি । হাইকোর্টের কর্মী অফিসারদের জন্যও এই নির্দেশ প্রযোজ্য। তবে আইনজীবীদের জন্য এরকম কোনও নির্দেশ মেইলে ছিল না। এ ব্যাপারে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী আশিস কুমার চৌধুরি জানালেন, " মাই লর্ড শব্দটা একটা ফরাসি শব্দ millourt থেকে এসেছে, 1430 খ্রিষ্টাব্দে। ফরাসি সমাজে যার যারা খুব ধনবান ব্যক্তি ছিলেন তাঁদের জন্য এই শব্দ প্রযোজ্য ছিল। 1598 খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ডে এটা চালু হয় । সেখানে এটাকে সংশোধন করে milord বলা হত। যারা মূলত ইংল্যান্ডের রাজা-রানি ছিলেন তাঁদের জন্য এই শব্দের ব্যবহার করা হত। এরপর 1610 সালে এটা হয়ে গেল মাই লর্ড। যখন বিচারের জন্য কোনও সভা বসত তখন এইভাবে সম্বোধন করা হত । 1774 সালে সেই সময় ব্রিটিশ সরকার কলকাতায় সুপ্রিম কোর্ট তৈরি করে । এবং সেখানে বিচারপতিদের এই ভাবেই সম্বোধন করা হত ।"
মাই লর্ড ব্যবহার বন্ধ নিয়ে তিনি বলেন, "2014 সালে সুপ্রিম কোর্টে এর বিরুদ্ধে একটা জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন আইনজীবী শিবসাগর তিওয়ারি। সেই মামলায় তৎকালীন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এইচ এল দাত্তু নির্দেশ দেন, মাই লর্ড বলাটা আর বাধ্যতামূলক নয়। মাই লর্ড , মি লর্ড, স্যার যে যেটা খুশি বলতে পারেন। 2019 সালে রাজস্থান হাইকোর্টের ফুল বেঞ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তারা আর মাই লর্ড ব্যবহার করবে না। ব্রিটিশ আইনের অনেক কিছুই এখনও আমাদের আইনের মধ্যে রয়ে গিয়েছে। তার সঙ্গে সঙ্গে আমরা মাই লর্ড বলায় অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের 2014 সালের নির্দেশ মেনে চলা মানে ভারতীয় সংবিধানের প্রতিই শ্রদ্ধা জানানো।" আরও এক আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, " প্রধান বিচারপতির এই পদক্ষেপ অত্যন্ত ইতিবাচক। ব্রিটিশ লেগাসি থেকে বেরিয়ে এসে আমরাও চাই এক নতুন ভারত গড়ে উঠুক।"