কলকাতা, 14 এপ্রিল : আরও একবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সরব হলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় (Bengal Governor Jagdeep Dhankhar) । বললেন, রাজ্য গণতন্ত্রের গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছে । বৃহস্পতিবার ছিল আম্বেদকর জয়ন্তী । বিধানসভায় সংবিধানের প্রণেতা বি আর আম্বেদকরের মূর্তিতে মাল্যদান করতে এসে রাজ্যকে একহাত নিয়েছেন রাজ্যপাল ৷ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি থেকে শুরু করে আদালতের অন্দরে বিচারব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ-সহ একগুচ্ছ বিষয় নিয়ে সরব হয়েছেন তিনি (Dhankhar Slams Mamata Government over Bengal Law and Order Situation) । অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে দাঁড় করিয়ে আরও একবার সরকারের সমালোচনায় সরব হলেন ধনকড় ।
আজ, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে 11টা নাগাদ বিধানসভায় বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকরের জন্মজয়ন্তী (BR Ambedkar Birth Anniversary) উপলক্ষ্যে রাজ্যপাল শ্রদ্ধা জানাতে যান । সেখানে দেখা করেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের (WBLA Speaker Biman Banerjee) সঙ্গে । সেখানেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আরও একবার তোপ দাগলেন তিনি ।
রাজ্যপাল বলেন, ‘‘বি আর আম্বেদকরের নীতি মেনে আমাদের চলা উচিত । আজ আম্বেদকরের জন্মদিন । গণতন্ত্র বজায় রাখুন । আমরা সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ । কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা আমাদের অবাক করেছে । তদন্ত সঠিক পথে হওয়া উচিত । আমার সঙ্গে গতকাল মুখ্যসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজির বৈঠক হয়েছে । রাজ্যের শাসনব্যবস্থা যেন সংবিধানের মধ্যে থাকে সেটা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে ।’’
রাজ্যপাল যখন এই ধরনের কথা বলছেন, তখন তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় । তাঁকে পাশে নিয়েই রাজ্যের নারী নির্যাতন প্রসঙ্গে অভিযোগ তোলেন রাজ্যপাল । ধনকড় বলেন, ‘‘রাজ্যের মানুষ ভয় নিয়ে বেঁচে রয়েছেন । বাংলা এখন গণতন্ত্রের জন্য গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছে । রাজ্যটা দুর্নীতির আখড়া হয়ে গিয়েছে ।’’
এদিন রাজ্যপাল জাগদীপ ধনকড় প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘রামপুরহাট কাণ্ডে পীড়িত পরিবারের লোকেরা সরকারি চাকরি পেলে, ভোট পরবর্তী অশান্তিতে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের কেন চাকরি দেওয়া হবে না ? শাসকের এক দৃষ্টিতে সকলকে দেখা উচিত ।’’
কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস বয়কট নিয়ে গত দু’দিন ধরে ব্যাপক গোলমাল হয়েছে আইনজীবীদের মধ্যে ৷ এই নিয়ে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘গতকাল হাইকোর্টের ঘটনা অনভিপ্রেত, চিন্তার বিষয় । বিচার ব্যবস্থার জায়গাকেই যদি এ ভাবে আটকানো হয়, তাহলে গণতন্ত্রের জায়গা কোথায় ? বিচারের মন্দিরকে কলঙ্কিত করতে চাইলে, তা বরদাস্ত করা উচিত নয় ।’’ একই সঙ্গে রাজ্যে মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনা এবং বিভিন্ন দুর্নীতি নিয়েও সরকারকে তোপ দাগেন রাজ্যপাল ।
রাজ্যপালের এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে পালটা তোপ দেগেছেন রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় । এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেকের নিজস্ব গণ্ডি রয়েছে । সেই গণ্ডি অনুযায়ীই কাজ করা উচিত । রাজ্যপাল অনেক কথা বললেন । যা ঠিক না । আমরা সংবিধান মেনেই কাজ করি ।’’
রাজ্যপালের কাজ অবশ্যই সরকারকে পরামর্শ দেওয়া । কিন্তু সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ নয় । রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে এ দিন এভাবেই প্রতিক্রিয়া দিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম । তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যপালের কিছু জিজ্ঞাসা থাকলে ডিজি এবং মুখ্যসচিব তাঁকে গিয়ে অবগত করেন । কিন্তু রাজ্যের মানুষ যে সরকারকে নির্বাচিত করেছে, কিন্তু সরকারের প্রধান হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্য চালানোর দায়িত্ব দিয়েছে । অতএব রাজ্যপালকে সরকারের কাজকর্মের হস্তক্ষেপের অধিকার ভীমরাও আম্বেদকরের সংবিধান দেয়নি । এটা ওঁর মনে রাখা উচিত ।’’
আরও পড়ুন : Dhankhar on Bengal Law and Order : সাংবিধানিক কর্তব্য পালন অবশ্যিক, ঐচ্ছিক নয়: রাজ্যপাল